বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা : ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা প্রেক্ষিত

বাংলাদেশে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে স্বাধীনতার পূর্বেও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসগুলোতে সংবাদমাধ্যমকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানেও প্রতিষ্ঠানের ভালো-মন্দ প্রচারের একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রাখছেন ক্যাম্পাসের গণমাধ্যমকর্মীরা। তবে বারবার যোদ্ধাদের কলমকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় গণমাধ্যমে স্বাধীনতা আদতে নিশ্চিত করা গেল কি না! সে প্রশ্ন থেকেই নিজেদের অভিমত জানিয়েছেন সংবাদমাধ্যমকর্মীরা। পাঠকের জন্য তুলে ধরেছেন তাহমিদ হাসান।
  ১৮ মে ২০২৪, ০০:০০
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা : ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা প্রেক্ষিত

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে

সানজিদা জান্নাত পিংকি

সাধারণ সম্পাদক,

গণবিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (গবিসাস)।

ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার কাজটা অনেকাংশে জলে বাস করে কুমিরের সঙ্গে লড়াইয়ের মতো। আর এই লড়াইটা চালিয়ে যেতে ক্যাম্পাস সাংবাদিকের প্রধানতম অস্ত্র গণমাধ্যম। যার স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা না গেলে এই কর্মযজ্ঞ খর্ব হবে। দেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে গণসংযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগ আছে। কিন্তু গণবিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে সাংবাদিকতা বিভাগ নেই অথচ এটিই বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে সাংবাদিক সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বস্তুনিষ্ঠতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সংগঠনটি পার করেছে ১১টি বসন্ত। অনেক চড়াই-উতরাই তরী বেয়ে যেতে হয়েছে। মূলত দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সহজ হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই অনিয়ম-দুর্নীতি দেখেও সাধারণ শিক্ষার্থীরা কিছু বলছেন না বা বলতে পারছেন না সেখানে একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক হিসেবে আমাদের ওপরই দায়িত্ব বর্তায়। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অপরাধী বিপক্ষে গেলেই সে ফুসে উঠবে স্বাভাবিক কিন্তু গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা গেলে এসব অপরাধ উন্মোচন সময়ের ব্যাপার মাত্র। যারা সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত আছি তারা অন্তত এতটুকু খেয়াল করতে পারি আমরা নির্বান্ধব। তবে একলা চলো নীতিতে বহাল থাকার কারণে বহু প্রতিবন্ধকতা-প্রশাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করা সম্ভব হয়। এমনটা নয় যে সবটাই প্রতিবন্ধকতার, একলা চলার এই পথটাতে এমন অনেক বোদ্ধার সান্নিধ্যে যাওয়া সম্ভব হয়েছে, যা চলার পথকে আরও মসৃণ করেছে। আশা রাখি, বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে অনড় হবেন এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত করবেন।

মানুষ দোষ প্রকাশকে ভয় পায়

রুদ্র ইকবাল

শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক,

কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়।

আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশ কিছু জটিল সমস্যা সবসময় বিদ্যমান থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষক রাজনীতি ও ছাত্ররাজনীতির গোলকধাঁধায় অধিক পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা, কিন্তু বিভিন্ন নিপীড়নের ভয়ে সবাই চুপ থাকে। ক্যাম্পাসগুলোতে নিত্য লেগে থাকে অনিয়ম, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে সহিংসতা। এসব দূর করতে এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করার নিমিত্তেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাংবাদিকতার চর্চা হয়। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা বেশ কিছু বিষয়ের সমন্বয়ে গঠিত। এর মধ্যে অন্যতম হলো ক্যাম্পাস নিয়ে সচেতনতা, নৈতিকতা এবং কোনো ঘটনা পর্যবেক্ষণ পরবর্তী সত্য তুলে ধরা। ক্যাম্পাস সাংবাদিকেরা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে নানা অনিয়মের সত্য পত্রিকায় প্রকাশ করে অনিয়মের যাত্রা রোধ করার মাধ্যমে। মানুষ স্বভাবতই দোষ প্রকাশকে ভয় পায়। ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতার চর্চা থাকলে অনিয়ম প্রকাশ হওয়ার ভয়ে অনিয়ম থেকে দূরে থাকে কর্তা ব্যক্তিরা। তবে আমরা প্রাচীন যুগ থেকে বর্তমান পর্যন্ত দেখে আসছি যারা সত্য তুলে ধরার কাজ করে তাদের বারবার মিথ্যা ও অন্যায়ের বাহকদের সম্মুখীন হতে হয়। এই 'মিথ্যা' সাময়িকভাবে 'সত্যকে' হেনস্তা করতে পারলেও পরবর্তীতে এই মিথ্যা গুড়ে যায় সত্য ও নৈতিকতার মিশ্রণ হলে।

সংবাদ প্রকাশের জেরে হতে হয় লাঞ্ছিত

নোমান বিন হারুন

সাধারণ সম্পাদক,

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব (জাবি প্রেস ক্লাব)।

ক্যাম্পাসের নিত্যনৈমিত্তিক খবরাখবর, ঘটনাবলি যিনি পত্রিকার পাতায় তুলে ধরেন তিনিই ক্যাম্পাস সাংবাদিক। একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক একাধারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক। নিয়মিত শিক্ষাকার্যক্রমের পাশাপাশি পূর্ণ পেশাদারিত্ব বজায় রাখেন। বাংলাদেশে সাংবাদিকতার উলেস্নখযোগ্য ক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি-অগ্রগতি, প্রাতিষ্ঠানিক ত্রম্নটি-বিচু্যতি আর প্রশাসনের অনিয়ম-দুর্নীতি এখানকার খবরের মূল উপজীব্য। বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের পরও ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের প্রশাসনের রোষানলে পড়তে হয়। সংবাদ প্রকাশের জেরে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাও নিয়মিত ঘটছে। এসব বাধাবিপত্তি মাড়িয়ে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার এ সময়টি আমার জীবনের এক সোনালি সময়। দেশসেরা জ্ঞানীদের সান্নিধ্য পাওয়া, অন্যায়কে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া, কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বের প্রশ্নে জবাবদিহিতার আওতায় আনার এ অবারিত সুযোগ আর কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা চর্চায় প্রতিবন্ধকতা অনেকটা কম। ব্যাপকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় সব মননশীল মানুষেরা একত্রে মিলেমিশে শুভবোধের চর্চা করেন বলেই হয়তো মুখোমুখি অবস্থানে যেতে হয় না কখনো। সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলে মেনে নেওয়ার মানসিকতা সবার মধ্যে যতদিন থাকবে, ততদিন ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা স্বমহিমায় তাদের দায়িত্ব পালন করে যেতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।

সাহসী সাংবাদিকই স্বাধীন সাংবাদিক

ইসরাত জাহান

দপ্তর সম্পাদক,

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (বাকৃবিসাস)।

শিক্ষাজীবনে আমাদের সহ-পাঠ্যক্রম সংক্রান্ত কার্যক্রমগুলোর মধ্যে একটি হলো ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা। ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া ঘটনা এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের যোগসূত্রই হলেন ক্যাম্পাস সাংবাদিক। বর্তমানে বহুল প্রচলিত একটি উক্তি হলো, 'ওভ ুড়ঁ ফড়হ'ঃ ৎবধফ হবংিঢ়ধঢ়বৎ, ুড়ঁ ধৎব ঁহরহভড়ৎসবফ. ওভ ুড়ঁ ৎবধফ হবংিঢ়ধঢ়বৎ, ুড়ঁ ধৎব সরং-রহভড়ৎসবফ.' উক্তিটি কিন্তু এখন অনেকাংশেই সঠিক। সমাজ ও রাজনীতির প্রভাবে সাংবাদিকের কলমের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া চেষ্টা করা হলে এমনটি ঘটা স্বাভাবিক। আমার ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার গল্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অর্জন, দৈনন্দিন ঘটে যাওয়া ঘটনা, সর্বোপরি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন ও দাবির বিষয়গুলো সবার সামানে তুলে ধরাই হলো আমার কাজ। আমার কাজেও স্বাধীনতা নামক কথাটি একটি বড় অংশ জুড়ে থাকে। যে ঘটনাটি আমার সামনে ঘটবে সেটিকে পত্রিকার পাতায় হুবহু তুলে ধরাই আমার নীতি। গণমাধ্যমে সত্য প্রকাশে আমার এই স্বাধীনতাটুকু কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা অনেকবার করা হয়েছে। আমার কলমকেও প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে সত্য প্রকাশের সাহস আমার কলমকে কলুষিত হতে দেয়নি। ঘটনার সঠিজ তথ্য খুঁজে পাওয়া এক সময় আমার বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল। ধীরে ধীরে ঘটনার সেই সঠিক তথ্যই আমার বড় শক্তি হয়ে উঠেছে। সাহসী সাংবাদিকই কেবল স্বাধীন সাংবাদিক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে