সবুজের মায়ায় জড়ানো বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

মো. আনোয়ার হোসেন
.

সবুজের মায়ায় জড়ানো উত্তরের উচ্চ শিক্ষার বাতিঘর রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। সবুজ-শ্যামল আর পাখির কিচির-মিচির শব্দ, প্রাণ জুড়ানো দক্ষিণা বাতাস, স্নিগ্ধ হাওয়া আর প্রকৃতির কোমল মায়ার চাদরে জড়িয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ক্যাম্পাসের ভেতরে পথ চলতে চলতে মনে হয় এ যেন বৃক্ষের জাদুঘর। ৭৫ একরের এই ক্যাম্পাসে রয়েছে আড়াইশ' প্রজাতিরও বেশি প্রায় ৩৬ হাজার গাছ। গাছগুলো দিন দিনই সতেজ ও সুন্দর হয়ে উঠছে। ক্যাম্পাসের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি জারুল গাছ। মূল ফটক পেরিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে রাস্তার দু'ধারে সারি সারি কৃষ্ণচূড়া। সবুজপাতা ঘেরা কৃষ্ণচূড়ার ডালে যখন লাল ফুল ফোটে তা দেখে মনে হয় যেন জাতীয় পতাকা সবুজের মাঝে লাল রং নিয়ে উড়ছে। সবুজ পাতার ভেতর থেকে রক্তরাঙা কৃষ্ণচূড়া যেন সবাইকে এই ক্যাম্পাসে স্বাগত জানায়। ক্যাম্পাসের প্রথম গেট দিয়ে প্রবেশ করলেই দেখা মিলবে দেবদারু সুশোভিত সড়ক। ক্যাম্পাসের সর্বোচ্চ সুন্দরতম সড়ক হলো বিজয় সড়ক, যা কৃষ্ণচূড়া ও দেবদারু সড়কে সংযোগ করে থাকে। প্রতি বিকালে বিজয় সড়ক যেন সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের ছবি তোলার হটস্পট হয়ে ওঠে। এছাড়া ক্যাম্পাসের তৃতীয় ও চতুর্থ গেট দিয়ে প্রবেশ করলে দেখা যাবে বকুল ও শিউলি ফুলের সমারোহ। প্রতিটি অ্যাকাডেমিক ভবন সবুজে ঘেরা। যেন ছায়াঘেরা এক সবুজ উদ্যান। চারদিকে সবুজের আলোছায়া। বিচিত্র গাছের সমাহার। সবুজের ছায়ায় এক ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আরেকটা ভবন দেখা যায় না। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্যাম্পাসের অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা। ক্যাম্পাসের ভিতরে প্রশাসনিক ভবন, ক্যাফেটেরিয়া, একাডেমিক ভবন, মসজিদ, লাইব্রেরি, হল, ডরমেটরি, খেলার মাঠসহ যে কোনো জায়গায় দাঁড়ানো হোক না কেন মুহূর্তেই যেন সবুজের নির্মল অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে পরিচিত গাছের পাশাপাশি পরিচয় মিলবে বিভিন্ন অপরিচিত গাছেরও। কোনোটা পরিণত, কোনোটা চারা অবস্থা থেকে মাত্রই ছোট ডাল মেলে, কোনোটা আবার শরীর ভর্তি সবুজ-কোমল-কচি পাতা নিয়ে বেড়ে উঠেছে। ক্যাম্পাসে ফল-ফুল, ঔষধি ও সৌন্দর্যবর্ধক গাছও রয়েছে। যেমন- শাল, দেবদারু, পলাশ, কাউফল, আঁশফল, সফেদা, আলুবোখারা, আমলকী, বট, পাকুড়, হরীতকী, বহেরা, অর্জুন, কাইজেলিয়া, রাবার, সোনালু, বিলাতি গাব, জাত, নিম, বুদ্ধ নারিকেল, কাঠবাদাম। ফুলগাছের মধ্যে উলেস্নখযোগ্য রয়েছে- নীলমণি লতা, ঝুমকো লতা, লাল কাঞ্চন, শ্বেত কাঞ্চন, তিন রকম কাঠগোলাপ, তিন ধরনের চেরি, গোলাপ, জবা, রজনী গন্ধা ও মাধবীলতা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুর্লভ গাছের মধ্যে রয়েছে- গিস্নরিসিডিয়া, জয়তুন, পারুল, হৈমন্তী, জয়ত্রি, ঢাকি, জাম, তেলসুর, পুত্রঞ্জীব, কানাইডিঙা, হলদু, দইবোটা, পুমুর, মহুয়া, পানিয়াল, পেস্তাবাদাম, কাজুবাদাম, চিকরাশি এবং নাগেশ্বর গাছ। বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও নানা জটিলতার কারণে স্থায়ী ক্যাম্পাস পেতে তিন বছর লেগে যায়। ৮ জানুয়ারি ২০১১ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস উদ্বোধন করেন। প্রতিষ্ঠাকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে অন্য প্রান্ত দেখা যেত। সময়ের পরিক্রমায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন সুধীজনের সহযোগিতায় ক্যাম্পাস গাছপালা দিয়ে সাজানোর ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছেন প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যাপক ডক্টর তুহিন ওয়াদুদ। এখন তিনি কোনোরকম বিতর্কে না জড়িয়ে গাছগুলোর সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বজায় রাখবেন- এটাই সবার প্রত্যাশা।