১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পরে প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হলো কুষ্টিয়া জেলায় নির্মিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। এ দেশে ইসলামিক বিদ্যাপীঠ নির্মাণের পরিকল্পনা খুবই পুরনো পরিকল্পনা ছিল। তাই দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোও পুরনো। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির খালেদা জিয়া হল একটু বেশিই পুরনো। খালেদা জিয়া হলের পুরনো বস্নকটি অনেক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই হলে সিটের সংখ্যা ৪৮০ অথচ হলে ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৭০০। তাছাড়া হলের পরিবেশ খুবই বাজে অবস্থা। তার মধ্যে আবার শর্ট সার্কিটের আতঙ্ক। এই হলের ছাত্রীরা শর্ট সার্কিটের সমস্যায় বহুদিন ধরে ভুগছে। বিশেষ করে এই হলের পুরাতন বস্নকের ছাত্রীরা প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছে আতঙ্কে। যখন-তখন সুইচ বোর্ডে আগুন জ্বলে যায়, মেইন বোর্ডে শব্দ হয়। প্রায় সময় ইলেকট্রিক শক খায়। তারপর ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার এসে অস্থায়ী সমাধান দিয়ে যায়। তবে কি কেটে যায় মেয়েদের আতঙ্ক? পুরাতন বস্নক অনেক আগে নির্মিত হওয়ায় এখানে নেই কোনো অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। শর্ট সার্কিটের মতো একটি দুর্ঘটনা ঘটে অথচ সমাধানের জন্য আমাদের ১-২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। সেই সময়টুকু একটি মেয়ে কতটা আতঙ্ক ও ঝুঁকি নিয়ে থাকে! একটি মেয়ে কত স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় আর পরিবারের কত স্বপ্ন থাকে। অথচ এই হলের ছাত্রীরা নিজেদের জীবনেরই ভরসা পায় না, স্বপ্ন পূরণে সময় দেবে কিভাবে? এই হলের ছাত্রীরা ভয়ে ও আতঙ্কে এক রুম থেকে অন্য রুমে ছোটাছুটি করে। এইতো কিছুদিন আগে ৭ জুলাই, ২০২৪-এর ঘটনা যখন পেনশন ও কোটা আন্দোলন ছিল তখন ক্লাস পরীক্ষা অফ, সবাই রুমে অবস্থান করেছিল। কেউ কেউ আবার বাসায় ছিল। অর্ধেক ছাত্রীরা হলের রুমে ঘুমন্ত অবস্থায় হঠাৎ করেই সুইচ বোর্ডে শব্দ হতে লাগল। ১০২নং রুমে অনেক জোরে জোরে শব্দ হওয়ায় সবাই কোনো রকম সুইচ অফ করে বাইরে অবস্থান নেয়। তারপর আস্তে আস্তে পুরো বস্নকের সুইচ বোর্ডে। হালকা হালকা আগুন জ্বলতে শুরু করে এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়ার মতো কোনো ব্যবস্থা ছিল না। যেহেতু কোনো অগ্নিনির্বাপক বাহিনী নেই বা যন্ত্রও নেই। একপর্যায়ে হল প্রভোস্ট হাউজ টিউটর ও হলে দায়িত্বরত সবাইকে জানানো হলে একজন স্যার এসে দেখে যায় এবং ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি দিয়ে কোনোরকম ঠিক করে দেওয়া হয়। আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যাওয়ার পর ও সকাল ভোরে ঘুমের মধ্যে ট্রান্সমিটার পুড়ে পাশে রাখা সবগুলো বালতি পুড়ে গেছে। তারও কিছুক্ষণ পর নিচতলার ওয়াশরুমের দেয়াল ভেঙে পড়ে গেল। আশপাশে কেউ থাকলে নির্ঘাত মৃতু্য হতো। আবার কিছুক্ষণ পরে ৪ তলায় সব লাইট-ফ্যান একা একা অফ হয়ে যায়। পরে ইলেকট্রনিক লাইন পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়ে যায়। পুরো বস্নকের মেয়েরা বের হয়ে যায় এবং হল কর্তৃপক্ষের কাছে নিরাপত্তার ব্যবস্থা চাই। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে আর কোনো সমস্যা নেই এবার সবাই বস্নকে যেতে পারবে। যাওয়ার পর এখনো যখন-তখন পোড়ার গন্ধ পাওয়া যায় এবং জোরে জোরে শব্দ হয়। এই মেয়েগুলোর নিরাপত্তা কোথায়? প্রায় ৭০০ মেয়ের জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে। এখন পর্যন্ত কারও কোনো ক্ষতি হয়নি কিন্তু এমন ঝুঁকির মধ্যে কতক্ষণ নিরাপদে থাকতে পারবে? তার মধ্যে আবার হল প্রভোস্টের পদত্যাগ। কোনো স্টুডেন্ট তার পদত্যাগ চায়নি অথচ এতগুলো মেয়ের জীবন বিপন্ন রেখে এখন প্রশাসন উধাও। ৩ আগস্ট থেকে আবার একই সমস্যা, ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি এসে বলে কোথাও সমস্যা নেই।? আমরা আবার রুমে অবস্থান করি ৪ আগস্ট রাত ১১টার সময় পুড়ে যাওয়া গন্ধ পেয়ে বের হয়ে দেখি অবস্থা ভয়াবহ। একই ঘটনায় ভয়ে ও আতঙ্কে ৪ জন ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে যায়। আবারও ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি বলে কোথাও সমস্যা খুঁজে পাননি। সেদিন রাত ২টা পর্যন্ত মেয়েরা বাইরে অবস্থান করছে। অসুস্থ হওয়া মেয়েরা যে রুমে গিয়ে বিশ্রাম নেবে তারও? ব্যবস্থা নেই। এই আতঙ্কে আর কতদিন কাটাতে হবে জানি না।? সবকিছুই তো পরিবর্তন হচ্ছে খালেদা জিয়া হলের দুর্নীতি কেন দূর হচ্ছে না? এই হলের মেয়েদের নিরাপত্তা কোথায়? খুব দ্রম্নত এর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জোর দাবি জানাচ্ছি। প্রসাশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি এই হলের ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। একটি হলের শিক্ষার্থীদের সমস্যা মানেই তো পুরা ক্যাম্পাসের সমস্যা। আমাদের মেয়েদের অন্যান্য হলসহ ক্যাম্পাসের সবাই এগিয়ে আসুন খালেদা জিয়া হলের মেয়েদের পাশে। খালেদা জিয়া হলের ছাত্রীরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাটাচ্ছে প্রতিটি মুহূর্ত। প্রশাসনকে দ্রম্নত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করছি। ভালো থাকুক খালেদা জিয়া হল, ভালো থাকুক ইবি। ভালো থাকুক বাংলাদেশ।