বন্ধুত্বের মেলবন্ধন ঈদ পুনর্মিলনী
প্রকাশ | ২২ জুন ২০২৪, ০০:০০
মোহাম্মদ এনামুল হক
বন্ধু মানে সুখ-দুঃখের এক মজবুত ভরসা, চরম বন্ধুর পথে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা। মানুষের জীবনের প্রায় ধাপে ধাপে শত বন্ধুর দেখা মেলে। কেউ স্কুলজীবনের বন্ধু, কেউবা কলেজজীবনের, কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের, কেউবা আবার কর্মজীবনের বন্ধু। এর বাইরেও অনেক বন্ধু রয়েছে। তবে জীবনচলার পথে যে বন্ধুদের দিয়ে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা মনের মধ্যে আত্মস্থ হয়, তারা স্কুলজীবনের বন্ধু। তাদের কখনও ভোলা যায় না। হয়তো ব্যস্ততার কারণে নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হয়ে ওঠে না, কিন্তু তারাই গেঁথে থাকে অন্তরে। বাস্তবে সচরাচর দেখা না মিললেও স্মৃতির পাতায় আজীবন রয়ে যায় অমলিন।
সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার দেশের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তঘেঁষা অপরূপ পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জেলার অন্যতম স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান 'ছালেহাবাদ এম.এস. দাখিল মাদ্রাসা'র দাখিল ব্যাচ-২০১৬ এর শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় অনুষ্ঠিত হয় নবম ঈদ পুনর্মিলনী। তাই সকাল সকাল আমরা সবাই যার যার মতো তৈরি হয়ে রওনা হলাম মাদ্রাসার দিকে। বৃষ্টির জন্য অনেক আশঙ্কা ছিল আমরা ঠিকঠাকভাবে মাদ্রাসায় পৌঁছাতে পারব কিনা আমাদের অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে সফল করতে পারব কিনা এ নিয়ে চিন্তিত ছিলাম সবাই। কিন্তু বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে আমরা সবাই উপস্থিত হয়েছিলাম। গত ১৯ জুন বুধবার সকাল ৯: ৩০ ঘটিকা দিকে সেখানে সবাই একত্রিত হলাম। নির্ধারিত সময়ে আমরা সবাই ছালেহাবাদ এম,এস দাখিল মাদ্রাসায় পৌঁছলাম। সেখানে গিয়ে দেখি উপস্থিত রয়েছেন, নেয়ামুল, আলাল, দুলাল, আলমগীর, রবিউল, কাউসার আলম, ইব্রাহিম, মুহিবসহ আর অনেকেই। এর কিছুক্ষণ পরই মাদ্রাসায় এসে পৌঁছায় মোহাম্মদ এনামুল হক ও হাফিজুর।
পুরনো সব বন্ধু আর সহপাঠীকে পরস্পর জড়িয়ে ধরে হয়েছেন আত্মহারা। হাতে হাত আর বুকে বুক মিলিয়ে করেছেন কুশল বিনিময়। অনেকে আবার প্রিয় সহপাঠীকে পেয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মোবাইল ক্যামেরায় নিজেদের বন্দি করেন নতুন করে। কেউ কেউ খুঁজেছেন মাদ্রাসার মাঠসংলগ্ন সেই বিশাল খেলার মাঠের পাশে থাকা বড় বড় গাছগুলো। কেননা ওই গাছের ছায়াতলে সহপাঠীদের নিয়ে আড্ডা দেওয়ার সব স্মৃতিকথা ভিড় করে আছে যে মনের গভীরে।
মাদ্রাসাজীবনের হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের একসঙ্গে একটি দিনের জন্য ফিরে পাওয়ার এ আয়োজনে দাখিল ব্যাচের ২০১৬ সব সদস্যের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। অনুষ্ঠানের আগের যাবতীয় কাজ সম্পাদনে নানা হইহলস্নার মধ্যে ছিল এক অকল্পনীয় আনন্দ। সবার পরিশ্রম ও প্রতীক্ষার প্রহর শেষে যখন স্বপ্নের এ দিনটি আসে, সবার মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। দিনটি ছিল অন্য সব দিনের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা।
সবার সঙ্গে আড্ডা মাস্তি করতে করতে কখন যে দুপুর হয়ে গেল সেদিকে আমরা খেয়ালই করলাম না। এর ফাঁকেই নেয়ামুল কাচ্চি নিয়ে আসার জন্য পাঠিয়ে দেন রবিউল ও সুলতানকে। আমরা সবাই জোহর নামাজ আদায় করলাম মাদ্রাসা মসজিদে। নামাজ পড়া শেষ হতে হতে দেখি তারা খাবার নিয়ে হাজির। ততক্ষণে আমাদের সঙ্গে আমাদেরই সম্মানিত শিক্ষক মাওলানা হাসান হুজুর (সবাই উনাকে রাজবাড়ী হুজুর হিসেবেই চেনেন) উনার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয় হুজুরের সঙ্গে কথোপকথন বিনিময় করি। তারপর মাদ্রাসা রুমে গিয়ে সবার একত্রিত হয়ে বসে তৃপ্তি নিয়ে পেট ভরে খেয়ে নিলাম।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুদের বাঁধভাঙা উলস্নাসে মেতে ওঠে মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ। দীর্ঘ আড্ডায় হাসি-ঠাট্টার ঘোরাঘুরি ও পাঠচক্রের ইতি টেনে ফিরে যাই যার যার ঠিকানায়। সব বাধা-বিপত্তি পার হয়ে বন্ধু নামে একই ছাতার নিচেই আমরা ফিরে আসি বারবার। এই জীবন চলার পথে কেউ আমরা দীর্ঘস্থায়ী নই। বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে আমরা দূরের বাসিন্দা হয়ে যাব একদিন। দূর সীমানার বাইরে চলে গেলেও অন্তরে অটুট থেকে যায় যেন আন্তরিক টান। সুখে-দুঃখে সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে পাশে থাকুক বিশ্বস্ত হয়ে বন্ধুত্বের হাত। অনন্তকাল ভালোবাসার বন্ধনে মজবুত হয়ে থাকুক আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধন।