সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয় (গবি) ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার সময় প্রথমেই কয়েক সেকেন্ডের জন্য চোখ গিয়ে থমকে দাঁড়াবে প্রধান ফটকে। নান্দনিক কারুকার্যে খচিত এবং পোড়ামাটির ফলকে ভাষাশহীদদের স্মৃতিগাথা। উপমহাদেশে নারী আন্দোলনের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া, ইলা মিত্রের তেভাগা আন্দোলন থেকে শুরু করে সুফিয়া কামালের সংগ্রামী জীবন এবং রফিক জব্বারের ভাষার জন্য আত্মত্যাগ সবই এখানে স্থান পেয়েছে।
আস্তে আস্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর যত প্রবেশ করা যাবে, ততই সৌন্দর্য জালে আটকা পড়বে যে কারও মন।
এ যেন জীবনানন্দের রুপসী বাংলারই খন্ডচিত্র।
চারদিকে সবুজের গালিচা বিছানো ৩১ একরের রূপসী স্বাগত জানাবে বারবার। দক্ষিণা বাতাসের সঙ্গে ফুল থেকে মধু সংগ্রহে মৌমাছির গুঞ্জন আর শুকনো পাতার মর্মর শব্দে প্রাণে ভিন্নরকম দোলা দিয়ে যাবে। ফুলে ফুলে নিষেক ঘটানোর দায়িত্বে রয়েছে সৌন্দর্যের রানী প্রজাপতি।
আরও একটু ডান-বাম তাকালে চোখে পড়বে কাঠবাদাম গাছের বিস্তৃত সারি। নিবিড় ছায়ায় ঘন বিস্তৃত ছাতার মতো দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো যেন চৈত্রের ক্লান্ত পথিকের একমাত্র আশ্রয়স্থল। রবীন্দ্রনাথ হয়ত দূর অতীতে এই ক্যাম্পাসে বসেই লিখেছিলেন, 'তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি মারে আকাশে।' এই কবিতার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ক্যাম্পাসের তালগাছগুলো।
আঁকাবাঁকা ইটের রাস্তায় কৃষ্ণচূড়ার পাপড়ি বিছানো বৃষ্টিস্নাত পথ ধরে খালি পায়ে যুগল হেঁটে যাওয়ার থপথপ শব্দ যেন এখানেই বিদ্যমান।
ওপাশে হিটলার চত্বর থেকে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ আর সসা কুঁচিকুঁচির শব্দে ইথারটা যেন ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
ট্রান্সপোর্ট পেরিয়ে উত্তর দিকের সোজা ইটের রাস্তা ধরে একটু হাঁটলে চোখে পড়বে খেজুর গাছের সারি।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ক্যাম্পাসের রূপের পালাবদল হতে থাকে। বিকালবেলার অপরূপ সৌন্দর্যের কাছে হার মানে পৃথিবীর সৌন্দর্য। পশ্চিমাকাশের লাল সূর্যটার স্নিগ্ধ আলোয় আলোকিত হয়ে পরিস্ফূটিত হয় আরেক দফা সৌন্দর্যের।
তবে গোধূলিলগ্নে ভূতের মতো কালো অন্ধকারে চারপাশ ছেয়ে আসলেও কারও কাছে এই সৌন্দর্য যেন অন্যরকম আমেজ বয়ে নিয়ে আসে।
ভূতুড়ে অন্ধকারে অদূরে শেয়ালের ডাক যেন ভিন্নমাত্রা যোগ করে। অতি উৎসুক মানুষরা রাতের সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করার জন্য কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের চারপাশে বিস্তৃত ছাউনির তলে বসে উপভোগ করেন চাঁদের রোমান্টিকতা।
সব সৌন্দর্যের লীলাভূমি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১ একরের পরিপাটি ক্যাম্পাস।