১৬-এর নবযৌবনে প্রিয় পাবিপ্রবি
প্রকাশ | ২২ জুন ২০২৪, ০০:০০
মিকাইল হোসাইন
বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এক পা, দু পা করে আজ ষোলোটি বছর পার করে সতেরোতে পদার্পণ করেছে। এ যেন স্মৃতিময় শৈশবকে পেছনে ফেলে অদম্য যৌবনে পা দেওয়া।
বাংলাদেশ সরকার ২০০১ সালের ১৫ জুলাই 'পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০১' প্রণয়ন করার মাধ্যমে পাবনা জেলার নগরবাড়ী মহাসড়কের উত্তর পাশে গয়েশপুর ধোপাঘাটা নামক স্থানে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর দেশের ২৯তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ৭ম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে। শুরুতে রাজাপুরের টিটিসি ক্যাম্পাসকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে পাবনা শহরের ৫ কিলোমিটার পূর্বদিকে রাজাপুর নামক স্থানে মূল ক্যাম্পাস চালু করা হয়।
২০০৯ সালের ৫ জুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকার্যক্রম উদ্বোধন করেন তৎকালীন পরিকল্পনা মন্ত্রী এ কে খন্দকার, বীরউত্তম। ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রম্নয়ারি মূল ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে আজাদ চৌধুরী।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অনেক চড়াই-উতরাই পার করেই আজ বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে। কোনোমতে চালিয়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ মেরুদন্ড সোজা করে হাঁটতে শিখেছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট ৫টি অনুষদের অধীন ২১টি বিভাগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ১৬ বছরের অবিরাম অগ্রযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে বাহিরের দেশেও সুনাম অর্জন করতে শুরু করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টি সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে অনেকটাই এগিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে সফলও হয়েছেন। ক্যাম্পাসকে মাতিয়ে রাখতে রয়েছে ব্যান্ড দল স্কেচ, অনিরুদ্ধ নাট্যদল, কণ্ঠস্বর আবৃত্তি সংগঠন, বিভিন্নরকম সাহিত্য আড্ডাসহ নানা সাংস্কৃতিক সংগঠন। তবে চলমান মেগা প্রজেক্টের স্থাপনার কাজ শেষ না হওয়ায় এখনো গড়ে উঠতে পারেনি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র ও মিলনায়তন। তাই সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশ্ববিদ্যালয়টি ভালোভাবে মেলে ধরতে পারেনি এখনো।
শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেদের যুক্ত করছেন নানা ধরনের সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে। এখানে প্রতিদিনই চলে বিতর্ক উৎসব, রয়েছে সাংস্কৃতিক সংগঠন, কয়েকটি সংগঠন যেমন হেল্প ও জোনাকির মাধ্যমে পথশিশুদের বিনামূল্যে পাঠদানে যুক্ত,শীতবস্ত্র বিতরণসহ অসহায়দের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকেন। কেউ আবার এখন থেকেই স্বপ্ন দেখেন বড় লেখক হবেন, তাই রয়েছে তরুণ লেখকদের সংগঠন, রয়েছে সাংবাদিকদের সংগঠন পাবিপ্রবি প্রেস ক্লাব, সুযোগ আছে বড় রাজনীতিবিদ হওয়ারও।
বিতর্ক, শুদ্ধাচার, পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এখন পুরো ক্যাম্পাজুড়ে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকরা সক্রিয় বহির্বিশ্বের সব ন্যায়-অন্যায়ের বিরুদ্ধেও, ন্যায়ের প্রতি মৌণ অবস্থান আর অন্যায়ের প্রতি তীব্র প্রতিবাদ করতে তারা কখনো কার্পণ্য করে না। এ ছাড়া পাবনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ইছামতী নদীকে বাঁচাতেও এখানকার ছাত্র-শিক্ষকরা অনেক সক্রিয়।
এখানে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় পিঠা উৎসব, বিভিন্ন অঞ্চলের বাহারি পিঠার চলে দিনব্যাপী প্রদর্শন। রাজশাহী বিভাগের প্রথম ও একমাত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পাবিপ্রবিতে রয়েছে দুটি ছাত্র হল ও দুটি ছাত্রী হল, যদিও ছাত্রছাত্রীদের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল। এ ছাড়া বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসের আরও ৮৩ একর জায়গাসহ আরও নতুন ও যুগোপযোগী বিভাগ খোলার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। ওই আবেদনটি অনুমোদন হলে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট অনেকাংশেই কেটে যাবে। তবে বলতেই হয়, বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে নতুন উদ্যমে ভালোভাবেই চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতেই চোখে পড়বে নান্দনিক স্থাপনাগুলো। এখানে রয়েছে ভাষা আন্দোলনের শহীদের স্মরণে '৫২ ফিট' উচ্চতার দৃষ্টিনন্দন 'শহীদ মিনার' মহান মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদের স্মরণে 'স্বাধীনতা স্তম্ভ', রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, 'জনক জ্যোতির্মেয়', রয়েছে মুক্তজ্ঞান চর্চার জন্য মুক্তমঞ্চ। এ ছাড়া নানা প্রজাতির গাছপালা তো আছেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ছাত্র ও শিক্ষকের চাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় চলুক স্বকীয় মহিমায়, যেখানে থাকবে না কোনো বিভাজন, ছাত্র ও শিক্ষকদের বন্ধন হবে আরও দৃঢ়, থাকবে না কোনো সেশানজট, ছাত্র-শিক্ষক ব্যস্ত সময় পার করবেন গবেষণায়। দিন শেষে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিজ আলোয় আলোকিত হয়ে দু্যতি ছড়াবে দিগ্বিদিক প্রিয় ক্যাম্পাস পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।