একটি আন্দোলন। যার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিল লাখো শিক্ষার্থী-জনতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা এই আন্দোলন ক্রমশ রূপ পাল্টাতে থাকে। সরকারি বিভিন্ন বাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। এই আন্দোলনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, লেখক, কবি, সাহিত্যিক, আইনজীবী, সাংবাদিক, সাইবারকর্মীরাসহ যে যেভাবে পেরেছেন, সহায়তা করেছেন।
আন্দোলনকে ঘিরে সর্বস্তরের জনগণের পাশাপাশি ঘরে বসে আইটি বা সাইবার এক্সপার্টদের অংশগ্রহণ ছিল ঈর্শনীয়। যাদের অভিহিত করা হয়েছে সাইবারযোদ্ধা হিসেবে। তেমনি আন্দোলনকারীদের সহায়তা করেছেন ফয়সাল আহমেদ।
ফয়সাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইসিটি) বিভাগের স্নাতক ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার নেতৃত্বে ও প্রশিক্ষণে দেশ ও বহির্বিশ্ব থেকে হাজারেরও বেশি সাইবারযোদ্ধা আন্দোলনকারীদের সাইবার নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি সরকারি ওয়েবসাইটে সাইবার অ্যাটাক চালিয়েছিলেন।
চব্বিশের এই সাইবারযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক আজাহারুল ইসলাম।
আজাহার : আপনাদের কার্যক্রম পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া কেমন ছিল?
ফয়সাল : গতানুগতিক সাইবার অ্যাট্যাক যেমন ডিডস দিয়ে সার্ভার উড়িয়ে দেওয়া বা ডিফেস আপলোড করা থেকে, আন্দোলনকারীদের সাইবার নিরাপত্তাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। বিশেষ করে-
সরকারি বাহিনী যেন খুব সহজে আন্দোলনকারীরের ট্রেস করে আটক বা মারধর করতে না পারে। মেটা ডাটা বা ঙঝওঘঞ করে অঁঃযবহঃরপধঃব ারফবড় ভড়ড়ঃধমব পড়ষষবপঃ করা ও উপযুক্ত প্রমাণসহ সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া। আন্দোলন সম্পর্কিত ভুয়া ভিডিও, তথ্য, ছবি ইত্যাদি যাচাই-বাছাই করা এবং অনলাইন থেকে সরিয়ে দেওয়া।
সোস্যাল মিডিয়ার নিয়ম-কারণ নিয়ে আন্দোলনকারীদের সচেতন করা যেন নিরাপত্তার সঙ্গে তথ্য প্রচার করতে পারে। সরকারি বাহিনীর বিভিন্ন সাইবার প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আন্দোলনকারিদের বিভিন্ন রকম আইটি রিলেড তথ্য ও পরামর্শ দেওয়া।
আজাহার : এ ধরনের কার্যক্রমের চিন্তা কেন এল?
ফয়সাল : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সরকারি বাহিনীর জুলুম-অত্যাচার দেখে বসে থাকতে পারিনি। চিন্তা করলাম, যারা সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট আছি; সঠিক তথ্য পৌঁছে দিয়ে আন্দোলনকারীদের সাইবার নিরাপত্তা অর্থ্যাৎ আইটি সাপোর্ট দিয়ে অন্তত সাধ্যমতো পাশে থাকতে পারি; তবেই নিজেকে তৃপ্ত করতে পারব। এই চিন্তা থেকেই ১৬ জুলাই থেকে কার্যক্রম শুরু করা।
আজাহার : এত অল্প সময় এক হাজার সাইবারকর্মী কীভাবে সংগ্রহ করলেন?
ফয়সাল : দীর্ঘ ছয় বছর ধরে সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করছি, কাজ করছি বাংলাদেশের অন্যতম সাইবার সিকিউরিটি ভলেন্টিয়ার প্রতিষ্ঠান 'ওহভড়ংবপ ইউ' এর চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। ওহভড়ংবপ ইউ এর মাধ্যমে প্রশিক্ষিত লাখ লাখ শিক্ষার্থী থেকে এক হাজার শিক্ষার্থী পেতে বেগ পেতে হয়নি।
আজাহার : আপনাদের এই শ্রমের জন্য কোনো চাওয়া-পাওয়া আছে কি?
ফয়সাল : ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। মানুষের অধিকার রক্ষায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি। স্বপ্ন দেখেছি নতুন বাংলাদেশ গড়ার এবং মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার। আমরা চাই, মানুষ তার সব অধিকার ফিরে পাক। সূচনা হোক নতুন বাংলাদেশের। মুক্তি পাক বৈষম্য, শান্তি থাকুক সবাই।
আজাহার : আপনারা এই সাইবার কার্যক্রম চালু রাখবেন কি?
ফয়সাল : দেশ ও জাতির প্রয়োজনে আমরা কার্যক্রম চালু রাখব। নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে হলে আমাদের দক্ষ সুনাগরিক গড়ে তুলতে হবে।