'দক্ষ কৃষিবিদ বাড়াবে কৃষির উৎপাদন'

প্রকাশ | ০৪ মে ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশের প্রেক্ষাপটে কৃষ্টি ও সমৃদ্ধি দুটোই কৃষি। উচ্চশিক্ষায় কৃষির গুরুত্ব, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে বলেছেন গণ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল করিম। লিখেছেন সানজিদা জান্নাত পিংকি। কৃষি শিক্ষার একমাত্র উদ্দেশ্য দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি কৃষি একটা প্রযুক্তিগত পড়াশোনা। আর এ জন্য প্রয়োজন তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান। তেমনি কৃষিবিদ্যায় যা পড়া হয়, তা আবার মাঠে প্রয়োগও করা হয়। আমাদের কৃষি শিক্ষার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো- দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি। আর এ ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক জ্ঞান থেকে গবেষণা করে যা উদ্ভাবন হয়, সেটিকে ব্যবহার করেই দেশের কৃষকরা উৎপাদন করছে। স্বাধীনতা পরবর্তী ও বর্তমান সময়ের দিকে তাকালে এটা বলাই বাহুল্য, এ দেশে কৃষিকে গুরুত্ব প্রদান ও আধুনিকায়নের মাধ্যমেও এক বিজয় এসেছে। বর্তমান বাজারে কোনোকিছুর ঘাটতি নেই। উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেখানে শৈশব থেকেই শিশুকে চিকিৎসক, প্রকৌশলী হওয়ার পরিকল্পনা দেওয়া হয়, সেখানে বর্তমানে কৃষির যে গুরুত্ব, সেটা আলাদাভাবে অনুধাবিত হচ্ছে, এটা খুবই আনন্দের বিষয়। প্রতিবন্ধকতা থাকলেও বিদ্যাপিঠগুলোকে আগাতে হবে দেশে কৃষি বিদ্যাপিঠ অনেক কম ছিল। পরে সরকারিভাবে বিদ্যাপিঠের সংখ্যা বাড়ানো হয়। কেননা, আমরা জানি, কৃষিকে গুরুত্ব দিতেই হবে। সরকারি বিদ্যাপিঠে যত শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ আছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। সঙ্গত কারণেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও কৃষি নিয়ে ভাবছে, এগিয়ে আসছে। শুরুতে সব ব্যাপারেই প্রতিবন্ধকতা থাকে। তবে পরবর্তীতে তা দমতে শুরু করে। দেশে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক। কারণটা, জনসাধারণের 'সংখ্যা'র সঙ্গে জড়িত। জনসংখ্যা বাড়লে যদি সরকারি প্রতিষ্ঠানে আসন সংখ্যা না বাড়ানো যায়, তাহলে শিক্ষার্থীকে বেসরকারিতে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটা প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়ে ভালো ছাত্রছাত্রী বের করার সুযোগ হচ্ছে, তারাও তখন উৎপাদনে সহায়ক হন। প্রযুক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে হবে কৃষি প্রযুক্তি কয়েকগুণ বেড়েছে। আমাদের কৃষিবিদরা কৃষিজীবীদের কাছে প্রযুক্তি পৌঁছে দিয়েছেন। তাদের তত্ত্বাবধানেই জেলা-উপজেলা থেকে একেবারে মাঠপর্যায়েও হস্তক্ষেপ সম্ভব হচ্ছে। বর্তমানে প্রযুক্তির ব্যবহারে যে আশাব্যঞ্জক উৎপাদন, তা ধরে রাখতে হবে। 'গেস্নাবাল ওয়ার্মিং' কৃষির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যার জন্য কৃষি বিজ্ঞানীরা আগাম গবেষণার পথে হাঁটছেন। গবেষণার ফলস্বরূপ আমরা বেশকিছু নতুন জাত পেয়েছি। যার ফলে আবাদ বাড়ছে। কৃষিই আমাদের একমাত্র শক্তি। সবকিছুর বিকল্প ব্যবস্থা থাকলেও খাদ্যের বিকল্প নেই। ফলে নিজের দেশের উৎপাদন বাড়াতে হবে? আর এজন্য কৃষি, কৃষক ও কৃষিবিদই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা খাতে প্রয়োজন 'ভালো সিস্টেম' শিক্ষা ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপোষ করা যাবে না। আমাদের ছেলেমেয়েদের যথেষ্ট মেধা আছে। তবে সমস্যা হলো আমাদের সিস্টেমে। সিস্টেম ভালো হলে আমাদের সন্তানরাও ভালো হিউম্যান রিসোর্স তৈরি হবে। শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়াটাও রোধ করতে হবে। প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের স্মার্ট হতে হবে। আমরা কৃষিকে বলি 'স্মার্ট এগ্রিকালচার'। কেননা, এটি সব ভালোর সমন্বয়। আমাদের শিক্ষার্থীরা তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় ক্ষেত্রেই পারদর্শী। খাতা-কলমের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে আমাদের প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। ফলে আমাদের সিস্টেমকে সঠিকভাবে ত্বরান্বিত করতে পারলে একজন স্মার্ট কৃষিবিদ ও কৃষক তৈরি করা সম্ভব। কৃষিতে উচ্চতর শিক্ষায় আগ্রহী করে তোলাই চ্যালেঞ্জ আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো শিক্ষার্থীরা। আমরা চাই, তারা প্রতিষ্ঠানে আসুক, জ্ঞান অর্জন করুক, কৃষিবিদ হয়ে ফিরে যাক। এটা মূলত একটা সার্কেল। গণ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অনুষদ খুলে একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েছে। চ্যালেঞ্জটা হলো হিউম্যান রিসোর্স তৈরি করা। কৃষি শিক্ষার গুরুত্ব অনুভব করে এই প্রতিষ্ঠান কৃষিতে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছে। একই উপলব্ধি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছতে হবে। নবীন হিসেবে শতভাগ আশা করা যায় না। তবে আমাদের ছেলেমেয়েরা আমাদের অ্যাম্বাসেডর হবেন, তারা লেখাপড়া করে ভালো স্থান তৈরি করলেই গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। পরিকল্পনা অনেক বড় হতে পারে, তবে একবারে আকাশ ছোঁয়া অসম্ভব? ধাপ অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে। শুরুটা হয়ত একটু ধীরগতির, কিন্তু ধীরে ধীরে আরও গতিপ্রাপ্ত হতে থাকে। তবে অর্থনৈতিক সাপোর্ট যত বাড়বে, এই গতিটা তত বাড়বে। কৃষি শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সোচ্চার হতে হবে সব বিষয়ের সঙ্গে তুলনা করতে গেলে, একজন কৃষির লোক হিসেবে নয়, সাধারণ জ্ঞানে আমি যা ধারণা পাই, তা হলো কৃষি সেরাদের সেরা। কেননা, খাদ্য ছাড়া কোনো কিছুই সম্ভব নয়। খাদ্য ছাড়া গান, সিনেমা আর লেখাপড়া যাই হোক, কোনো কিছুই ভালো লাগবে না। এই খাদ্যের জোগানদাতা কৃষি। আর কৃষির উৎপাদন/ উন্নয়ন হচ্ছে। কেননা, এই বিষয়ের উন্নয়ন ছাড়া কোনো কিছুই সম্ভব নয়। বলাই বাহুল্য, কৃষি শিক্ষার গুরুত্বও অপরিসীম। যত মেধাসম্পন্ন কৃষিবিদ তৈরি হবে, তত বেশি কৃষির উৎপাদন বাড়বে।