রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

সহশিক্ষা কার্যক্রমে অনন্য ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ

মো. তানভির আহমেদ
  ২৯ জুন ২০২৪, ০০:০০
সহশিক্ষা কার্যক্রমে অনন্য ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) নতুন একটি বিভাগ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বা উন্নয়ন অধ্যয়ন। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট তো বটেই, দেশের বাস্তবতায়ও অন্যান্য ডিসিপিস্ননের তুলনায় নবীন একটি ডিপার্টমেন্ট হিসেবে দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এর যাত্রা শুরু হয়েছে। উত্তরের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হাবিপ্রবিতে ২০১৯ সালে ৩৯ জন শিক্ষার্থী ও ৫ জন শিক্ষক নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বিভাগটিতে ৫টি ব্যাচ চলমান আছে।

বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও শিক্ষকদের দৃঢ়চেতা মনোভাব ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বিভাগটি অতি অল্প সময়ের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা চমকপ্রদ কাজের মাধ্যমে সাড়া ফেলে। এর মাধ্যমে তারা কারিকুলাম ও এর বাইরে নানান বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করছে। প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এনজিও অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোর্সের আওতায় ফান্ড রেইজিংয়ের মাধ্যমে চাঁদের হাসি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করে। যেখানে প্রায় ৬০ জন শিশুকে শিক্ষাসামগ্রী ও নতুন জামা কিনে দেওয়া হয়। পুরো কাজটি শিক্ষার্থীরা নিজস্ব দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনায় সম্পাদন করে। এছাড়াও মধুমাসে ফল উৎসব, মাহবুব স্যারের ফিল্ড ভিজিট, জিরো কার্বন ফুট প্রিন্ট প্রজেক্ট, সিরিজ 'ডেভ টক' প্রভৃতি কাজে শিক্ষার্থীরা নিজেদের সম্পৃক্ত করে কারিকুলাম ও কো-কারিকুলাম কার্যক্রমে নিজেদের এগিয়ে নিচ্ছে নিয়মিতই। শিক্ষক জুয়েল আহমেদ সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনলাইন লার্নিং পস্ন্যাটফর্ম কোর্সেও এডেক্সে বিনামূল্যে সার্টিফিকেটসহ কোর্স করার সুযোগ পান, যা করোনাকালীন ঘরবন্দি সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

পঠিত বিষয় ও কনটেন্ট তাদের বাস্তবিক জীবনে কাজে আসছে বহুগুণে। ছাত্ররাজনীতি ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত হয়ে তা প্রয়োগ করতে পারছেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা। কালের পরিক্রমায় এখন সেসব ক্লাবে লিডিং পর্যায়ে আছেন অনেকেই। শুধু প্রথম ব্যাচ থেকেই ৪ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪টি ক্লাবকে লিড দিয়ে যাচ্ছেন সামনে থেকে। তারা হলেন- হাবিপ্রবি গবেষণা সংসদের সভাপতি উম্মে ইলমা ফেরদৌস, সেইভ ইয়ুথ বাংলাদেশের কো-প্রেসিডেন্ট নুসরাত জাহান জেসি, হাবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মো. তানভির আহমেদ, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের সভাপতি তুষার চন্দ্র রায়। তারা সবাই হাবিপ্রবি ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী।

পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম ও বিভাগ নিয়ে হাবিপ্রবি গবেষণা সংসদের সভাপতি উম্মে ইলমা ফেরদৌস বলেন, এই বিভাগে পড়াশোনার বিষয়বস্তু আমার বরাবরই ভীষণ ভালো লাগে। আমি সমাজকে, সমাজের মানুষকে, বিভিন্ন সামাজিক সমস্যাগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে শিখি। সমাজ, অর্থনীতি, রাষ্ট্র, উন্নয়ন এই সব কিছুতে যে গভীর আন্তঃসম্পর্ক বিদ্যমান সেটা আমি আমার পড়াশোনা থেকে জানতে পেরেছি। এ জন্যই পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে দক্ষভাবে গড়ে তুলতে এবং সমাজের উদ্দেশে কাজ করে যেতে আমি সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোতে অংশগ্রহণ করেছি।

বর্তমানে আমি হাবিপ্রবি গবেষণা সংসদে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমার এই সংগঠনের উদ্দেশ্য হলো স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্র্থীদের গবেষণায় আগ্রহী করে তোলা, যাতে তারা সমাজের যেকোনো সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে পারে তাদের গবেষণালব্ধ ফলাফল দিয়ে।

সেইভ ইয়ুথের কো-প্রেসিডেন্ট নুসরাত জাহান জেসি বলেন, 'ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেইভ ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে আমি মনে করি। কেননা আমরা প্রত্যেক সেমিস্টারে যে কোর্সগুলো করে থাকি সে বিষয়গুলো নিয়েই সেইভে আরও বিস্তর আলোচনা হয়। যেমন- ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটস, সোশ্যাল ভ্যালু, নরমস, লিডারশিপ, কমিউনিকেশন, প্রবেস্নম সলভিং, কেস স্টাডি, দলগত কর্মক্ষমতা ইত্যাদি।

হাবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মো. তানভির আহমেদ বলেন, ক্লাসে পঠিত বিষয়গুলো যখন ব্যবহারিক জীবনে লাগে, তখন ভীষণ আনন্দ হয়। বিষয়টি আমার স্যারদের সঙ্গেও শেয়ার করি মাঝেমধ্যে। তাদের অনুপ্রেরণায় পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখির প্রতি আগ্রহের কারণে সাংবাদিক সমিতিতে আসা। এক্ষেত্রে অগ্রজ মিশকাত ভাইসহ শ্রদ্ধেয় সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। ছাত্রজীবনেই প্রফেশনাল লাইফের ফিল পাওয়া যায় ক্লাব করলে। পাশাপাশি অফিসের হাতেখড়িও হয় এখানে। বর্তমানে আমি যে সংগঠনে আছি, এখানকার কাজগুলো বেশ চ্যালেঞ্জিং। প্রতিনিয়ত শিখছি ও পরিণত হচ্ছি।

শুধু তারা নন, তাদের মতো আরও অনেকে শুধু প্রথম ব্যাচ থেকেই সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন পস্ন্যাটফর্মে ভালো অবস্থানে থেকে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তারা বলছেন, সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোতে যুক্ত হলে তাদের দক্ষতাগুলো যেমন পরিস্ফুটিত হবে, তেমনি দুর্বলতাগুলোও চিহ্নিত করে তার ওপর কাজ করা যাবে। কর্মক্ষেত্রে এসব ক্লাব ও সাংগঠনিক সময় ব্যয় তাদের এগিয়ে রাখবে অন্যদের থেকে। সেক্ষেত্রে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে পড়াশোনার পাশাপাশি সমাজ নিয়ে শিখতে ও জানতে সহশিক্ষা কার্যক্রম খুব ভালো মাধ্যম বলে মত তাদের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে