জীবনের গন্তব্য আবিষ্কার করতে হাজারও শিক্ষার্থীরা আসে অজানা এক প্রাঙ্গণে। বুকভরা স্বপ্ন আর পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিতে নিজেকে প্রস্তুত করে উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে। জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করতে হয় চাকরির ভাবনা নিয়ে। আর গ্র্যাজুয়েশন শেষে চাকরির প্রতিযোগিতায় নামতে হয় তাদের। কেউ পায় খুব দ্রম্নত আবার কাউকে ছুটতে হয় বছরের পর বছর। এ যেন এক সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার মতো। তাই শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাব (বাউসিসি) আয়োজন করেছে ন্যাশনাল ক্যারিয়ার কার্নিভাল। দুদিনব্যাপী এই কার্নিভালের নানা আয়োজন সম্পর্কে তুলে ধরেছেন রায়হান আবিদ
প্রথম দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে প্রায় এক হাজার গ্র্যাজুয়েট ও নন-গ্র্যাজুয়েট নিয়ে ক্যারিয়ার সেমিনার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাকৃবির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আব্দুল আউয়াল। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় (এফএও) ক্যারিয়ার বিষয়ক বক্তব্য রাখেন এফএওর বাংলাদেশের সিনিয়র কারিগরি উপদেষ্টা সাসো মার্টিনভ। এ ছাড়া গবেষণা ও বিদেশে উচ্চশিক্ষা, সরকারি চাকরি, কর্পোরেট চাকরি, নেতৃত্ব এবং গুণগতমান উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গবেষণা ও বিদেশে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক সেশনে শিক্ষার্থীদের দিকনিদের্শনা দেন এফএও এর বাংলাদেশের সহকারী প্রতিনিধি নূর আহমেদ খন্দকার। সরকারি চাকরি বিষয়ক সেশনে বক্তব্য রাখেন শানিরুল ইসলাম শাওন। করপোরেট চাকরি বিষয়ক সেশনে শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনা দেন এসিআই এনিমেল হেলথের হেড অব বিজনেস মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন ও ইনজিনিয়াস ক্রপ সাইন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম খালেদ।
এ ছাড়া প্রতিযোগিতামূলক গেম সেশন ছিল, যার মধ্যে ১০ জনকে লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করেন তারা। সেখানে ১০ জন প্রতিযোগীকেই পুরস্কৃত করা হয়। দ্বিতীয় দিনে ৪০টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি মেলায় অংশগ্রহণ করে। প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টলগুলোতে বাকৃবিসহ প্রায় ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট ও শিক্ষার্থীদের ভিড় দেখা যায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা চলে চাকরির জন্য আবেদন ও গ্র্যাজুয়েটদের পরিচয়পত্র জমা। প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা তাদের কোম্পানির কোন পোস্টে চাকরির সুযোগ রয়েছে, সেই বিষয়ে বর্ণনা করেছেন। তারা কোন বিভাগের গ্র্যাজুয়েট নিতে ইচ্ছুক সেটিরও ধারণা দিচ্ছিলেন।
মেলায় ঢুকতেই সিনজেনটা প্রতিষ্ঠানের স্টল। কৃষিপণ্য এবং কৃষি-সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন সার, কীটনাশক ও বীজ উৎপাদন বিষয়ক প্রতিষ্ঠান সিনজেনটা। সব অনুষদের শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের সুযোগ থাকলেও তাদের প্রাধান্যের তালিকায় ১ম স্থান ছিল কৃষি অনুষদের গ্র্যাজুয়েটদের। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), এসিআই, প্রাণ, স্কয়ার, আড়ং ডেইরি, সিপি বাংলাদেশ, নাবিল গ্রম্নপ, প্যারাগন গ্রম্নপ, ব্র্যাক, ড্যানিশ, আফতাব, নাহার এগ্রো, সিনজেনটা, প্রভিটা গ্রম্নপ, কাজী ফার্মসসহ প্রায় ৪০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান চাকরি মেলায় অংশ নেয়।
চাকরি মেলায় নিবন্ধনের মাধ্যমে কাজী ফার্মস গ্রম্নপে লিখিত এবং পরে মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ ছিল। পোল্ট্রিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তাদের কাছে মূল প্রাধান্য ছিল ভেটেরিনারি এবং পশুপালন স্নাতক সম্পন্নকারীরা। এসিআই মটরস লিমিটেড ও মেটাল কোম্পানিতে প্রাধান্য পেয়েছে কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের স্নাতকধারীরা।
সিপি গ্রম্নপ ও প্যারাগন গ্রম্নপ জীবন বৃত্তান্ত প্রদানের সুযোগ পেয়েছে ভেটেরিনারি ও পশুপালন অনুষদের স্নাতকধারীরা। এ ছাড়া গোল্ডরেজ এসিআই প্রতিষ্ঠানে চাকরির পছন্দের তালিকায় প্রাধান্যের তালিকায় ছিল ভেটেরিনারি, পশুপালন ও মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের স্নাতকধারীদের। প্রাণ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো পিএলসি (বিএটি), নাবিল গ্রম্নপ, এফএও, ব্রাকের স্টলেও ছিল ভিড়। সব অনুষদীয় স্নাতকধারীদের অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্যারাগন গ্রম্নপ, সি.পি. গ্রম্নপ ও প্রাণ বিশেষ করে সেলস ম্যানেজার, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এবং অ্যাকাউন্টেনস ম্যানেজমেন্ট পদগুলোয় সবার অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল।
পাশাপাশি ইংরেজি ভাষাভাষী ছয়টি দেশে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক সহায়ক ও পরামর্শদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে অংশ নিয়েছিল আইডিপি। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই সরাসরি ও অনলাইনে জীবন বৃত্তান্ত জমা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে শিক্ষার্থীরা।