শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

মানুষের নয়, মশার দেহে ডেঙ্গুর উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ বাকৃবি গবেষকের

মো. আশিকুজ্জামান, বাকৃবি
  ২৫ মে ২০২৪, ০০:০০
মানুষের নয়, মশার দেহে ডেঙ্গুর উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ বাকৃবি গবেষকের

সাম্প্রতিক সময়ে বছরজুড়ে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। প্রতিদিনই কেউ না কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গু হলে মাথা ব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা ও চামড়ায় ফুসকুড়ি দেখা দেয়। দুই থেকে সাত দিনের মাঝে সাধারণত ডেঙ্গু রোগী আরোগ্য লাভ করেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক রক্তক্ষরী রূপ ধারণ করে। এমনকি মৃতু্য পর্যন্ত হতে পারে।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে যেমন মশার প্রজনন বেড়েছে, তেমনি জনসংখ্যা ও বাসস্থান বাড়ার কারণে এডিস মশার প্রজননের স্থানও বৃদ্ধি পেয়েছে। একসময়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকলেও তা ক্রমান্বয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের এডিস মশাতে ডেঙ্গুর ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। এসব মশা থেকে ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করতে পারে।

তবে স্বস্তির খবর হলো বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটির সদস্য এবং প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. মো. সহিদুজ্জামান বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রম্নততম সময়ে মানুষে নয়, সরাসরি মশার দেহে ডেঙ্গু ভাইরাসের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণের দাবি করেছেন। আক্রান্ত মানুষের রক্তে সাধারণত লক্ষণ প্রকাশের এক থেকে তিন দিন সময়ে ডেঙ্গুর উপস্থিতি পরীক্ষা করা যায়। কিন্তু মশার দেহে ডেঙ্গুর জীবাণু পুরো জীবনচক্রে থাকায় যেকোনো সময় বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার তা শনাক্তকরণ করা সম্ভব। এতে খরচও যেমন কম হবে, জীববৈচিত্র্যও রক্ষা পাবে। বাকৃবি ও এর আশপাশের এলাকা থেকে প্রায় এক হাজার এডিস মশার নমুনা সংগ্রহ করে তিনি পরীক্ষাটি করেছেন। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রম্নত সময়ে কোনো একটি এলাকার এডিস মশায় ডেঙ্গু ভাইরাস আছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

অধ্যাপক ও গবেষক ড. মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় হলো মশা নিয়ন্ত্রণ এবং মশা নিয়ন্ত্রণ একটি বৈজ্ঞানিক বিষয়। মশা নিয়ন্ত্রণের আগে মশার দেহে ডেঙ্গু ভাইরাসের উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।

মূলত তিনি 'ল্যাটারাল ফ্লো ক্রোমাটোগ্রাফিক ইমিউনোঅ্যাছে' পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। এই পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রম্নত সময়ে একটি অথবা একসঙ্গে অনেকগুলো এডিস মশা থেকে ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্ত করা যায়। প্রযুক্তিটির মাধ্যমে সংগৃহীত এডিস মশা থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রস্তুতকৃত নির্যাস থেকে ডেঙ্গু ভাইরাসের অ্যান্টিজেন ব্যবহারের মাধ্যমে শনাক্তের কাজ করা হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে মাত্র এক ঘণ্টার কম সময়ে ফলাফল পাওয়া সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, সাধারণত ডেঙ্গু জীবাণুবাহী স্ত্রী এডিস মশার কামড়ে মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। তবে প্রকৃতিতে পুরুষ ও স্ত্রী উভয় এডিস মশায় ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবাণু থাকতে পারে। আক্রান্ত পুরুষ মশার সঙ্গে সুস্থ স্ত্রী মশার প্রজননে জন্ম নেওয়া নতুন প্রজন্মের মশায় ওই ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।

মশা নিয়ন্ত্রণে এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। প্রযুক্তিটি ব্যবহারের মাধ্যমে পুরুষ ও স্ত্রী, ছোট ও বড় সব মশায় ডেঙ্গুর উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা যাবে এবং নির্দিষ্ট এলাকার ডেঙ্গু পরিস্থিতির পূর্বাভাস জেনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দ্রম্নত পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে