বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকা (গেন্ডারিয়া ১শ কাঠা ) এলাকার- আদর্শ একাডেমির দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী 'শাহরিয়ার খান আনাস' (১৬)। ৫ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এরিয়ায় চানখারপুল এলাকায় 'লংমার্চে' যোগ দেয়। স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। তিনটি গুলি আনাস'র (১টি মাথায়, ২টি বুকে) লাগে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তখনই মৃতু্য হয় আনাস'?র।
জানা যায়, ৫ আগস্ট সকালে বাবা-মাকে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠি লিখে আন্দোলনে যোগ দিতে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। মৃতু্যর পর চিঠিটি পায় তার মা। চিঠিতে বাবা-মা'র উদ্দেশ্যে আনাস বলেন -
মা, আমি মিছিলে যাচ্ছি। আমি নিজেকে আর আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। সরি আব্বুজান (বাবা)। তোমার কথা অমান্য কোরে (করে) বের হোলাম (হলাম)। স্বার্থপরের মতো ঘরে বোসে (বসে) থাকতে পারলাম না। আমাদের ভাইরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথে নেমে সংগ্রাম কোরে (করে)? যাচ্ছে। অকাতরে নিজেদের জীবন বিষর্জন (বিসর্জন) দিচ্ছে। একটি প্রতিবন্ধী কিশোর, সাত বছরের বাচ্চা, ল্যাংরা মানুষ যদি সংগ্রামে নামতে পারে, তাহলে আমি কেনো বোসে (বসে) থাকবো ঘড়ে (ঘরে)। এক দিন তো মরতে হবেই। তাই মৃতু্যর ভয় কোরে (করে ) স্বার্থপরের মতো ঘরে বোসে (বসে) না থেকে 'সংগ্রামে নেমে গুলি খেয়ে বীরের মতো মৃতু্যও অধিক শ্রেষ্ঠ।' যে অন্যের জন্য নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেয়, সেই প্রকৃত মানুষ। আমি যদি বেঁচে না ফিরি, তবে কষ্ট না পেয়ে গর্বিত হয়ো। জীবনের প্রতিটি ভুলের জন্য ক্ষমা চাই।
দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত করতে জীবন দিয়ে গেছেন শহীদ আনাস ও তার মতো সাহসী বাংলার দামাল ছেলেরা। বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে বিজয়ের অংশীদার হওয়ার আগেই বেলা ১১ দিকে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে দেশের জন্য জীবন দিয়ে শহীদ হয়ে যান ১৬ বছরের কিশোর আনাস।
আনাসদের মতো সাহসী, দেশপ্রেমিক ও আত্মত্যাগ করা শহীদদের জীবনের বিনিময় পতন হয়েছে স্বৈরাচারের, দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন হয়েছে দেশ। তিনি হয়ত কেবল একজন কিশোর ছিলেন, কিন্তু তার হৃদয়ে বহন করছিল, সেই বিপস্নব, যা তার দেশের প্রয়োজন ছিল, তিনি এই বাংলাদেশের সাহসীকতার এক গর্বিত উদাহরণ।
আনাসের আত্মত্যাগ শুধু স্বাধীনতার মূল্যকেই স্মরণ করিয়ে দেয় না, বরং সেই সাহসের কথাও বলে- যা সব বাধার মধ্যেও মানুষকে অধিকার আদায়ের জন্য দাঁড় করায়। তার সাহস প্রমাণ করে দেয়, একটি প্রজন্মের দৃঢ়তা, যারা কখনোই বল-প্রয়োগে চুপ করে থাকেনি। আনাস হয়তো, নিজেদের বিজয় দেখে যেতে পারেননি, কিন্তু তার মতো হাজারও শহীদ ও আহতদের কারণে আজ একটি স্বৈরাচারমুক্ত বৈষম্যহীন ও স্বাধীন দেশ অর্জিত হয়েছে।