চব্বিশের বন্যা দেখাল শিক্ষার্থীদের মানবিক ঐক্য
প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শাহিনুর আলম শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
কী অদ্ভুত দৃশ্য দেখছে সারাদেশের মানুষ। এইতো মাস হতে চলল হাজারো রক্তের বিনিময়ে ছাত্র-জনতা তাদের জয় ফিরিয়ে আনল। তারপরেই দেখা মিলল দেশ সংস্কারকাজে রোদে-পুড়ে ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দেশের হাল ধরতে। তারপর কি তারা থেমে ছিল? এইতো আশপাশে তাকালে তাদের দেখা মিলছে বাড়িতে বাড়িতে ছুটছে টাকা সংগ্রহে, দোকানপাটে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে, এ গাড়ি থেকে ঐ গাড়িতে। বন্যার এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নেই ছাত্র-জনতা থেমে, ছুটছে এপ্রান্তে থেকে ওপ্রান্তে।
'সময় থাকবে না থেমে, জমে থাকবে না পানি
চলো সবাই জাত-ধর্ম ভেঙে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামি।'
দেশের মানুষের পাশে এভাবেই এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, তার চিত্রই তুলে ধরেছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইভা আক্তার।
ফেনীর বন্যা শুরু হলে ২২ তারিখেই রাত ৩টায় অন্যান্য হলের পাশাপাশি আমরা এসএম হল থেকে ইওডঞঅ ভবনে গিয়ে আন্দোলন করে নাহিদ ভাইয়ের উপস্থিতিতে সব নৌযান সচল করার ব্যবস্থা করি। হলের সামনে বুথ বসিয়ে, পলাশী, আজিমপুর, নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন সিগনালে থেকে টিম আকারে সর্বমোট ৫,২৫,১০২ টাকা সংগ্রহ করি। পুরো অর্থ দিয়ে ৩টা টিম আমরা দফায় দফায় ফেনী, কুমিলস্না ও লক্ষ্ণীপুরে ত্রাণ পাঠিয়েছি। তাছাড়া যথাসম্ভব আমাদের হলের শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। আমরা বন্যাকবলিত এলাকায় লোকাল মানুষের সাহায্যে নৌকা নিয়ে, কখনো কখনো ১০/১৫ কিলো পায়ে হেঁটে হাতে হাতে শুকনো ও ভারী খাবার পৌঁছে দিয়েছি। সবচেয়ে বাজে যেই অভিজ্ঞতা সেটা হলো যে কোনো এরিয়ায় আমরা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আমাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে তাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য।
মাইনুল ইসলাম নওশাদ
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বন্যার্তদের সাহায্যে বুটেক্স টিম শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। এরই মাঝে প্রথম পর্বে ফেনী ও দাগনভূঞায় প্রায় ১০০ পরিবারের ত্রাণসামগ্রী দিয়ে ফেরার পথে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয় আমাদের ত্রাণের ট্রাক। দুর্ঘটনায় নিশ্চিত মৃতু্যর হাত থেকে বেঁচে যাই আমি, তবে পাশে বসা বন্ধু লাবিব এখনো মৃতু্যর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এত কিছুর পরও দমে যায়নি বুটেক্স টিম। অনেকে অসুস্থ থাকলেও পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসে গণত্রাণ কর্মসূচি চলতে থাকে এবং গত ৩০ আগস্ট বুটেক্সের দু'টি টিম ৫ সদস্যের প্রায় ২৫০টি পরিবারের জন্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে নোয়াখালী ও লক্ষ্ণীপুর যায়। সামনে বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনের ক্ষেত্রেও আমাদের কার্যক্রম চলমান থাকবে ইনশাআলস্নাহ।
সাজ্জাদ আল মামুন
শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়।
২০ আগস্টের পর বৃহত্তর নোয়াখালীতে অতিবৃষ্টি এবং ভারত থেকে আসা বন্যার পানির কারণে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা দ্রম্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকার মানুষদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসে। নোবিপ্রবি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ৩০০ মানুষকে নিয়মিত খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। স্থানীয় নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে জেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ত্রাণ পৌঁছিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বন্যার্তদের পাশে এসে দাঁড়ান। তাদের প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বন্যার্তদের সহায়তায় ত্রাণের অনুদান করে।'
মে. ফাহাদ হোসেন
শিক্ষার্থী, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে হঠাৎ বন্যা দেখা দেয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় কয়েক লাখ মানুষ। দেশের এতসংখ্যক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় গণবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেই লক্ষ্যে অর্থ সংগ্রহ শুরু করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সহায়তা করেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে বিভিন্ন দোকান, পথচারী, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ, বাসে যাতায়াতকারী মানুষ সাধ্যতম ডোনেশন করেন। অর্থ সংগ্রহের পর বন্যার্তদের জন্য বিভিন্ন ধরনের শুকনা খাবার, শিশুদের জন্য খাবার, মেডিসিন, ন্যাপকিনসহ ইত্যাদি জিনিস নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। আমরা সেখানকার স্থানীয় মানুষদের সহায়তায় সারাদিন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণসামগ্রী, বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও কাপড় বিতরণ করা হয়। প্রাণীদের সেবায় ভেটেরিনারি ক্যাম্পেইন ও খাদ্য বিতরণেও সহায়তা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারিয়ানরা।
শফিকুল ইসলাম শিপন
শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।
আমরা বন্যার্তদের জন্য অর্থ সংগ্রহ শুরু করি গত মাসের ২২ তারিখ থেকে। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২-৩টা বিভাগ মিলে কাজ শুরু করলেও পরপরই প্রায় সব বিভাগ ও সংগঠনগুলো আমাদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যায়। তখন আমরা গণত্রাণ কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী অর্থ সংগ্রহ করি। এরপর প্রায় ১৭টা টিম (১৬০+মেম্বার) শহরের বিভিন্ন জায়গায় অর্থ সংগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে জামা-কাপড়ও সংগ্রহ করে। আমরা ৭,৭৯,০৬৭ টাকা এবং খাবার সংগ্রহ করে বন্যার্তদের জন্য পাঠাই।
শাহিনুর আলম
শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।