রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রে কেমন শিক্ষাব্যবস্থা চায় শিক্ষার্থীরা?

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড, আর সেই মেরুদন্ড তৈরির কারিগর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর সেই প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় একজন শিক্ষার্থীকে সুশিক্ষিত করে তোলে। সম্প্রতি গণ-অভু্যত্থানের মধ্য দিয়ে এক নতুন সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সব অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার তারা। তাদের সেই সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রের কেমন শিক্ষাব্যবস্থা দেখতে চান তারা, সে বিষয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু হুরায়রা
  ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রে কেমন শিক্ষাব্যবস্থা চায় শিক্ষার্থীরা?

ব্যবহারিক ও জীবনমুখী বিষয়ক শিক্ষা বাস্তবায়ন

মো. নাহিদ হাসান

৪র্থ বর্ষ, মেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ

গণ বিশ্ববিদ্যালয়।

একটি ভালো শিক্ষাব্যবস্থা ভালো পেশাজীবী তৈরির পাশাপাশি সুনাগরিক তৈরি করে। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকদের যোগ্যতা বৃদ্ধি করা অপরিহার্য। তাই শিক্ষার্থী হিসেবে এমন একটা শিক্ষাব্যবস্থা চাই, যেখানে থাকবে আধুনিকায়ন। শিক্ষকের থেকে সমসাময়িক বিষয়ে জ্ঞান লাভের পাশাপাশি যেখানে থাকবে শিক্ষককে প্রশ্ন করার অবারিত সুযোগ। যে শিক্ষা পদ্ধতিতে গুরুত্বসহকারে ব্যবহারিক ও জীবনমুখী বিষয় শেখানো হবে। যেমন : ট্যাক্স হিসাব করা, সাঁতার কাটা, ড্রাইভিং, কারিগরি শিক্ষা, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ইত্যাদি। শিক্ষাপদ্ধতিতে অবশ্যই মূল্যায়ন থাকবে কিন্তু অভিভাবকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা থাকবে না। শিক্ষাব্যবস্থায় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করে প্রত্যেকের জন্য শিক্ষার সুযোগ সমানভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব। এজন্য শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী করে তুলতে হবে এবং শিক্ষার ব্যয় কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা

মাহবুবা ইসলাম ফাতেমা

২য় বর্ষ, বায়োকেমিট্রি অ্যান্ড সেল বায়োলজি বিভাগ

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস।

বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং বিষয় হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার করা। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা হতে হবে বিজ্ঞানভিত্তিক, ছাত্ররাজনীতি মুক্ত। বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা বলতে শুধু বিজ্ঞানকেই বোঝায় না, সব ক্ষেত্রে বিজ্ঞান চর্চাকে বোঝায়। বিজ্ঞানের প্রকৃত শিক্ষাটা সব ক্ষেত্রে তুলে ধরা ও তা চর্চার সুযোগ নিশ্চিত করা এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থী যেন অবশ্যই নৈতিকতা ও মূল্যবোধে সচেষ্ট হতে পারে সে বিষয় নিশ্চিত করা। মেধা এবং দক্ষতার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের ফলাফল ঘোষণা করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রতিটি ক্যাম্পাস ছাত্ররাজনীতি মুক্ত করতে হবে। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি এবং স্বজনপ্রীতির ফলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা মুক্তবুদ্ধি চর্চা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলাফলের ওপরে রাজনৈতিক প্রভাব বা স্বজনপ্রীতি দেখানো যাবে না। যেদিন বৈষম্যমুক্ত শিক্ষা পরিবেশ গড়ে উঠবে, সেদিন থেকেই সুদিন ফিরে আসবে।

উদ্যোক্তাকেন্দ্রিক পড়াশোনায় গুরুত্বারোপ জরুরি

জুবায়ের সিদ্দিকী

৪র্থ বর্ষ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়।

নিউ ইয়র্কভিত্তিক সিইও-ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিন ২০২০ সালে সেরা শিক্ষাপদ্ধতির দেশগুলোর তালিকায় ৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো স্থান নেই। বোঝাই যাচ্ছে যে, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার অবস্থা ভালো নয়। পরীক্ষাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থীর চেয়ে পরীক্ষার্থীই বেশি তৈরি করেছি। অথচ একজন শিক্ষার্থীর পছন্দের জায়গাটা কোন বিষয়ে বা সে নিজের ক্যারিয়ার কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় এবং তা বাস্তবায়নে কি করা উচিত সে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে শেখানো হয় না আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায়। যার কারণে অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে একটা আসন নির্বাচনই মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ফলে আশানুরূপ চাকরিক্ষেত্র না পাওয়ায় হতাশা তৈরি হয়। তাই চাকরিকেন্দ্রিক পড়াশোনা থেকে বের হয়ে উদ্যোক্তাকেন্দ্রিক পড়াশোনা ও কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি গুরুত্বারোপ করা উচিত। এতে করে পড়ালেখার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়বে।

দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা

হ্যাপি আক্তার শিলা

১ বর্ষ, দর্শন বিভাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

একটা দেশের শিক্ষাব্যবস্থা হতে হবে বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত। শিক্ষার সব স্তর থেকে বৈষম্যমূলক শব্দটি নির্মূল করা উচিত। যেমন- ইংরেজি ও বাংলামাধ্যমের স্কুল আর মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছু বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত পরিমাণে অভিজ্ঞ শিক্ষক ও আধুনিক ক্লাসরুম, কম্পিউটার ও সায়েন্স ল্যাব থাকলেও বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার বিপরীত চিত্র লক্ষ করা যায়। এই ধরনের বৈষম্য দূর করতে হবে এবং সেই সঙ্গে দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করা, এতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মূল্যায়ন সম্ভব। শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড, তাই জাতির মেরুদন্ড শক্ত করতে হলে দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা খুবই জরুরি। অন্যদিকে শিক্ষা খাতে ঘাটতি রেখে রাষ্ট্র গঠন সম্ভব নয়। পর্যাপ্ত বাজেট নিশ্চিত করতে হবে। যে শিশুটা আজকে জন্ম নেবে তার শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্রের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে