সবে সকাল, আকাশে ঘন কালো মেঘ, যে কোনো সময় নামবে বৃষ্টি। ভাবতে না
ভাবতেই রাস্তায় বেরোনো মাত্রই শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই রওনা দিলাম ক্যাম্পাসের উদ্দেশে। হাতে সময় অল্প, একটু বাদে ছাড়বে গাড়ি।
উদ্দেশ্য কমিউনিটি রেডিও নলতা, সাতক্ষীরা। একটু ভিজে ক্যাম্পাসে পৌঁছে
দেখি সবাই চলে এসেছে। নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড
টেকনোলজি খুলনার সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষক এমএম
মুজাহিদ উদ্দীন স্যারের উদ্যোগে 'মিডিয়া এথিক্স অ্যান্ড লস' কোর্সের
অধীনে এই যাত্রার আয়োজন। আমাদের রেডিও স্টেশন ভিজিটের মূল উদ্দেশ্য হলো-কমিউনিটি রেডিও সেন্টার সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করা।
সকাল ৯টায় ক্যাম্পাস থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হল সাতক্ষীরার উদ্দেশে। আমাদের সঙ্গে আরও ছিলেন সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের প্রধান
মুস্তাফিজুর রহমান রনি ও প্রভাষক মতিউর রহমান স্যার। বৃষ্টির ভেতর গাড়ির জানালা দিয়ে সবুজ গাছপালা, মাঠ, খাল-বিল দেখতে দেখতে বেলা সাড়ে ১১টায় আমরা পৌঁছালাম আমাদের গন্তব্যস্থলে। বৃষ্টিতে ভিজে এই বাংলার প্রকৃতি যেন দ্বিগুণ সৌন্দর্য লাভ করেছে। সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নে অবস্থিত কমিউনিটি রেডিও 'রেডিও নলতা'। রেডিও নলতা তে প্রবেশ করা মাত্রই রেডিও নলতার স্টেশন ম্যানেজার সেলিম শাহরিয়ার আমাদের সাদরে আমন্ত্রণ জানালেন এবং সবাইকে রেডিও নলতার হলরুমে বসার ব্যবস্থা করে দিলেন। আমাদের জন্য মৌসুমী ফলেরও ব্যবস্থা করা হলো। এরপর স্টেশন ম্যানেজার সেলিম শাহরিয়ারের মুখে আমরা শুনলাম রেডিও নলতার ইতিহাস, নানা প্রতিবন্ধকতা এবং সাফল্যময় অভিজ্ঞতার গল্প। সেখানে আমাদের সৌভাগ্য হলো রেডিও নলতার একজন সঙ্গীত শিল্পীর সুমধুর কণ্ঠে গান শোনার। কথা এবং গান শুনতে শুনতে কখন দুপুর ২টা বেজে গেল, আমরা বুঝতেই পারলাম না। এরপর আমরা সবাই রেডিও নলতার স্টুডিও ঘুরে দেখলাম। স্টুডিওতে সবাই অনেক অনেক ছবি তুললো। শুধু ছবি তোলা নয়, একজন সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষার্থীর জন্য একটি স্টুডিও, অনুপ্রেরণার জায়গাও বটে। দুপুর গড়াতে না গড়াতেই সবার পেট ক্ষুদায় চো চো করতে শুরু করল। আমরা আর দেরি না করে স্থানীয় একটি খাবার হোটেল
থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। এরপর আমরা রওনা হলাম নলতার খান বাহাদুর আহসান উলস্নাহর মাজার শরিফের উদ্দেশে। কিছুক্ষণ বাদেই আমরা মাজারে পৌঁছালাম। মাজারের সুন্দর পরিবেশ এবং নানা ধরনের ফুল গাছের সমারোহ ছিল মনোমুগ্ধকর। আমরা কিছুক্ষণ মাজারের চারদিক ঘুরে দেখলাম। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য হলো- সুন্দরবনের পাশেই মিনি সুন্দরবন নামে খ্যাত দেবহাটার রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র। আমরা বিকাল ৪টায় সেখানে পৌঁছালাম। অতপর আমরা টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করলাম। চারদিকে কি এক মনোরম স্নিগ্ধ পরিবেশ, সবুজের সমারোহ, নদী, আকাশ, বাতাস যাকে এক কথায় বলা যায় প্রাকৃতিক নৈসর্গিক পরিবেশ। সেখানে আমাদের দেখা মিলল ইছামতি নদীর, নদীর এপারে বাংলাদেশ ওপারে ভারত। এই নদীতে আমরা নৌকা ভ্রমণের সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। দ্রম্নতই দুটি নৌকা নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম নৌকা ভ্রমণে। যেটা ছিল এই ভ্রমণের সব থেকে আনন্দঘন মুহূর্ত। নৌকা ভ্রমণ শেষ করতে করতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। মন চাইছিল আরও কিছুক্ষণ এই নদী উপভোগ করি। কিন্তু খুলনাতে তো ফেরাই লাগবে। মন ভারি করে আমরা আবার রওনা হলাম সরাসরি খুলনার উদ্দেশে। ফেরার পথে ভাবতে লাগলাম কত আনন্দময় ছিল দিনটি, কীভাবে একটি দিন পার হয়ে গেল যেন বুঝতেই পারলাম না। স্মৃতির পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে দিনটি।