মানুষ মানুষের জন্য
বায়েজিদ বোস্তামী
শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
'মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে'- এই মানবীয় চেতনা ও মূল্যবোধের মধ্যেই প্রকৃত মনুষ্যত্ব নিহিত। যারা মানুষের জন্য অকাতরে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন, যারা মানুষের কল্যাণে ব্রতী হয়েছেন, যারা মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন সদা সর্বদা - তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরার জন্য প্রতিবছর ১৯ আগস্ট পালিত হয় 'বিশ্ব মানবতা দিবস।' বর্তমান বিশ্বে সংঘাত, যুদ্ধ পরিস্থিতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানাবিধ সংকটের কারণে অনেক মানুষের জীবন বিপন্ন। এই বিপন্ন জনজীবনকে সুন্দর ও স্বাভাবিক করার জন্য প্রয়োজন মানবিক সহায়তা। এই সহায়তা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, পানি, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে সহায়তা করে। মানবতার সেবাই এই দিনটির মূল প্রতিপাদ্য। যারা মানবতার সেবায় নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, সংকটের সময় জীবনের তোয়াক্কা না করে আর্ত মানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন - এই দিনটি মূলত তাদের জন্যই। সত্যিকার অর্থে, নিপীড়িত নির্যাতিত ও আর্ত মানবতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করার মানসিকতাই মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। মানুষের জন্যই আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াই, বিপদে এগিয়ে আসি। সমস্বরে বলি, কামিনী রায়ের সেই বিখ্যাত পঙক্তি 'সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।'
মানবসেবার স্থান সর্বাগ্রে
আশা
শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
মানবসেবায় জীবন উৎসর্গ করা অসীম সাহসী -মহৎ মানুষদের শ্রদ্ধা -সম্মান জানানোর জন্যই বিশ্বব্যাপী ১৯ আগস্ট বিশ্ব মানবতা দিবস উদযাপিত হয়। এই দিবস মূলত বিশ্বব্যাপী মহামারি, দুর্যোগ, যুদ্ধবিগ্রহ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ মানবিক সংকটের সময় মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সহায়তা প্রদান কর্মীদের অবদানকে স্বীকৃতি জানানোর জন্য পালন করা হয়।
যারা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যদের জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চিত করেন তাদের জন্যই এই দিবস।
মানবিকতা একটি মহৎ গুণ। যারা মানবতার সেবায় নিয়োজিত থাকেন, তারা নিজ স্বার্থের কথা না ভেবে মানবতার মঙ্গল ও সুরক্ষার জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে থাকেন। যুদ্ধ বিগ্রহের সময় যুদ্ধবন্দি মানুষের খাদ্য, আশ্রয়, জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মহামারির সময় মানুষকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাসহ যারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন, তাদের সার্বিক সহায়তা করে থাকেন। বিশ্ব মানবিকতা দিবসের শিক্ষা প্রধানত মানবিক মূল্যবোধ, সহানুভূতি এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধের ওপর ভিত্তি করে। বিশ্বব্যাপী চলমান নানা সংকটময় পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সেবা প্রদান, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আর্থিক শারীরিক মানসিক সমস্যায় তাদের সহযোগিতার শিক্ষা দেয়। সুন্দর, সুশৃঙ্খল সমাজ জীবন গঠনে বিশ্ব মানবিকতা দিবস আমাদের উজ্জীবিত করে। সামাজিক দায়িত্ব সম্প্রীতি ও ঐক্য সৃষ্টি সচেতনতা বৃদ্ধি শিক্ষার প্রসারসহ নানা কার্যক্রম মানবিক সমাজ বিনির্মাণে সহায়ক এবং বিশ্বে একটি সহনশীল, সুশৃঙ্খল এবং সহানুভূতিশীল পরিবেশ তৈরি করে। বিশ্ব মানবিকতা দিবস মানবতার প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক, যা আমাদের মানবিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের আহ্বান জানায়।
সহিংসতা প্রবণতা বন্ধ হোক
নয়ন তারা
শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
স্থান-কাল,পাত্রভেদে হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান অর্থাৎ সব ধর্ম, বর্ণ, জাত, পেশা, শ্রেণির ঊর্ধ্বে আমাদের সবার পরিচয় আমরা মানুষ; সৃষ্টির সেরা জীব। সমাজ, দেশ, বিশ্বের মধ্যে আজ ঘটছে রাহাজানি, নৃশংসতা, অন্যায়ভাবে হত্যাযজ্ঞ ও পৈশাচিক কর্মকান্ড। যা মানবিকতা ব্যাঘাতের পাশাপাশি বিবেকবোধহীন আচরণ; যা মানবাধিকারের বৈপরীত্য। মানুষ হিসেবে চরম আত্মত্যাগ করে মানবসেবায় ব্রতী হতে হবে। মানবকল্যাণ ও মানব উন্নয়নে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে পাশে দাঁড়াতে হবে বিশ্বস্ততার সহিত। আত্মশুদ্ধি ও প্রজ্ঞা বিকাশের প্রবণতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানবিক মানুষ হিসেবে অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে দেশ ও বিশ্ববাসীর সঙ্গে। উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরা যায় ধর্মীয় দাঙ্গা, যা শুধু বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নেই; এর সীমানা বহুদূর। তৃপ্তি মানসিক প্রশান্তি অথচ সর্বত্র দেখা যায় উল্টো চিত্র, যা ভেসে আসে নিকৃষ্ট জীবের আবির্ভূত ন্যায়। আমাদের পরিচয় না ভুলে সবার বিপদ-আপদ, সুখ-দুঃখ, সুদিন-দুর্দিনে এগিয়ে এসে ভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে, এতে কমে আসবে সহিংসতা ও ঝঞ্ঝায়পূর্ণ জটিল জীবনের চিত্র; যা অবশ্যই সম্ভব মানবিক সহায়তার মাধ্যমে। অর্থাৎ বলা যায়, সহিংসতা দূরীকরণের হাতিয়ার মানবিক সহায়তা। সে জন্য বিশ্বের সর্বস্তরের সাধারণ নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে মানবিক কাজের প্রতি ও জোরদার সমর্থনের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব সহিংসতাহীন শান্তিপূর্ণ দেশ ও বিশ্ব, যেথায় সবার ঊর্ধ্বে পরিচয় থাকবে আমরা সবাই মানুষ ও সামাজিক জীব। নিরাপদ নির্বিঘ্ন জনজীবনে দুর্ভোগ বয়ে না আসুক, নিরসন ঘটুক সহিংসতার। জানমালের দুশ্চিন্তা থেকে রেহাই মিলুক আমজনতাদের। সুন্দর নির্মল সমাজ থেকে নিরসন হোক সহিংসতার শিকারের সাধারণ জনগণের জীবন এবং দাবি-দাওয়া, যা উপযুক্ত সময়ের দাবিদার বিশ্ব ও সমাজজীবন।
মানবতা হোক মানবধর্ম
আনোয়ারুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
যেসব মহাত্মা আত্মস্বার্থ বিসর্জনের মাধ্যমে মানবসেবায় ব্রতী হয়েছেন, মানব কল্যাণে, মানুষের উপকারে, সুখে-দুঃখে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সারা বিশ্বে দিবসটি পালন করা হয়। ব্রাজিলের জাতিসংঘের কূটনীতিক সেরগিও ভিয়েরা দ মেলো দীর্ঘ ৩৪ বছর যাবত মানবিক ও রাজনৈতিক কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। ২০০৩ সালে তিনি তার ২১ সহকর্মীসহ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মানবিক কার্য পরিচালনা করার লক্ষ্যে যান। সেখানে ১৯ আগস্ট ইরাকের জাতিসংঘ কার্যালয়ে বোমা হামলায় তারা সবাই নিহত হন। তাদের স্মরণে জাতিসংঘ দিনটিকে বিশ্ব মানবতা দিবস হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং ২০০৯ সাল থেকে দিবসটি সারা বিশ্বে পালিত হয়ে আসছে। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ হিসেবে আমাদের আত্মস্বার্থ ভুলে মানবসেবায় ব্রতী হব। অপরের কষ্ট ও সমস্যার প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন এবং সাধ্যমতো সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে বের হয়ে জ্ঞানের আলোয় গড়তে হবে আমাদের সমাজব্যবস্থা। পৃথিবীর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ এবং পরিবেশের উদ্ভিদ, গাছপালা ইত্যাদির প্রতিও আমাদের পরিচর্যা করতে হবে। ধর্ম, বর্ণ ও জাতি ইত্যাদি সব ধরনের ভেদাভেদ দূর করে সর্বোপরি সমাজে সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের মাধ্যমে মানবতাকে মানব ধর্ম হিসেবে ফুটিয়ে তোলা অপরিহার্য।