বাংলাদেশে আইন পেশার পরিধি এখন বিস্তৃত। নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার বিশাল দ্বার এখন উন্মুক্ত। আইন বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে পাবলিক ও প্রাইভেট দুই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়েই।
পাবলিক ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সীমিত হওয়ায় অনেকে ছুটছেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৯ সালে বেসরকারি পর্যায়ে আইনশিক্ষা চালু করে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও আইনজ্ঞ কর্তৃক এ বিভাগের একাডেমিক সিলেবাস প্রণীত এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক অনুমোদিত। এখানকার অধিকাংশ শিক্ষাদাতা হাইকোর্ট ও জজ কোর্টের তালিকাভুক্ত আইনজীবী।
আগ্রহী ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থীরা উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ ২.৫ পেলে এখানে অধ্যয়নের সুযোগ পায়।
চার বছর মেয়াদি এলএলবি (সম্মান) কোর্সে ১৪০ ক্রেডিট পড়ানো হয় এবং ৮ ধাপে ৩ লাখ টাকা সেমিস্টারে ফি প্রদান করতে হয়। বর্তমানে এ বিভাগের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৮৫ ও শিক্ষক রয়েছেন ৯ জন।
এখানকার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রয়েছে সুবিন্যস্ত শ্রেণিকক্ষ, পাঠাগার, কম্পিউটার ল্যাবরেটরি, খেলার মাঠ, ব্যায়ামাগার, আড্ডা দেওয়ার জন্য বাদাম তলা। ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক ওয়াইফাই সংযোগ থাকায় গবেষণা ও অন্য কাজে বিশেষ সুবিধা ভোগ করেন এই শিক্ষার্থীরা। শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের মামলা পরিচালনা শেখানোর জন্য আছে মুর্ট কোর্ট।
আইনের বিজ্ঞান, দর্শন ও ব্যাকরণের প্রাথমিক ধারণাগুলো এখানে আলোচনা করা হয়। তাছাড়া পড়ানো হয় সাংবিধানিক আইন, মুসলিম ও হিন্দু আইন, আন্তর্জাতিক আইন, আদালতের নিয়ম-কানুন, আইনের ইতিহাস ও চুক্তি আইন। স্নাতক পর্যায়ে ভূমি আইন, ক্রয়বিক্রয়-সংক্রান্ত আইন, পরিবেশ আইন, ক্রিমিনোলজি, সিপিসি, সিআরপিসি ইত্যাদি পড়ানো হয়।
এখানকার শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন জেলায় আইনজীবী হিসেবে কর্মরত আছেন। তা ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে, বাংলাদেশ পুলিশে, সাংবাদিকতায়, শিক্ষকতায়, রাজনীতি, ফটোগ্রাফি, ব্যবসায়ী, গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি, লিগ্যাল কর্মকর্তা হিসেবে কর্ম করছেন। মূলত বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আইনজীবী ও আজীবন আদালতে অনুশীলনের সুযোগ আছে আইনের ছাত্র-ছাত্রীদের। জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনে পাস করলে হতে পারবে বিচারক ও বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে এরা।
এখানকার ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জাকির হোসেন রনি বলেন, আইন বিভাগে পড়াশোনা করে সুন্দর ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। সেই চিন্তা থেকেই মূলত আইন বিভাগে ভর্তি হওয়া। এই বিভাগের শিক্ষকেরা খুবই আন্তরিক। সবাই অভিজ্ঞ এবং সবাই বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত আইনজীবী। তিনি বলেন, বিভাগের মেধাবীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তির সুযোগ রয়েছে। বিভাগের পরিবেশ মনোমুগ্ধকর ও পড়াশোনা উপযোগী।
৩য় ব্যাচের শিক্ষার্থী হাফিজা খান নীলা বলেন, আইন একটি বিস্তৃত বিষয়। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে আইন জানার কোনো বিকল্প নেই। আইন পেশায় সফল ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে রয়েছে অপার সম্ভাবনা।
তিনি আরও বলেন, ক্যারিয়ার ভিত্তিক যে কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্যও আইন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা জরুরি। মেধা-মনন বিকাশে ও সফল ভবিষ্যতের জন্য আইন বিভাগে অধ্যয়ন নিঃসন্দেহে যথাযথ সুযোগ ও সঠিক সিদ্ধান্ত।
বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ও আইনজীবী ফারাহ্ ইকবাল। তিনি বলেন, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ব্যতিক্রমী একটি বিভাগ। শুধু বিভাগ নয়, এটি একটি পরিবার। ক্লাসের বাইরেও শিক্ষার্থীদের কাউন্সিলিং করা হয়। দুর্বলদের এগিয়ে আনার চেষ্টা করে এখানকার শিক্ষকেরা।