রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের ভাবনায় কোটা সংস্কার আন্দোলন

বর্তমান সময়ে তুমুল আলোচিত বিষয় কোটা আন্দোলন। কোটাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর শাহবাগসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে প্রতিবাদ মিছিল। ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনবর্হালের দাবিতে অনড় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রছাত্রীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি চাকরির বাজারে কোনো বৈষম্য না রেখে মেধার মূল্যায়ন ঘটিয়ে দেশের সুষম উন্নয়ন সুনিশ্চিত করা। কোঠা আন্দোলন রূপ নিয়েছে বাংলা বস্নকেডে। কোটাব্যবস্থায় চিন্তিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনাগুলো একত্রে তুলে ধরেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদা টুম্পা
  ১৩ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
শিক্ষার্থীদের ভাবনায় কোটা সংস্কার আন্দোলন

কোটা সংস্কার করা জরুরি

মোহাম্মদ আব্দুর রহমান

শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

একটি দেশে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা থাকতে পারে, কিন্তু সেটা চিরস্থায়ী নয়। অনগ্রসর ও উপজাতি কোটা থাকলেও একটা সময় এরাও অগ্রসর হয়ে যাবে, সুতরাং তখন কোটা সংস্কার করা আরও জরুরি হয়ে পড়বে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ৫৩ বছর পেরিয়ে গেছে। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের তৃতীয় বা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা অন্যান্য চাকরি প্রার্থীদের জন্য বৈষম্যমূলক বলে আমি মনে করি। সংবিধানের আলোকে সবারই সুযোগের বা চাকরির সমান অধিকার রয়েছে, এক্ষেত্রে বৈষম্য কাম্য নয়। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে লাখ লাখ শিক্ষিত বেকার রয়েছে, সেখানে প্রথম শ্রেণির চাকরির ক্ষেত্রে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহাল বর্তমানে গ্রহণযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে মেধার অবমূল্যায়ন করা হয়। তাই অনগ্রসর ও প্রতিবন্ধীদের জন্য নূ্যনতম পর্যায়ে কোটা নিয়ে এসে সব গ্রেডে কোটা সংস্কার করে সংসদে আইন পাস করা উচিত বলে আমি মনে করি। তাহলেই সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সৎ, যোগ্য ও মেধাবীরা স্থান পাবে ও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।

অদৃশ্য কোটার কী হবে?

মোহাম্মদ ইয়াছিন ইসলাম

শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি সরকারি চাকরি তার সারাজীবনের সাধনার ফল। যৌবনের উদীপ্ত সময়টা তারা পার করে লাইব্রেরি এবং পড়ার টেবিলে। কিন্তু চাকরিপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে তারা মুখোমুখি হন এক বিশাল বৈষম্যের। ৫৬% কোটায় মেধাবীরা হচ্ছে চরম বৈষম্যের শিকার। কোটা সংস্কার আন্দোলনে এখন উত্তপ্ত দেশের রাজপথ। কিন্তু এই ৫৬% কোটা তুলে নিলে আদৌ কি সমস্যার সমাধান হবে? আমার মতে সেটা একদমই মনে হয় না। কেননা আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ। কোটার বাইরে রয়েছে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, প্রশ্ন ফাঁস, রাজনৈতিক প্রভাব আর ঘুষ তো এখন এক অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। দেশের বিপুল সংখ্যক বেকার যুবকদের সাথে প্রহসন হচ্ছে নিয়োগ প্রক্রিয়ার দুর্নীতি। এমনিতেই কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ তার ওপরে রয়েছে এসব অনারোগ্য প্রতিবন্ধকতা। সংস্কার প্রয়োজন পুরো ব্যবস্থায়। অবশ্যই আমাদের তরুণ প্রজন্মের প্রত্যাশা বৈষম্যহীন একটি স্বচ্ছ এবং পূর্ণাঙ্গ নিয়োগ প্রক্রিয়া। আমি চাই বৈষম্যমূলক ৫৬% কোটার সঠিক সংস্কার। তবে অদৃশ্য যে কোটা রয়েছে সেগুলোর সংস্কার কে করবে বা আদৌ কি এই অদৃশ্য কোটার সংস্কার হবে? এই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।

কোটা নামক হুইলচেয়ার

মোনালিসা মুজিব মিম

শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আমরা কি সুস্থ অবস্থায় কখনও হুইলচেয়ারে করে ঘুরতে পছন্দ করি? কেন করি না? কারণ আমাদের নিজেদের হাঁটার ক্ষমতা আছে। হুইলচেয়ারে করে চললে শারীরিক কষ্ট কিছুটা কম হলেও আমরা সেটার আশ্রয় নেই না। কেন নেই না? মানুষ অনেক কিছু জানতে চাইবে। কিছু জায়গায় এই চেয়ার নিয়ে আটকে যেতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, পা ঠিক থাকতে হুইলচেয়ার কেন? পা ঠিক থাকতে হুইলচেয়ারে করে চলাচল করা হাস্যকর এবং অযৌক্তিক ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই না। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের জন্য কোটা জিনিসটাও ওই হুইলচেয়ারের মতোই। যে দেশে এখনো মানুষ কর্মসংস্থানের অভাবে বৃদ্ধ পিতামাতার জন্য তিন বেলা খাবার সুনিশ্চিত করতে পারছে না, সেই দেশে পূর্ব-পুরুষের কিংবা অন্য কিছুর নাম ভাঙিয়ে আর কত? বিশেষ সুবিধা শুধুমাত্র বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের বেলায়ই ঠিক আছে। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের জন্য কোটা না। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের জন্য পরিশ্রম; পরিশ্রম করে মেধা কাজে লাগিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখতে হবে। শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী ব্যতীত আর কোনো কোটার প্রয়োজনীয়তা নেই। মুক্তিযোদ্ধা কোটা, নারী কোটা, পোষ্য কোটা, উপজাতি কোটাসহ সব কোটা কেবলমাত্র একটা বৈষম্যের নামান্তর ছাড়া কিছু নয়।

কোটা আতঙ্ক চাই না

সামিয়া জামান

শিক্ষার্থী, আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

'কোটা'- শব্দটিই এখন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে ছাত্রসমাজের কাছে। বর্তমানে শিক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির ক্ষেত্রে যেভাবে কোটা ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা দিন দিন নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে। কারণ যেখানে সাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের কোনো মূল্যায়ন করা হয় না, সেখানে সাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের মেধায় দেশের অগ্রগতি সাধনে এগিয়ে আসতে পারছে না। কোটার সাথে মেধার একাত্মতার ফলে দেশ থেকে বহু মেধা পাড়ি জমাবে মেধার কদর করার স্থানে, এতে দেশেরই ক্ষতি। কোটা দেশের পিছয়ে পড়া মানুষের অগ্রগামী হওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো এবং সেখান থেকে যদি দেশের সাধারণ মেধার অর্ধেকের বেশি কোটাধারী হয় তাহলে দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক যে ভয়ংকররূপ ধারণ করবে, তা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। দেশকে বাঁচাতে অবশ্যই মেধাবীদের কদর করা উচিত। আমরা কোঠা আতঙ্ক চাই না।

কোটা বাতিল সমাধান নয়, সংস্কার জরুরি

আকিজ মাহমুদ

শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

২০১৮ সালে শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের আন্দোলন শুরু করলে প্রধানমন্ত্রী আশ্চর্যজনকভাবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরি থেকে পুরো কোটা ব্যবস্থাই তুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন। সম্প্রতি মহামান্য হাইকোর্ট কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে করা একটি রিটে কোটা পুনর্বহালের পক্ষে রায় দেন। এই রায়কে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুনরায় অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়ায় দেশব্যাপী কোটা সংস্কার আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের এই দাবি মোটেই অযৌক্তিক নয়। মূলত সরকারি সব চাকরিতে এখনো বৈষম্যমূলক কোটার প্রচলন রয়েছে। ক্ষেত্রেবিশেষ এর পরিমাণ ৫৬ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ মাত্র ৪৪ শতাংশের। স্বাভাবিক অর্থেই এটা অসঙ্গতিপূর্ণ। কোটার এই আন্দোলনটা কোনোভাবেই নির্দিষ্ট কোনো কোটাধারীদের বিপক্ষে হচ্ছে না। সংস্কার মূলত ন্যায্যতার ভিত্তিতে হোক এটাই সবার চাওয়া। পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর জন্য এর প্রয়োজনীয়তা এখনো আছে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে এটি বড়জোর ছেলে পর্যন্ত গড়াতে পারে। সরকারি চাকরিতে সব মিলিয়ে কোটা কোনোভাবেই ১০ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। এমতাবস্থায় শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরি না বরং সব সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থায় সংস্কার রাষ্ট্রের জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে।

কোটা পুনবর্হালের দাবিতে অনড় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রছাত্রীরা

মাহমুদা টুম্পা

শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

বর্তমান সময়ে তুমুল আলোচিত বিষয় কোটা আন্দোলন। কোটাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর শাহবাগসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে প্রতিবাদ মিছিল। ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনবর্হালের দাবিতে অনড় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রছাত্রীরা।

শিক্ষার্থীদের দাবি চাকরির বাজারে কোনো বৈষম্য না রেখে মেধার মূল্যায়ন ঘটিয়ে দেশের সুষম উন্নয়ন সুনিশ্চিত করা। কোঠা আন্দোলন রূপ নিয়েছে বাংলা বস্নকেডে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে