রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

প্রভাব পড়েনি ওদের হাসিতে!

আজাহারুল ইসলাম
  ২৭ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
প্রভাব পড়েনি ওদের হাসিতে!

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উত্তাল-স্থবির সারাদেশ। চলছে কারফিউ। সীমিত আকারে যানবাহন চললেও আতঙ্ক কাটেনি জনমনে। এদিকে বন্ধ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম ও আবাসিক হলগুলো। তবে প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে। ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী একটি জায়গায় থাকছি আমরা কয়েকজন। দুপুরের আগে হাঁটতে হাঁটতে ক্যাম্পাসের দিকে আসছিলাম। হঠাৎই চোখে পড়ল ব্যতিক্রম একটি দোকানের।

থমকে গেলাম। দেখলাম দোকান চালাচ্ছে তিন ছোট্ট শিশু। রাস্তার পাশে একটি জায়গা নির্ধারণ করে খুলে বসেছে দোকান। দেখতে দোকানের মতো হলেও আদতে তা দোকান নয়। গাছের পাতার টাকা, বালু দিয়ে চাল, মশলা, ইট দিয়ে তরকারি, পানি দিয়ে তেল এমন নানান জিনিস বানিয়েছে তারা। এছাড়া খেলনার নানা সামগ্রী আছে তাদের কাছে। সাজিয়েছে দোকানের মতোই। বানিয়েছে চুলাও। সেই দোকানে খেলায় মেতেছে তিন শিশু। হাসছে প্রাণখুলে। তাদের হাসিতে চলমান অস্থিরতার প্রভাব পড়েনি।

তাদের সঙ্গে গল্প করতে গিয়ে জানতে পারলাম তাদের নাম নাঈম, হাফিজা ও সামিহা। নাঈমকে বললাম, 'একটা ছবি তুলি?' ফিক করে হেসে দিয়ে বলল, 'ভালো করে তোলেন'। সঙ্গে সাদা ফিকফিকে ক'পাটি দাঁত বের করে দিল। তবে হাফিজা আর সামিহাকে হাসাতে বেশ কষ্ট হলো। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিনজনের মধ্যে নাঈম বড়। বয়স সবে ১২ বছর। গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর। বাবা হারিয়েছে অনেক আগেই। চার ভাইবোনের সংসার হলেও নাঈম থাকে বাড়ি থেকে অনেক দূরে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন একটি দোকানে কাজ করে। সংসারের দুরবস্থায় মা পড়াশোনা করাতে পারেননি। তবে পড়ার তীব্র ইচ্ছা তারও। হাল ধরতে চায় দুখিনি মায়ের।

এদিকে হাফিজা আর সামিহা দুই বোন। তাদের বয়স হবে যথাক্রমে আট আর তিন। নাঈম যে দোকানে কাজ করে তাদের দোকান মালিকের মেয়েই তারা। হাফিজা ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী শেখপাড়ার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। হাফিজা কোন ক্লাসে পড়ে জানতে চাইতেই পাশে থেকে ছোট্ট সামিহা বলে উঠে, 'আমি ছোট্ট, এখনো স্কুলে যাই না।' একই সঙ্গে জানাল, 'আমি খিচুরি রান্না করছি।' খিচুরিতে দেখা গেল একটি বাটিতে সিমেন্টের গুঁড়াকে খিচুরি বানিয়েছে সে।

চলমান স্থবির অবস্থার কারণে দোকান বন্ধ। স্কুলও বন্ধ। তাই পড়াশোনা ও কাজ নেই তাদের। যার ফলে খেলায় মেতেছে রাস্তার পাশে। হাসিখুসি তিন শিশুর সঙ্গে নানান বিষয়ে গল্প করলাম অনেকক্ষণ। কিছু সময়ের জন্য নিজেও হারিয়ে গেলাম ছেলেবেলায়। রাস্তার পথচারীরাও অনেকেই তাদের দিকে অপলোক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল। কেউ ছবি তুলছিল, কেউ আবার সেলফি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে