আমের দেশে ঘুরতে যাওয়া

প্রকাশ | ০৬ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

আবদুলস্নাহ আল মামুন
_

প্রতি বছর ঈদ আসলে কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে। এবার ঈদেও তেমন হল। ঘুরতে যাওয়ার জন্য আমাদের একটা গ্রম্নপ আছে। এই গ্রম্নপটাকে পাহাড় খুব টানে। মিরসরাই-সীতাকুন্ডু রেঞ্জের পাহাড়গুলো লক্ষ্ণীপুর থেকে কাছে হওয়াতে এগুলোর প্রতি আমাদের আকর্ষণ থাকে। ঈদের তৃতীয় দিন নাপিত্তাছড়া আর ছাগলকান্দা ঝর্ণায় ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো। কিন্তু ঈদের দ্বিতীয় দিন কলেজে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা পাওয়াতে আমার যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। পা ভালো হতে দুইদিন লাগল। ততক্ষণে আমার পাবনা আসার ঘণ্টা বেজে গেল। পাবনায় এসে ভাবতে লাগলাম আমার কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাওয়া উচিত, ক্যাম্পাস খুললে আর সময় পাওয়া যাবে না। যেহেতু আমের মৌসুম চলছে তাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঘুরে আসা যায় আর এই জেলাতে আগে কখনো না যাওয়াতে নতুন একটা জেলা ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও হয়ে যাবে। পাবনা থেকে সরাসরি ট্রেন আছে, যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ। জায়গাতো ঠিক হয়ে গেল এবার কাকে সাথে নিয়ে যাবো! একা একা ভ্রমণ করা একটু বোরিং কাজ। দুই তিনজনকে যাওয়ার জন্য বললাম, কেউই যাবে না। পরে নগর ও উন্নয়ন পরিকল্পনা বিভাগের ছোট ভাই শাহরিয়ার নিলয়কে বললাম ও রাজি হয়ে গেল। পাবনা রেল স্টেশন থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হয়ে গেল। ৪০ মিনিট বিলম্বে ট্রেন এলে সকাল ৯টায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেল স্টেশনে পৌঁছলাম দুপুর ১টায়। দুপুর ২টায় আমরা পৌঁছলাম শিবগঞ্জে। শিবগঞ্জ ইতিহাসসমৃদ্ধ একটা জায়গা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের অধিকাংশ ঐতিহাসিক স্থাপনা এই শিবগঞ্জে। আমাদের আসার কথা বন্ধু নাবিল মাহমুদ এবং ক্যাম্পাসের সাংবাদিক যুবায়ের আহমেদকে জানিয়ে রেখেছিলাম। দুপুরে আমরা সাংবাদিক যুবায়ের আহমেদের বাসায় দাওয়াত নিলাম। যুবায়েরদের বাসায় যাওয়ার পথে চারদিকে আমের বাগানে আম দেখতে পেয়ে আমি আর নিলয় আপস্নুত হয়ে উঠতে লাগলাম। রাস্তার দুই ধারে সারি সারি আম গাছ আর সেগুলোতে আম ঝুলে আছে। এমন দৃশ্য এই জীবনে প্রথম দেখা। উত্তেজনাটা একটু বেশি। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর নাবিল এলো। চারজন মিলে প্রথমে কানসার্ট আমের বাজারে গেলাম। দুপুরের পর থেকে ওখানে পাকা আমের বাজার বসে। কেউ আম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কেউ আম বিক্রি করতে যাচ্ছে। সবাই আম নিয়ে ব্যস্ত। বাজারের পাশেই কানসার্ট জমিদার বাড়ির অবস্থান। এককালের জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ ছাড়া এখন আর কিছুই নেই। কেউ দেখলে একে জমিদার বাড়ি বলবে না। এটা দেখার পর আমরা শিবগঞ্জের আদি চমচমের খোঁজে বের হলাম। নাবিল আমাদের আদি চমচমের দোকানে নিয়ে গেল। বিকেলে নাবিলদের বাসায় গেলাম, সেখানেই আমরা রাতযাপন করব। বাসায় একটু বিশ্রাম নেওয়ার পর আমরা চলে গেলাম নাবিলদের আম বাগানে। অনেকক্ষণ ধরে মন চটপট করছে কখন আম বাগানে গিয়ে ঢুকবো। ছোট ছোট গাছে আম ঝুলছে। পাকা হলে পেড়ে নিয়ে ইচ্ছামত খাও। জীবনে এমন অভিজ্ঞতা প্রথম। আমের বাগানে এসে যত ইচ্ছা খাও, কেউ কিছু বলবে না। পরের দিন ভোরে আমরা আবার আম বাগানে গেলাম। সকালের নরম হাওয়া আর আম বাগানে পাখির কিচিরমিচির। মন ভুলানো এক পরিবেশ। পাকা আম খুঁজতে লাগলাম। একটার পর একটা খাচ্ছি। তিনটা আম্রপালি আর দুইটা ল্যাংড়া খাওয়ার পর পেটে জায়গা শেষ। সকালের খাবার শেষ করে আমরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো দেখতে বের হলাম। কানসার্ট বাজারে আবার আম দেখতে গেলাম। বিশাল এক আম বাজার, যেটা দেশের সবচেয়ে বড় আমের বাজার। সারাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা এখান থেকে আম কিনতে আসেন। ক্রেতা আর বিক্রেতার ভিড়ে পা পেলা বড় দায়। এখান থেকে আমরা চলে গেলাম সোনা মসজিদ স্থল বন্দরে। ভারতীয় ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকছে আর বাংলাদেশের ট্রাক ভারতে পণ্য নিয়ে যাচ্ছে; এই দৃশ্য প্রথম দেখা। এই পাশেও বাংলা ভাষাভাষী ঐ পাশেও অথচ একটা কাটা তারের বেড়া কীভাবে আমাদেরকে পৃথক করে রেখেছে! সোনা মসজিদ স্থল বন্দর দেখার পর আমরা এক এক করে দারাস বাড়ি, তোহাখানা কমপেস্নক্স এবং ছোট সোনা মসজিদ ঘুরে শেষ করলাম। এই স্থাপনাগুলোর সাথে বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য জড়িত। অত্যন্ত সুন্দর কারুকার্যে এসব স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। এই স্থাপনাগুলো দেখতে প্রতিদিন আমাদের মতো অসংখ্য মানুষের পদচারণা ঘটে। দুপুর ৩টা ৩০ মিনিটে আমাদের ট্রেন। সব দেখা শেষ করে দুপুর একটায় নাবিলদের বাসায় পৌঁছলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে ট্রেন ধরার জন্য রওনা দিলাম। এরই মধ্যে আমাদের দুইদিনের ভ্রমণের সমাপ্তি। নাবিল আর যুবায়েরদের আতিথেয়তার কথা মনে থাকবে অনেক দিন। গ্রামের সহজ সরল ভ্যান ড্রাইভারদের কথাও মনে থাকবে অনেক দিন।