শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

পাবিপ্রবির সৌন্দর্যের সঙ্গী জালালি কবুতর

আবদুলস্নাহ আল মামুন
  ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
পাবিপ্রবির সৌন্দর্যের সঙ্গী জালালি কবুতর

সবুজে ভরা বাংলার এই প্রকৃতিতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। এ দেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে পাখির ইতিহাস দীর্ঘ। একটা সময় পাখির কলতানে মুখরিত থাকত বাংলার এই সবুজ-শ্যামল প্রকৃতি। সময়ের পরিক্রমায় প্রকৃতি থেকে কমতে শুরু করেছে পাখির কলতান, অনেক পাখিই এখন বিলুপ্তির পথে। প্রকৃতি থেকে ধীরে ধীরে পাখির সংখ্যা কমতে শুরু করলেও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে এখনো অনেক বিলুপ্ত পাখির দেখা মেলে। তবে প্রতিদিন বিকেলবেলায় এই ক্যাম্পাসে জালালি কবুতরের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। শেষে বিকেলে ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা মেলে জালালি কবুতরের।

বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এবং শেখ হাসিনা হলের ছাদ, কার্নিশ এবং বিল্ডিংয়ের ছোট ছোট খোপগুলো দখলে থাকে জালালি কবুতরের। এ সময় কবুতরগুলোর এক বিল্ডিং থেকে অন্য বিল্ডিংয়ে উড়ে যাওয়া, কিছু সময় পর পর দল বেঁধে পুরো আকাশে ঘুরে বেড়ানো, বাকবাকুম শব্দ, ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ এক মধুর পরিবেশ তৈরি করে।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে যখন ক্যালিকো কটন মিল ছিল এই জালালি কবুতরগুলো সেখানেই থাকত। কিন্তু ক্যালিকো কটন মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এর ভবনগুলো যখন ভেঙে ফেলা হয় তখন এরা এক প্রকার আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। পরে ২০১৩ সালে যখন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলো নির্মাণ করা হয় তখন থেকে এই কবুতরগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে শুরু করে।

প্রতিদিন বিকেলে প্রশাসনিক ভবনের পুরো ছাদে এই কবুতরগুলো দেখা যেত। ক্যাম্পাস খোলার পর চারদিকে কোলাহল বাড়তে থাকে, তখন এদের দেখা যেত কিন্তু এরা সবার আড়ালে থাকত। এখন প্রতিদিন বিকেলেই কবুতরগুলো দেখা যায়।

কর্মচারী মঙ্গল শেখ বাবু জানান, এই ক্যাম্পাস হওয়ার পর থেকেই আমি এই কবুতরগুলোকে দেখে আসছি। কখনো কম কখনো বেশি কিন্তু একেবারে এই ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের জমিগুলোতে বছরে তিনবার ফসল হওয়ায় এই কবুতরগুলো এখানে পর্যাপ্ত খাবার পেয়ে থাকেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পাখিদের থাকার জন্য অন্যান্য জায়গা থেকে নিরাপদ। যার কারণে কবুতরগুলো দীর্ঘদিন ধরেই এই ক্যাম্পাসে বসবাস করছে।

এই শিক্ষক আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশের জায়গাটা পাখিদের জন্য ইকো ফ্রেন্ডলি যার কারণে এই ক্যাম্পাসে এবং এর আশপাশে জালালি কবুতর ছাড়াও অনেক বিলুপ্ত এবং প্রায় বিলুপ্ত পাখির দেখা মেলে। যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে এই ক্যাম্পাস এবং এর আশপাশের জায়গাতে অনেক বিলুপ্ত এবং প্রায় বিলুপ্ত পাখিকে রক্ষা করা সম্ভব।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশ থেকে ধীরে ধীরে জালালি কবুতরের সংখ্যা কমতে থাকলেও পাবিপ্রবি ক্যাম্পাস জালালি কবুতর টিকিয়ে রাখার জন্য বড় একটা সম্ভাবনার জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই কবুতরগুলোর জন্য পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ এবং থাকার জন্য নিরাপদ স্থানের ব্যবস্থা করে দিলে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হতে পারে জালালি কবুতরের অভয়ারণ্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে