রাষ্ট্র বিনির্মাণে আমাদের আকাঙ্ক্ষা
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ যখন গঠিত হয়েছিল তখন আপামর মানুষের কিছু আশা-আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয়, যা অধিকাংশই শুধু স্বপ্নেই রয়ে গেছে। ২০২৪ এই রাষ্ট্রকে আগামীর জন্য বসবাসযোগ্য করে যেতে এবার সবাই হাতে হাত রেখে নেমেছেন সংস্কারের সংগ্রামে। রাষ্ট্র বিনির্মাণে কাঙ্ক্ষিত মোড়ে এসে জানার সুযোগ হয় কিছু প্রস্তাবনার। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সেসব মতামত পাঠকের জন্য তুলে ধরেছেন তাহমিদ হাসান
প্রকাশ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
গবেষণানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে
গাজী ইশমাম হাসান
প্রভাষক
পদার্থ বিভাগ,
গণ-বিশ্ববিদ্যালয়।
বর্তমান বিংশ শতাব্দির আধুনিক প্রযুক্তির যুগে গবেষণানির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশগুলোয় নতুন একটি কনসেপ্ট হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সে ক্ষেত্রে, একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশেও গবেষণা-ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত হচ্ছে। মূলত এটি এমন একটি উদীয়মান পদ্ধতি, যার লক্ষ্য পদ্ধতিগত অনুসন্ধান এবং প্রমাণ-ভিত্তিক অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার গুণমান বৃদ্ধি করা। এই শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় পাঠ্যক্রমের সঙ্গে গবেষণামূলক শিক্ষার সমন্বয় ঘটানো হয় এবং শিক্ষার্থীদের বাস্তব-বিশ্বের সমস্যাগুলোর সঙ্গে জড়িত হওয়ার পাশাপাশি নতুন জ্ঞান আহরণ করতে সাহায্য করে। বর্তমান দিনগুলোতে, বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্রমবর্ধমানভাবে এই পন্থা অবলম্বন করছে, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে, স্নাতকরা কেবল জ্ঞানীই নয় বরং নতুন নতুন উদ্ভাবনী চিন্তার মাধ্যমে স্থানীয় ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে। গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক গবেষণা প্রকল্পে নিযুক্ত করে, এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে তাত্ত্বিক জ্ঞান বাস্তব-বিশ্বের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য প্রয়োগ করা যাবে। সর্বোপরি, অগ্রগতি সত্ত্বেও একটি গবেষণা-ভিত্তিক মাধ্যমের সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন সীমিত সম্পদ এবং অবকাঠামোর মতো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়, তবে চলমান প্রচেষ্টা এবং সংস্কারগুলো ভবিষ্যতে ধীরে ধীরে আরও শক্তিশালী এবং গবেষণা-ভিত্তিক শিক্ষা কাঠামোর জন্য পথ প্রশস্ত করছে।
রাষ্ট্র নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধ্য
মেঘলা আক্তার
শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ,
গণ-বিশ্ববিদ্যালয়।
আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মিত হবে সব সংস্কারের মধ্য দিয়ে। যেখানে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন জরুরি। সব নাগরিকের বাক্স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাধীন বাংলাদেশে সব নাগরিক থাকবে নিরাপদে, রাষ্ট্র নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধ্য থাকবে। লেজুড়বৃত্তিক যেসব ছাত্র সংগঠন আছে, সেগুলো বন্ধ করে প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ চালু করা দরকার, ফলে ছাত্র প্রতিনিধি তৈরি হবে। শিক্ষার্থীরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই অধিকার সচেতনতার চর্চা করার উপযুক্ত সুযোগ পাবে। ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র নির্মাণ জরুরি। সব ধর্মের মানুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করে সহাবস্থান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শান্তি ফিরে আসবে। আমাদের দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন করে দেশেই যাতে সবাই সুচিকিৎসা পায়, তা চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। রাষ্ট্রে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করার ব্যাপারে খেয়াল বাড়াতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সব রকম নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে। এই রাষ্ট্র সবার, সুতরাং সবার সুস্থ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত যাতে হয়, সে ব্যবস্থা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে।
মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন
অথৈ দাস
শিক্ষার্থী, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগ,
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি।
সবার আগে মানুষের জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। রাজনৈতিকভাবে নিজেকে শিক্ষিত করতে হবে। আমরা সবাই যেমন অন্ধকার জগতে ছিলাম, সেই জায়গাতে কাজ চালানো জরুরি। মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন। সবার আগে ভালো মানুষ হতে হবে। আমি যদি একজন ভালো মানুষ না হই, তাহলে তো আমি কখনোই স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করতে পারব না।
সবাইকে সবার মতন বাঁচতে দিতে হবে। আপনি যেটা সত্য মনে করেন, সেটাই শুধু 'সত্য' সেই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে হবে আমাদের সবাইকে। সব মানুষের প্রতি সম্মান রেখে দেশ গড়তে এগোতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন। সবার আগে নিজের দেশকে ভালোবাসতে হবে। আরেকটা ব্যাপার স্মরণ রাখা জরুরি, সেটা হলো- যারা নতুন দেশে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য, লাইব্রেরিসহ সবকিছুতে আঘাত হেনেছেন, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে যেন কখনো কোনো অসম্মান না হয়, সেই জায়গায় খেয়াল রাখতে হবে।
মুক্ত গণমাধ্যম জরুরি
মেহরাবুল হক রাফি
প্রভাষক
জার্নালিজম, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগ,
ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
একটা দীর্ঘ সময় ধরে মুক্ত গণমাধ্যম এবং এর চর্চা অদৃশ্য। বিভিন্ন দেশেই গণমাধ্যমের ওপর বভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে? যেটা মূলত বাক্ স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। এসব ক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের অভাবও লক্ষণীয়। দেশে সংবাদমাধ্যমগুলো মুক্তভাবে তাদের সংবাদ প্রকাশে তো বাধার মুখে পড়ছেই আবার টেলিভিশন-রেডিওতে (একযোগে প্রচার) ঠিক কখন কতটুকু সংবাদ প্রচার করবে, সেটাও ধরাবাঁধা।
এগুলো অমূলক এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, এমন কিছু আইন প্রণয়ন করা হয়, যেমন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট এগুলো কার্যত মতপ্রকাশে বাধাগ্রস্ত করার জন্যই। মুক্ত গণমাধ্যমের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আফগানিস্তানেরও নিচে। এখান থেকে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, আমরা কতটুকু মুক্তভাবে চর্চা করতে পারি। সংবাদমাধ্যমগুলোর মুক্তচর্চা নিশ্চিত করা জরুরি। চিহ্নিত সমস্যা সমাধান করতে হবে। সরকারের যা প্রশংসা, সেটা তো নিশ্চয়ই করবে, এর মানে তো এটা না যে, 'ফ্যাক্ট' যেটা, সেটাকে গোপন করবে। নিজের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীদের সচেতন থাকতে হবে, ব্যক্তিগত আক্রমণ না করে সবাইকে সমানভাবে মতপ্রকাশ নিশ্চিত করতে হবে।