সম্প্রতি রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে ১৯৭২ সাল থেকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন 'বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি সোসাইটি (বিপিএস)'। এতে সার্বিক ব্যবস্থাপনা করে বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন 'বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলন'-এর তিন কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক এবি জুবায়ের, আবিদ হাসান রাফি এবং আবদুলস্নাহ আল নোমান। বিপিএস ও বিপিএ-এর প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন সেক্রেটারি ডা. শান্তনু বাড়ৈর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিপিএস ও বিপিএ-এর সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান। লিখিত বক্তব্য থেকে জানা যায়, ১৯৬০ সালে বাংলাদেশে প্রফেসর ডা. আবুল হোসেনের হাত ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফিজিওথেরাপি বিভাগ চালু হয়। পরবর্তীতে দেশের কয়েকটি হাসপাতালে এই বিভাগ চালু হলেও একমাত্র জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল তথা পঙ্গু হাসপাতাল ছাড়া কোথাও এই ফিজিওথেরাপি বিভাগ আর টিকেনি। এর কারণ হিসেবে বলা হয় ২০০০ সালের ভেতর সরকারিতে কর্মরত প্রফেসর ডা. মনিরুজ্জামানের মতো ফিজিওথেরাপি পেশার প্রাণপুরুষরা অবসরে চলে গেলে নতুন করে আর ফিজিওথেরাপিস্ট নিয়োগ না হওয়ায় শূন্যতার সুযোগ নিয়ে ডিপার্টমেন্টগুলো বেদখল হয়ে যায়। লিখিত বক্তব্য এটাও দাবি করা হয় বর্তমানে সরকারি কোনো হাসপাতালে 'ফিজিওথেরাপিস্ট' পদে কোনো ফিজিওথেরাপিস্ট কর্মরত নেই। পঙ্গু হাসপাতালে যেই ফিজিওথেরাপি বিভাগটি চালু আছে। তাও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দিয়ে যাচ্ছেতাইভাবে চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। লিখিত বক্তব্য থেকে আরও জানা যায়, সরকারিতে ফিজিওথেরাপিস্ট না থাকায় পুরো ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পেশাটা টিকে আছে বেসরকারিভাবে ফিজিওথেরাপি সেন্টার এবং সিআরপির মতো দাতব্য ফিজিওথেরাপি প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। তাই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা আগামী এক মাস (২৫ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) দেশের নির্ধারিত সেন্টারসমূহ থেকে আহত বীরদের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা বিনামূল্যে নেওয়ার অনুরোধ জানান। একই সাথে দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনের জন্য ফিজিওথেরাপি দীর্ঘদিন লাগবে বিধায় সরকারিতে অতি দ্রম্নত ফিজিওথেরাপিস্ট নিয়োগের মাধ্যমে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা চালু করার দাবি করেন নেতারা।
এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ফিজিওথেরাপি নেতাদের ধন্যবাদ জানান আহত বীরদের জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ফ্রি করে দেওয়ার জন্য। এছাড়া তারা আরও ধন্যবাদ দেন এই জন্য যে, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা অনেক পেশাজীবীদের মতো পথেঘাটে আন্দোলন করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি না করে সাংবাদিকদের মাধ্যমে সরকারের কাছে তাদের যৌক্তিক দাবি তুলে ধরেছেন। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক আবিদ হাসান রাফি বলেন, 'দেশে সঙ্গীত শেখার জন্যও সরকারি সঙ্গীত কলেজ আছে, সেখানে একটি সরকারি ফিজিওথেরাপি কলেজ থাকাটা প্রয়োজন।' এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায় ১৯৯৮ সালে সরকারি অনুমোদন পাওয়া 'সরকারি বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিওথেরাপি' আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি সেন্টারসমূহ থেকে ফ্রি সেবা নিতে কোনো সমস্যা হলে এই কর্মসূচির সমন্বয়ক ডা. সাইফুল ইসলামের মুঠোফোনে (০১৭৮৭৫৯১৯৮৯) যোগাযোগ করতে বলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিপিএস ও বিপিএ সভাপতি ডা. মো. তৌহিদুজ্জামান, সহ- সভাপতি ডা. প্রদীপ কুমার সাহা, সহ-সভাপতি ডা. শফিউলস্নাহ প্রধান, সহ-সভাপতি ডা. মো. মোসলেম পাটওয়ারী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দেলোয়ার হোসেন চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় অন্যান্য নেতারা।