বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পৃথিবীর ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির হৃদয়ের স্পন্দন, আবেগ ভালোবাসার মধ্যমণি। ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেওয়া খোকা। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত তার টানা ২৪ বছরের সংগ্রাম যেন এক মহাকাব্য। এই কাব্যে কখনো ভাষা আন্দোলন, কখনো ছয় দফা, কখনো স্বাধীনতার ঘোষণা 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' রচিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ, একটি অপরটির পরিপূরক, পরস্পর একাত্ম, এক সুতোয় বাঁধা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই সাধক যিনি তার দীর্ঘ কণ্টকাকীর্ণ সাধনায় সমগ্র বাঙালি জাতির মনে সঞ্চার করেছিলেন স্বাধীনতার বাসনা।
দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ভাস্কর্য ও মু্যরাল স্থাপন করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় 'জনক জ্যোতির্ময়' মু্যরাল স্থাপন করেছেন। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলে এই মু্যরালটি সবার নজর কাড়ে।
'জনক জ্যোতির্ময়' মু্যরালটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত, এর পেছনেই রয়েছে পাবিপ্রবির 'নিরিবিলি লেক'। মু্যরালটির পস্ন্যাটফরমের দৈর্ঘ্য ৬০ ফুট ও প্রস্থ ৩৮ ফুট। মু্যরালের বেদিতে উঠতে ৬টি সিঁড়ি বা ৬টি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। ৬টি সিঁড়ি বা ধাপকে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যা বাঙালির মুক্তির সনদ। মূল বেদিতে আরও একটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। মূল মু্যরালটির প্রতিকৃতির উচ্চতা ২১ ফুট এবং প্রস্থ ১৫ ফুট। মু্যরালের ডান পাশের স্তম্ভটির উচ্চতা ১৮ ফুট এবং প্রস্থ ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। এখানে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মনীষীদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উদ্ধৃতি আকারে রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিত্ব, জীবনব্যাপী আন্দোলন-সংগ্রাম, বিশালত্ব, মানবিকতা, মহানুভবতা, দৃঢ়তা, দেশপ্রেম তথা পুরো জীবনচিত্র ফুটে ওঠে এই মু্যরালের মাধ্যমে। ২০২১ সালের ৩০ মার্চ তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রোস্তম আলীর সময় 'জনক জ্যোতির্ময়' মু্যরালটির উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ।
এই মু্যরালটি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দর্শনীয় স্থান এবং আড্ডাস্থল হয়ে উঠেছে। বাহির থেকে বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে আসা দর্শনার্থীরা এই মু্যরাল দেখতে ভিড় জমান, মু্যরালের সামনে ছবি তোলেন। ফাইজা জামান নামে এক দর্শনার্থী বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখার মতো অনেক স্থাপনা আছে, তার মধ্যে এই স্থাপনাটি একটি। এই মু্যরালটি বঙ্গবন্ধুরই একটি প্রতিচ্ছবি। এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে জানতে ও চিনতে পারবে।'
ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের কাছে এই জায়গাটি আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন মু্যরালটির চত্বরে শিক্ষার্থীরা আড্ডায় মেতে উঠেন। পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী আমজাদ হোসেন বাবু বলেন, 'জায়গাটি নিরিবিলি, পাশেই লেক। গাছগাছালি আছে, ছায়া পাওয়া যায়। তাই বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে আসলে এখানেই আসি। মু্যরালটির চত্বরে বসে মাঠের খেলা দেখা যায়, লেকের দৃশ্য উপভোগ করা যায়।'