রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

শাড়ি পরা শেষ প্রজন্ম কি আমরা?

ইয়ান্তী দাস
  ২৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
শাড়ি পরা শেষ প্রজন্ম কি আমরা?

শাড়ি পরা কতই না ঝামেলা? অনেকের শাড়ি পরতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাগে। আবার এত্তো গরম! দুই অক্ষরের খুবই পরিচিত শব্দটি দিনকে দিন শাড়ি অবহেলিত হয়ে পড়ছে। বর্তমানে যুগের তরুণীদের কাছে আরও যা বেশি। পহেলা বৈশাখ, বিয়ে কিংবা বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া শাড়ি পরতে দেখা যায় না। এই যে এইটা দেখ, একটি সারারা কিনেছি বিয়েতে পরার জন্য, কেমন হয়েছে বল তো? এমন কথা বলেনি বা শুনেনি এমন নারী পাওয়া যেমন দুর্লভ তেমনি হালে শাড়ি পরা, আঁচল দেওয়া, কুঁচি দিতেও তেমন আর দেখা যায় না। যদি কেউ একজন দর্জির কাছে সালোয়াড় কামিজ আর শাড়ির বস্নাউজ পেটিকোটের অর্ডারের অনুপাত দেখতে যান তাহলে বিষয়টা সহজে অনুমান করতে পারবেন।

আমার ছোটবেলার প্রথম শাড়ির অভিজ্ঞতার কথা কিছুটা মনে আছে। প্রথম শাড়ি ছিল গামছা বা ওড়না। মাঝে মাঝে ভাবি বর্তমান যুগের বাচ্চারা কি শাড়ির আঁচলে মুখ লুকাতে জানে? তপ্ত দুপুরে মায়ের আঁচলের ভাজে শ্বাস নিতে জানে? স্নান শেষে বাড়ির ছাদে ভেজা চুলের সঙ্গে আঁচলটাকে কখনো উড়তে দেখেছে? জ্যোৎস্নারাতে জোনাকি বসতে দেখেছে?

'এই মেয়ে তুমি শাড়ি পরেছ কেন? কেমন বুড়ি বুড়ি লাগছে। মা পরে জিন্স, মেয়ে পরে শাড়ি এত খ্যাত হইসে মেয়েটা!' শাড়ি পরা একটি অপরাধের নাম। একটি লজ্জার নাম। কারণ ছাড়া শাড়ি পরা যেন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 'কেন পর এসব? পেট দেখা যায়! পিঠ বের হয়ে থাকে! কী নোংরা রুচি! সেফটি পিন লাগা!' কেন পরি শাড়ি? কারণ শাড়ি পরলে নিজেকে নিরাপদ লাগে। নিজের শরীরকে ভালো লাগে। শাড়ি শুধু পোশাক নয়, দেহের লজ্জাও নিবারণ করে। এজন্য পরি শাড়ি। নিজের দেহকে আর সমাজের দশজনের থেকে লুকানোর মানসিক চাপ নিতে হয় না। কোনো কাটাকাটি নেই, কোনো অতিরঞ্জনতা নেই, কোনো আরটিকুলেশন নেই। কারো মর্জিমতো শাড়ি চলে না, এটাই পছন্দের একমাত্র কারণ। কাপড়কে ছিড়ে কেঁটে, সুতার শেকল পড়ানো হয় না, সেখানে কোনো সাইজ মার্ক নেই, সেখানে কোনো ধনী-গরিব নেই। সব শাড়ির দৈর্ঘ্য এক, মাহাত্ম্য এক, জামদানি আর সুতি উভয়ই এক আলমাড়ির নিচে থাকে। ঠিক যেন প্রজাপতির পাখার রংয়ের মতো। সেখানে একটি স্বাধীনতা আছে, নিজস্বতা আছে, একটি 'কাপড়' হিসেবে তার পরিচয় আছে।

সর্বোপরি, এটি বিশুদ্ধতা আছে। এই আত্মপরিচয়, আত্মবিশ্বাস, আত্মপ্রেমই চাই আমরা। তবে শাড়ি নিয়ে কেন এত অবহেলা, উদাসীনতা, সমালোচনা হয়। পরেই দেখ না একটি জামদানি! ইচ্ছে হবে আকাশে আঁচলটি উড়িয়ে দিতে, বৃষ্টির পানির সঙ্গে শাড়িকে একাত্ম হতে! তবে পরিবারের শেষ শাড়ি পরা প্রজন্মের সঙ্গে ইচ্ছেগুলোও একদিন কবরে চলে যাবে। স্মৃতির সঙ্গে শাড়িতেও শ্যাওলা পড়ে যাবে। বস্নাইজ, পেটিকোটে ধুলার অংশ হয়ে গেছে। শাড়ির রং, নকশা, উদ্দীপনা, সংস্কৃতি সবটাই কেবল 'স্মৃতিটুকুই'!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে