জারুল ফুলের বেগুনি রঙে সেজেছে পাবিপ্রবি
প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যুবায়ের আহমেদ
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মনোমুগ্ধকর, সবুজ এবং প্রাণবন্ত উদ্ভিদের মধ্যে অতুলনীয় সৌন্দর্য এবং তাৎপর্যপূর্ণ একটি ফুল- জারুল ফুল। অসাধারণ লোভনীয় এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্যের জন্য সম্মানিত, জারুল ফুল তার সূক্ষ্ণ চেহারা এবং রহস্যময় কবজ দিয়ে হৃদয় মোহিত করে।
'সবচেয়ে সুন্দর করুণ
সেখানে সবুজ রাঙা ভ'রে মধুকূপী ঘাসে অবিরল
সেখানে গাছের নাম : কাঁঠাল, অশ্বথ, বট, জারুল, হিজল
সেখানে ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জাগিছে অরুণ।'
চরণগুলো তিরিশোত্তর বাংলা কাব্যের শক্তিমান কবি, বাংলা সাহিত্যের পঞ্চপান্ডবদের অন্যতম প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশের 'রূপসী বাংলা' কাব্যের 'এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে' কবিতার। তিনি গ্রামবাংলার প্রকৃতি নিপুণ হাতে শিল্পীর তুলিতে এঁকেছেন একান্ত মনে। তার কবিতায় বাদ যায়নি গ্রীষ্মের খরতাপের একটু প্রশান্তি বেগুনি আভার জারুল ফুলও।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরিবিলি উদ্যানে, যেখানে জারুল ফুলের মিষ্টি গন্ধ, মৃদু হাওয়ায় নাচে তার পাপড়ি, স্বচ্ছন্দে দুলছে প্রকৃতির সুর। বেগুনি, গোলাপি এবং সাদা রঙের সঙ্গে, এটি ক্যাম্পাসকে নিখুঁত আনন্দে আঁকছে, সৌন্দর্যের করুণার সুগন্ধি, এই নির্মল এবং পবিত্র স্থানে।
ছাত্ররা যখন এর ছাউনির নিচে হেঁটে বেড়ায়, তাদের হৃদয় উচ্ছ্বাসে জ্বলে ওঠে, তারা এর প্রস্ফুটনের মধ্যে একটি প্রশান্ত বিশ্রাম খুঁজে পায়, কোলাহলের মাঝে, একটি আশীর্বাদপূর্ণ মুহূর্ত।
এই ফুল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে তার সূক্ষ্ণ পুষ্পের সঙ্গে মুগ্ধ করছে, যা ছাত্র, শিক্ষক এবং দর্শকদের কাছ থেকে একইভাবে প্রশংসনীয়। গোলাপি, বেগুনি বা সাদা ফুলের গুচ্ছের সঙ্গে, জারুল ফুল বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছোঁয়া যোগ করেছে, মনোরম পরিবেশ তৈরি করে, যা বিস্ময়।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকের পাশে, স্বাধীনতা চত্বরে ও ক্যাফেটেরিয়ার পেছনে অবস্থিত জারুল ফুলের গাছগুলো একেকটি বোটানিক্যাল ভান্ডার, যা সবার ইন্দ্রিয়কে মোহিত করে এবং কল্পনাকে প্রজ্বলিত করে। এই মোহনীয় ফুল, তার স্পন্দনশীল বর্ণ এবং সূক্ষ্ণ পাপড়ির জন্য সবার কাছে সমাদৃত, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে জাঁকজমক এবং সৌন্দর্য দিয়ে সাজিয়েছে।
জারুলকে বলা হয় বাংলার চেরি বস্নসম। কী অপূর্ব হয়ে ফুটে। চোখ ভরে যায় তার রূপে। ক্যাম্পাসে যখন ফুটতে থাকে, তখন তার দিক থেকে চোখ ফেরানো দায়। বেগুনি রঙের আগুন কি হয়? হওয়া উচিত। জারুল যেন বেগুনি আগুন। আমাদের কেন জারুল উৎসব হয় না, চেরি বস্নসমের উৎসবের মতো!
এর নান্দনিক আবেদনের বাইরে জারুল ফুল বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সাংস্কৃতিক তাৎপর্য ধরে রাখে। বাংলাদেশি সংস্কৃতিতে ফুল বিশুদ্ধতা, সৌন্দর্য এবং নবায়নের প্রতীক। ক্যাম্পাসে জারুল ফুলের উপস্থিতি শুধু দৃষ্টি আকর্ষণই বাড়ায় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার মধ্যে সাংস্কৃতিক পরিচয় ও গৌরবের অনুভূতি জাগায়। এই ফুলগুলো বাংলাদেশের সমৃদ্ধ বোটানিক্যাল ঐতিহ্য এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের গুরুত্বের অনুস্মারক হিসেবে কাজ করে।
বৈজ্ঞানিকভাবে লেজারস্ট্রোমিয়া স্পেসিওসা নামে পরিচিত এই ফুলের নাম ১৮ শতকের একজন সুইডিশ বণিক এবং উদ্ভিদ বিশ্লেষক ম্যাগনাস ভন লেজারস্ট্রোমকে এর নামে নামকরণ করা হয়।
এই ফুল গাছ শুধু দেখতেই অপরূপ সৌন্দর্য নয়, বরং এর আছে ঔষধি গুণ। এর বীজ, ছাল ও পাতা ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া জ্বর, অনিদ্রা, কাশি ও অজীর্ণতা মানবকল্যাণে জারুল উপকার সাধন করে।
সকালে ক্যাম্পাসে হাঁটতে বের হয়েছিলেন ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব। তিনি বলেন, বেগুনি রঙের এই জারুল ফুল ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জারুল আমার পছন্দের ফুলগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাইতো প্রতিদিন সকালবেলা ছুটে আসি এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। মজার ব্যাপার হলো রোদের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সামানুপাতিক হারে বাড়তে থাকে জারুল ফুলের সৌন্দর্য। ক্যাম্পাসে হাঁটার সময় এক অন্য রকম অনুভূতি কাজ করে। তাই ক্যাম্পাসে এ রকম ফুলের গাছগুলো আরও বেশি করে লাগানো দরকার।
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী তাজকেরাতুন আম্বিয়া নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, রোদের প্রচন্ড উত্তাপে আর গুমোট গরমে যখন অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে সবার জীবন, তখন খানিকটা প্রশান্তি বয়ে নিয়ে এসেছে ক্যাম্পাসের ফুটে ওঠা অপরূপ সৌন্দর্যের বেগুনি রঙের জারুল ফুল। লেকের পারে কিছুটা অংশ জুড়ে ধরে থরে ফুটে রয়েছে মনোমুগ্ধকর জারুল ফুল। ডালের মাথায় বেগুনি রঙের বড় বড় থোকাযুক্ত ফুলগুলো যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এই রৌদ্রতপ্ত ক্যাম্পাসে লেকের মৃদু বাতাস আর জারুল ফুলের মুগ্ধতা যেন এনে দিয়েছে শীতল শান্তির ছোঁয়া।
তাই ক্লাসের ফাঁকে কিংবা অবসরের সময় বারবার ছুটে যাই ওই বেগুনি সৌন্দর্যের কাছে। লেকের পারে শীতল ছায়ায় বসে খানিকটা সময় কাটাই, কখনো বা জারুলের সৌন্দর্যের সঙ্গে নিজেকে ক্যামেরাবন্দি করি। এই তীব্র রোদে জ্বলে ওঠা ক্যাম্পাসে এ যেন এক টুকরো শান্তির আশ্রয়স্থল।