ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ রেললাইনের পাশে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম কৃষি গবেষণা এবং উৎকর্ষতা সাধনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। প্রকৃতির অপার সম্ভাবনা নিয়ে গঠিত সাড়ে ১২০০ একরের বাকৃবি সবুজ ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে সুবিশাল সেগুন, মেহগনি, বট, কড়ই, সিরিজ, ইউক্যারিপটাস বৃক্ষ ইত্যাদি। বৃক্ষের কোটরে পাখির বাসা। বাসায় ডিম থেকে ফোটা সদ্য ফুটফুটে ছানা। বৃক্ষের শাখায় লাল, সাদা, বাহারি রঙের ফুল। কোনো শাখার ফুল ঝড়ে সৃষ্টি হয়েছে কুঁড়ি। বাকৃবির গাঢ় সবুজের ক্যাম্পাসে বছরের সমস্ত দিন জুড়ে থাকে শিক্ষার্থীদের কলরব। বছর জুড়ে থাকে নানান উৎসব। কখনও বা পিঠা উৎসব, কখনও বা ফল উৎসব, কখনও বা থাকে চা উৎসব। বঙ্গবন্ধু চত্বর, মরণ সাগরের মাঠ, বৈশাখী চত্বরে থাকে বহিরাগতের ঢল। কারো বা শাড়ির রং লাল, কারো বা নীল, কারো বা কালো, মাথায় গোঁজা ফুল যুগলসঙ্গী প্রেমিকের শরীরে হরেক রঙের পানজাবি। ক্ষণিকের জন্য হলেও মনে হতে পারে এ যেন কোনো এক রঙের উৎসব। কিন্তু ঈদের দুই সপ্তাহের ছুটিতে ক্যাম্পাসে নেমে এসেছে নীরবতা। কোথাও নেই জন মানবের চিহ্ন। রাস্তার দুই ধারে সারি সারি ফোস্কার দোকান, আইসক্রিম চত্বর, আব্দুল জব্বারের মোড়, কেআর মার্কেট ফাঁকা। চারিদিকে সুনসান নীরবতা, কোথাও নেই যান্ত্রিকতা। সন্ধ্যা হলেই এই ক্যাম্পাসে নেমে আসে অন্ধকার, রাতের জোসনা চলে চলে যায় মেঘের আড়ালে। অন্ধকার হলেই এগ্রিকালচার করিডোর থেকে ভেসে আসে নিশির ডাক। রাতের গভীরতা বাড়লেই করিডোরের প্রান্তরে উদ্যম নৃত্য মেতে ওঠে প্রেতাত্মার দল। মনে হতে পারে এ যেন কোনো এক রূপকথার ভূতের নগরী। যে নগরীতে কোনো এক তেজী রাজা ছিল, ছিল তার রাজ্য, সুন্দরী রাজকুমারী। কোনো এক দুর্যোগে তা এখন পরিত্যক্ত। কিন্তু ক্যাম্পাসের নীরবতার মাঝেই প্রকৃতি কন্যা সেজেছে অপরূপ সাজে। একদিনের বৃষ্টিতে পত্রের ওপর জমা ধুলোর আস্তরণ ধুয়ে মুছে বুড়িগঙ্গার জলে। বৃক্ষের নতুন পলস্নবে গাঢ় সবুজ রঙে সেজেছে প্রকৃতি কন্যা। তার পায়ে পলাশ রঙের আলতা, চুলের ভাজে কৃষ্ণচূড়া রঙের সিঁদুর, ঘন কালো চুলের বেণীতে গোঁজা থোকা থোকা কদম ফুল। প্রকৃতি কন্যার অপরূপ সাজে লালচে রঙের সেগুন পাতার আড়াল থেকে ভেসে আসছে মধুর কণ্ঠের পাখির ডাক। সে যেন বলছে তার সঙ্গে একাকার হতে সবুজের আড়ালে। ক্যাম্পাসের রাস্তার দুই ধারে দেবদারু বৃক্ষ সেজেছে নতুন পলস্নবে। তার চূড়ায় লালচে সবুজ রঙের কচি পাতা। বাকৃবির নীলের প্রতীক বাসস্ট্যান্ডে বাসগুলো স্তম্ভির, গায়ে জমেছে মোটা ধুলোর আস্তরণ। তার শরীর বেয়ে উঠেছে তরতজা কচি লতা। লতার কান্ডে ফুটেছে সাদা রঙের ফুল। বাসের অন্দর মহলে একদম পেছনে সংসার বেঁধেছে দুটো চড়ুই। চড়ুই দম্পতির বাসায় দুটো ছানা। ছানার রং ধুসর, তার ঠোঁটের রং হলুদ, পাশেই মমতাময়ী মায়ের জড়ানো ডানা। বাকৃবির চিরচেনা প্রাণ চঞ্চল কলরবমুখর ব্রক্ষপুত্রের কুল ফাঁকা, লাল, নীল, আকাশি রঙের পাল উড়ছে স্তম্ভির নৌকার উপরে। কুলের দুই ধার গাঢ় সবুজ। ছোট ছোট সনে ফোটেছে সাদা ফুল, কলমির ডালে নীলাভ রঙের ফুলে ছেয়ে গেছে দুই কুল, একটু পর পর গাঢ় সনের ঝোপ। এই যেন এক অচেনা ব্রক্ষপুত্র কুল।