রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় দিবস

শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা

লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে লাল-সবুজে ঘেরা দেশের মধ্য-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়। সময় এগিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ও তার আপন গতিতে এগিয়েছে। দেখতে দেখতে ১৮ বছর পূর্ণ করে ও ১৯ বছরে পদার্পণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় উৎসাহ বাড়াতে প্রথমবারের মতো ২৫৭ জন শিক্ষার্থীকে মেধাবৃত্তি দিয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষকদের জন্যও চালু করেছে বৃত্তি। এ ছাড়া গবেষণার ওপর আগের চেয়ে তুলনামূলক একটু বেশিই জোর দিয়েছে কুবি কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে বিতর্ক, ক্রিকেট, হকি, ফুটবল এবং ভলিবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন থাকছে বছরজুড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দিবসে কুবি শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী চাঁদনী আক্তার ও মোহাম্মদ রাজীব-
  ০৮ জুন ২০২৪, ০০:০০
শিক্ষার্থীদের ভাবনা ও প্রত্যাশা

প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিবে

আহমেদ আবির রায়হান

শিক্ষার্থী,

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ (১২তম আবর্তন)

আশা করি, কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ইনোভেশন নিয়ে আসবে। প্রতিটি সেক্টরে তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিবে। স্টেকহোল্ডাররা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে ভাববে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার নিমিত্তে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করে কুবির সুনাম বয়ে আনবে। কিন্তু ১৯তম বর্ষে এসেও স্টেকহোল্ডারদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে আত্মকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা বেশি দেখা যাচ্ছে। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে স্থবির ক্যাম্পাস, যার পেছনে প্রশাসনের বড় রকমের একটি অপারগতা প্রকাশ পেয়েছে। এতে স্টেকহোল্ডার ক্রাইসিস ও শিক্ষার্থীদের মনে শঙ্কা ব্যতীত আর কিছুই তৈরি করছে না।

নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও চলছে গবেষণা

ইসরাত জাহান সুমাইয়া

শিক্ষার্থী

লোক প্রশাসন বিভাগ (১৫তম আবর্তন)

র্

যাংকিং অনুযায়ী গবেষণা, সামাজিক প্রভাব ও উদ্ভাবন- এই তিন সূচকে কুমিলস্না বিশ্ববিদালয়ের অবস্থান দেশে যথাক্রমে ৪৮তম, ৫৫তম ও ১৬তম। কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বাহিরের রাষ্ট্র থেকে ডিগ্রি নিয়ে দেশে এসে অনেকেই গড়েছেন নিজের ক্যারিয়ার। এতসব প্রাপ্তির মধ্যেও রয়েছে কিছু সংকট ও সীমাবদ্ধতা। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ হলো গবেষণা করা। কিন্তু সেখানে কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান যৎসামান্য। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র দুই কোটি টাকা। যা পূর্বের অর্থবছরের তুলনায় ২৮ লাখ টাকা বেশি। এদিকে মান বাড়লেও গবেষণায় পর্যাপ্ত সরঞ্জামের অভাব, বিভিন্ন জার্নালে গবেষণা প্রকাশের ক্ষেত্রে সামর্থ্যের বাইরের এডিটিং ফি-সহ নানা ধরনের সংকটে চলছে কুবির গবেষণা কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ে যথেষ্ট পরিমাণ সরঞ্জাম না থাকায় গবেষকদের গবেষণা কাজের জন্য শরণাপন্ন হতে হচ্ছে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের। যার ফলে গবেষণার সময় বেশি লাগছে এবং খরচও বাড়ছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে সরঞ্জাম না থাকায় গবেষণার কাজে ঢাকামুখী হতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে কিছু প্রস্তাবনা

রোম্মানা হোসেন

শিক্ষার্থী

ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ (১৫তম আবর্তন)

উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন দিক বা বেশ কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হয়। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে কিছু প্রস্তাবনা প্রদান করতে চাই। প্রথমত, আমাদের অধ্যাপক ও গবেষকদের মান উন্নয়ন করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানের অধ্যাপক ও গবেষক নিয়োগ করা এবং তাদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা অপরিহার্য। দ্বিতীয়ত, গবেষণা কার্যক্রমে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী প্রকল্পে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করতে হবে। তৃতীয়ত, আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইন কোর্স, ডিজিটাল লাইব্রেরি এবং ইন্টারেক্টিভ লার্নিং টুলসের ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। চতুর্থত, আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে পার্টনারশিপ এবং এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা বিদেশে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। পঞ্চমত, আমাদের শ্রেণিকক্ষ, গবেষণাগার এবং অন্যান্য শারীরিক সুবিধার উন্নয়ন করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা উন্নত পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। ষষ্ঠত, বিভিন্ন দেশের এবং সংস্কৃতির শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করার জন্য বৈচিত্র্যময় এবং পেস্নাবাল প্রোগ্রাম চালু করতে হবে। সপ্তমত, আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা পত্রিকা প্রকাশ করা এবং শিক্ষকদের আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণা প্রকাশে উৎসাহিত করতে হবে। আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, আমি বিশ্বাস করি, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় দ্রম্নতই আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠবে।

সংকট ও কলুষতামুক্ত ক্যাম্পাস চাই

তানভীর মাহিম

শিক্ষার্থী

আইন বিভাগ, (১৭তম আবর্তন)

বিশ্ববিদ্যালয় হলো একটি বিশ্বমানের চিন্তা উৎপাদন কেন্দ্র। একটি বিশ্ববিদ্যালয় তখনই বিশ্বমানের হয়ে উঠে যখন সেখানে চিন্তাগত স্বাধীনতা এবং জ্ঞান উৎপাদনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়।

বাংলাদেশের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখন নিজেদের 'লিগ্যাসি' হারাতে বসেছে তখন নবীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমরা কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করে গড়ে তোলে 'লিগ্যাসি' তৈরির সম্ভাবনাময় স্বপ্ন দেখছি। কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে হলে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চাহিদাগুলো নিশ্চিত করে অ্যাডভান্সড রিসোর্সের সঙ্গে পরিচিত করতে হবে। সেইসঙ্গে রীতিসিদ্ধ চিন্তায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুক্ত করতে হবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় দিবসেও স্রেফ অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে এবং বাইরের অছাত্রদের দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল অ্যাফেয়ার্সে হস্তক্ষেপ করানো হচ্ছে। আশা করি, শিগগিরই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এহেন কলুষতা থেকে মুক্তি পাবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য এক সম্ভাবনাময় দ্বার উন্মোচন করবে। এভাবেই কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠবে বিশ্বমানের জ্ঞান উৎপাদন কেন্দ্র।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে