রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

স্বপ্ন জয়ে প্রতিবন্ধকতা বাধা হয়নি যাদের

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
  ১১ মে ২০২৪, ০০:০০
স্বপ্ন জয়ে প্রতিবন্ধকতা বাধা হয়নি যাদের

দেশের ২৪টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের মানবিক বিভাগের 'বি' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে সাতজন 'বিশেষ' শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।

দৃষ্টি কিংবা শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও স্বপ্ন জয়ের স্বপ্ন দেখেছেন তারা। দৃষ্টি কিংবা শারীরিক অক্ষমতা উচ্চ শিক্ষার লড়াইয়ে তাদের বাধাই হতে পারেনি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকায় আবেদনের প্রেক্ষিতে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় তাদের পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও দুইজন পরীক্ষার্থী অসুস্থ থাকায় তারাও মেডিকেল সেন্টারে পরীক্ষা দিয়েছেন।

শারীরিক প্রতিবন্ধী সাতজন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাঁচজনই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী? এরা হলেন- ইফফাত জাহান বিথী, আবু ফারেজ, হুমায়রা জাহান জিনিত, নুসরাত জাহান কাকলী ও হিজবুলস্নাহ। তারা সবাই শ্রম্নতিলেখকের মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়াও অপর দুইজন শিক্ষার্থী আসফিয়া তাসনীম রুহী এবং মো. মাসুদ শাহরিয়ার শারীরিক প্রতিবন্ধী। একজনের হাত নেই এবং অপরজনের হাতে সমস্যা। তারাও শ্রম্নতিলেখকের সহায়তায় পরীক্ষা দিয়েছেন।

এদের মধ্যে ফেনী থেকে তিন ভাইয়ের সঙ্গে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছেন আসফিয়া তাসনীম রুহী। তিনি ফেনীর পরশুরাম ইসলামিয়া ডিগ্রি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি লিখতে অক্ষম। তা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আমি সর্বোচ্চ সহযোগিতা পেয়েছি। প্রশ্নের মান আমার কাছে ভালোই মনে হয়েছে। ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পেরেছি। পরীক্ষাও ভালো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'আমার লোকপ্রশাসন বিষয় নিয়ে পড়ার ইচ্ছা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হলে আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হবো।'

দৃষ্টি প্রতিবন্ধিকতা নিয়ে পরীক্ষা দিতে আসা ইফফাত জাহান বিথী ছোটবেলা থেকেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার স্বপ্ন বুনেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় বেগম বদরুন্নেসা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ইতিহাস বিষয়ে তার পড়াশোনা করার প্রবল ইচ্ছা। লক্ষ্য তার বিসিএস। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন তিনি। শ্রম্নতিলেখকের মাধ্যমে তাকে পরীক্ষা অংশগ্রহণের সুযোগ ও সর্বাত্মক সহযোগিতা করে দেওয়ার জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

পরীক্ষা শেষে আরেক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান কাকলী বলেন, 'গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য এসেছি। ভেবেছিলাম কিছুই পারব না। ভয় কাজ করছিল। কিন্তু এখানে এসে সবার সহযোগিতায় আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছি। আমাদের জন্য আলাদা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরীক্ষাও ভালো হয়েছে। সবকিছু ভালোই ছিল।'

আরেক পরীক্ষার্থী আবু ফারাজ বলেন, আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিরিয়াল আসছে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার পছন্দের সাবজেক্ট আইন আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। এবার গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। অনেক ভালো পরীক্ষা হয়েছে। গুচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি আইন বিভাগে ভর্তির সুযোগ হয়, তাহলে আমি এখানেই ভর্তি হবো।

শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের উপপ্রধান চিকিৎসক মিতা শবনম বলেন, 'সমস্যাজনিত কারণে আবেদনের প্রেক্ষিতে তালিকা অনুসারে ছয়জনের জন্য আগে থেকেই শ্রম্নতিলেখকের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে পাঁচজন ছিল দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। পরবর্তীতে পরীক্ষার সময় পেট ব্যথা, পা ব্যথা নিয়ে দুজন আর হাত নেই এমন একজন পরীক্ষা দিতে আসে। তাদের জন্যও পরবর্তীতে শ্রম্নতিলেখকের ব্যবস্থা করা হয়। আমরা সবার পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে নিয়েছি।'

ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা চলাকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বিভিন্ন হল পরিদর্শনের পাশাপাশি মেডিকেল সেন্টারও পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে উপাচার্য বলেন, 'বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদাভাবে মেডিকেল সেন্টারে পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। তারা সুন্দরভাবে পরীক্ষা দিয়েছে। তাদের দেখে অনেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য অনুপ্রাণিত হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে