আঠারো পেরিয়ে উনিশে কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশ | ০৮ জুন ২০২৪, ০০:০০

ইকবাল হাসান
কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব ও ঘূর্ণিঝড় রেমালের মধ্যেই দরজায় হাজির হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ও শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে কোনো আয়োজন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে শিক্ষক সমিতি শিক্ষকদের নিয়ে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা করেছে। ১৮ পেরিয়ে ১৯-এর যাত্রায় কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের উলেস্নখযোগ্য কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো- প্রতিষ্ঠার ইতিহাস : কুমিলস্না অঞ্চল অনেক আগে থেকেই শিক্ষা-সংস্কৃতিতে বর্তমান বাংলাদেশের যে কোনো অঞ্চল থেকে এগিয়ে ছিল। ষাটের দশকে কুমিলস্না অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার হয়। সেই আন্দোলনের ফলে ২০০৪ সালের ১ জুলাই কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০০৬ সালের ৭ ফেব্রম্নয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। একই বছরের ৮ মে কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়। পরে ২০০৭ সালের ২৮ মে কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। আয়তন ও অবকাঠামো : ২০০৭ সালের ২৮ মে কুমিলস্না শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে কোটবাড়ি শালবন বিহার এবং ময়নামতি জাদুঘর সংলগ্ন পাহাড়ি ও সমতলভূমির ওপর ৫০ একর জায়গা নিয়ে কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন ও অবকাঠামো দুটিরই উন্নতি হয়েছে। ধুলো উড়া রাস্তা থেকে পাকা রাস্তা যেমন হয়েছে, তেমনি ৫০ একর আয়তন থেকে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন ২৪৪.১৯ একর। তবে ১৯৪.১৯ একরে এক হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চলছে উন্নয়ন কাজ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, খুব শিগগিরই এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। বর্তমান ৫০ একরে চারটি একাডেমিক ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন, ছেলেদের জন্য তিনটি হল (শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল, কাজী নজরুল ইসলাম হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল) এবং মেয়েদের জন্য দুটি (নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হল, শেখ হাসিনা হল) হল রয়েছে। শেখ হাসিনা হল উদ্বোধনের কারণে আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে একটি মুক্তমঞ্চ, একটি নান্দনিক শহীদ মিনার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ও একটি চিঠি চত্বর। তবে সবকিছুর মধ্যে বাবুই চত্বর ও সানসেট ভ্যালি নামক দুটি চত্বর হারিয়ে গিয়েছে সময়ের স্রোতে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী : ২০০৭ সালের ২৮ মে প্রথম ব্যাচে সাতটি বিভাগে ৩০০ শিক্ষার্থী ও ১৫ জন শিক্ষক দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এখন সংখ্যা বেড়েছে আরও। এখন ছয়টি অনুষদের অধীনে ১৯টি বিভাগে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৭,১৪১ জন এবং শিক্ষক রয়েছেন ২৬৫ জন। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে বিদেশি শিক্ষার্থী আসছে না বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে ১০৬ জন কর্মকর্তা ও ২০২ জন কর্মচারী। শিক্ষা কার্যক্রম : কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদের অধীনে ১৯টি বিভাগে ব্যাচেলর অব অনার্স, ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স ডিগ্রি চালু রয়েছে। এ ছাড়া এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর কার্যক্রম চলছে। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ইভেনিং প্রোগ্রামও চালু রয়েছে বেশ কয়েকটি বিভাগে। ইংরেজি বিভাগ, ব্যবসা শিক্ষা অনুষদ ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদে ইভেনিং প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। তবে এই প্রোগ্রামের নাম বর্তমানে উইকেন্ড প্রোগ্রাম। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন : পড়ালেখার পাশাপাশি কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এসব সংগঠনের মাধ্যমে তারা তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা বাড়িয়ে নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এখানে আছে নাট্য সংগঠন থিয়েটার কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়, সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবর্তন, গ্রাফিতিভিত্তিক সংগঠন বৃত্ত, আবৃত্তি সংগঠন অনুপ্রাস কণ্ঠচর্চা কেন্দ্র, ব্যান্ড পস্ন্যাটফর্ম, কুমিলস্না ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি, কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় আইটি সোসাইটি, সায়েন্স ক্লাব, প্রকৃতি-বিষয়ক সংগঠন অভয়ারণ্য, কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফি সোসাইটি, স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা সংগঠন বন্ধু, কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় ছায়া জাতি সংস্থা, বিনসিসি, রোভার স্কাউট, ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের সংগঠন কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব। এ ছাড়া রোবট তৈরিতেও এখানকার শিক্ষার্থীদের সুনাম আছে।