কৃষির জন্য, কৃষকের জন্য বাকৃবি

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

মুসাদ্দিকুল ইসলাম তানভীর
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় উপমহাদেশের কৃষি শিক্ষা আঁতুড়ঘর। নিত্য নতুন গবেষণা আর আবিষ্কারে দেশের কৃষি ও কৃষকের মানোন্নয়নে সদা নিবেদিত বাকৃবির শিক্ষক, গবেষক, শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশের কৃষির অগ্রযাত্রায় বাকৃবির অবদান অনস্বীকার্য। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের আকস্মিক বন্যাপরবর্তী কৃষি ও কৃষকের ক্ষতি পোষাতেও এগিয়ে এসেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। বন্যাকবলিত কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে বিনামূল্যে নাবি আমন ধানের চারা বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তারা। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাকৃবিতে পাঁচ একর জমিতে বিনা ধান-১৭-এর বীজ বপন করার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে প্রথম দফায় এক একর জমিতে ২০০ কেজি ও দ্বিতীয় দফায় দেড় একর জমিতে বিনা ধান-১৭-এর ৬০০ কেজি বীজ বপন সম্পন্ন করা হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বীজতলা তৈরিতে লেগে যেতে পারে এক মাসের বেশি সময়। এমনকি বন্যার পানি সরে গেলেও বীজধান তৈরি করতেও সমস্যায় পড়বেন কৃষকরা। এতে হুমকির মুখে পড়তে হবে কৃষকদের, দেশে তৈরি হতে পারে খাদ্য সংকট। এসব দিক মাথায় নিয়েই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিনামূল্যে ধানের চারা বিতরণের জন্য 'অ্যাগ্রি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স বিডি' এগিয়ে আসে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং শিক্ষার্থী, বিভিন্ন এলাকার কৃষি উদ্যোক্তা, বীজ কোম্পানি এবং কর্পোরেট ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে গঠিত সংগঠন 'অ্যাগ্রি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স বিডি'। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে 'কৃষিবিদ ফাউন্ডেশন ফর হিউম্যানিটি'র আর্থিক সহযোগিতায় বন্যার্ত কৃষকদের মধ্যে ধানের চারা ও কৃষি উপকরণ সরবরাহ করছে। এ পর্যন্ত তারা ২ লাখ টাকা আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা নিজ ইচ্ছায় বীজ চারা উৎপাদনের কাজ করছেন। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে কাদা পানিতে নেমে নিজের হাতেই লাগাচ্ছেন বীজ। এরপর করছেন পরিচর্যা। বীজ বপনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাকৃবির একাধিক স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী জানান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ একর জমিতে বিনা ধান-১৭-এর বীজ বপন করা হবে। প্রথম দফায় গত ২৮ জুলাই বাকৃবির কৃষিতত্ত্ব মাঠের এক একর জমিতে ২০০ কেজি বীজ বপন করা হয়। দ্বিতীয় দফায় বিশ্ববিদ্যালয়ের খামার ব্যবস্থাপনা শাখার দেড় একর জমিতে ৬০০ কেজি বীজ বপন করেন তারা। পাশাপাশি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ একর, চট্রগ্রামের হাট হাজারিতে ৪ একর ও লক্ষ্ণীপুরে ২ একরসহ মোট ১২ একর জমিতে নাবি আমন ধানের চারা উৎপাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এসব চারা রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও স্বেচ্ছাশ্রম দেবেন শিক্ষার্থীরাই। এরপর উৎপাদিত চারাগুলো বন্যাকবলিত কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। বীজ বপন কর্মসূচি চলাকালীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাঠে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শহীদুল হক, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ মো. হেলাল উদ্দীন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান সরকার, কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান ও অধ্যাপক আহমদ খায়রুল হাসান, কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন হাওলাদার, খামার ব্যবস্থাপনা শাখার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) মো. জিয়াউর রহমান প্রমুখ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন 'কৃষিবিদ ফাউন্ডেশন ফর হিউম্যানিটি'র সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবং মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, নেত্রকোনা শাখার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান বলেন, চারা উৎপাদন থেকে শুরু করে সব ধাপেই একটি পরামর্শ প্রদানকারী দল কাজ করবে। ধানের ক্ষেত্রে বড় একটি সমস্যা হলো চিটা হয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে যদি জমিতে বোরন যুক্ত সার প্রয়োগ করা যায় তাহলে চিটা হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে। অন্তত ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ উৎপাদন থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে। উপস্থিত শিক্ষকরা বলেন, এই ১২ একর জমিতে উৎপাদিত চারা দিয়ে ৭৬০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করা যাবে, যা প্রায় সহস্রাধিক কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা সম্ভব হবে। অ্যাগ্রি স্টুডেন্টস অ্যালায়েন্স'র অন্যতম উদ্যোক্তা মুখলেছুর রহমান বলেন, 'আমরা হিসাব করেছি। পুরো কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে ২২ লাখ টাকা প্রয়োজন। ৩-৪ লাখ টাকা আমরা এর মধ্যে পেয়েও গেছি। বাকি টাকাও স্পন্সর, অ্যালামনাই ও কৃষি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি।