জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া ৫০ টাকায় বাহারি ইফতার
প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
শুরু হয়েছে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র রমজান মাস। সিয়াম সাধনার এ মাসে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীরা রোজা পালন করেন। তেমনি আবাসন সংকটে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রোজা পালন করছেন। এজন্য প্রতিষ্ঠানটির কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় শিক্ষার্থীদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। পুরো মাস জুড়ে সেখানে ইফতার মিলবে মাত্র ৫০ টাকায়।
পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় মাত্র ৫০ টাকায় ৮ প্রকার ইফতার আইটেমের প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। রমজান মাসকে সামনে রেখে ৫০ টাকার এই প্যাকেজটি ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাফেটেরিয়ার কর্তৃপক্ষ। প্যাকেজটিতে ইফতারির সব ধরনের আইটেম অন্তর্ভুক্ত থাকায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে থাকা শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ক্যাফেটেরিয়ায় প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে স্বল্পমূল্যে মানসম্মত ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। ৫০ টাকা মূল্যের ইফতার আয়োজনে রয়েছে মোট ৮টি ভিন্ন ভিন্ন আইটেম। তার মধ্যে একটি আলুর চপ, একটি বেগুনি, একটি পিঁয়াজু, দুটি খেজুর, এক প্যাকেট মুড়ি, এক বাটি ছোলা, এক গস্নাস বিশেষ শরবত এবং প্রতিদিন একটি ভিন্ন ধরনের ফল থাকছে। এছাড়াও আলুর চপ, বেগুনি, পিঁয়াজু, ছোলা কিংবা মুড়ি আলাদাভাবেও বিক্রি হচ্ছে।
ক্যাফেটেরিয়ায় ইফতারে সব ধরনের আয়োজন অন্তর্ভুক্ত থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা। দামে সাশ্রয়ী ও সব শিক্ষার্থী একইসঙ্গে ইফতারের সুযোগ পাচ্ছে বিধায় তারা ব্যাপক খুশি। পাশাপাশি তারা ক্যাফেটেরিয়ায় সেহরির আয়োজনেরও দাবিও জানিয়েছেন।
প্যাকেজটি সম্পর্কে জানার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাজিব হাসান অনিক বলেন, রমজান মাসে রাস্তাঘাটে ইফতার আইটেমের অভাব হয় না। কিন্তু আইটেমগুলো আলাদা আলাদা কিনতে গেলে অনেক বেশি খরচ পড়ে যায়। ক্যাফেটেরিয়ায় একসাথে সব আইটেম থাকায় বেশ ভালোই হয়েছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন বলেন, বর্তমানে সব কিছুর দাম বেশি। ৫০ টাকায় আইটেম মোটামুটি ঠিক আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে যারা থাকে, তারা একসাথে ক্যাফেটেরিয়ায় বসে ইফতার করতে পারছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া শিমু বলেন, মেসে এত আইটেম তৈরি করা ঝামেলা হয়ে যায়। এজন্য ক্যাম্পাসে এসে ক্যাফেটেরিয়ার এই প্যাকেজটি নিয়ে শহীদ মিনারে বসে ইফতার করি। অনেক সময় বাসায়ও পার্সেল নেওয়া যায়।
ক্যাফেটেরিয়ার পরিচালক মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, প্রথম রোজা থেকেই আমাদের এ ব্যবস্থা চাল্য রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে এ আয়োজন করা হয়েছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা আমার নিজের ছেলেমেয়ের মতো। ইফতারে যেন তারা ভালো মানের খাবার খেতে পারে সেজন্যই আমার লাভের কথা চিন্তা না করে এ আয়োজন করেছি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ড. জি. এম. আল-আমীন বলেন, দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও আমরা এ বছরও কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় ইফতারের ৫০ টাকার প্যাকেজটি চালু রেখেছি। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে কোষাধ্যক্ষের মৌখিক অনুমতিতে ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় ইফতার প্যাকেজটি পেয়ে শিক্ষার্থীরা অনেকেই ক্যাম্পাসে ইফতার করছেন। ইফতারের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ছোট বড় আসরে মুখরিত হয়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থান। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, অবকাশ ভবন, শান্ত চত্বর, মুক্তমঞ্চ, কাঁঠালতলা, রফিক ভবনের প্রতিটি তলার বারান্দা, বিবিএ ভবনের নিচতলায় পুরোটা জুড়ে, বিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণ, পোগোজ স্কুলের খেলার মাঠ ছাড়াও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আঙিনায় জমে ওঠে ইফতারের মহোৎসব। তন্মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণোচ্ছ্বল পরিবেশ দেখা যায় শহীদ মিনারে।
ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাশ ভবনের ওপর থেকে দেখলে মনে হয় এ যেন ভাতৃত্বের এক অনন্য বন্ধন। ক্যাম্পাসের জুনিয়র সিনিয়র সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণে সৌহার্দ্য সম্প্রতির মেলবন্ধনে প্রাণচাঞ্চল্য হয়ে ওঠে ইফতার আয়োজন। রোজা শুধু মুসলমানদের ইবাদত হলেও এদের সঙ্গে যোগ দিয়ে থাকেন অন্য ধর্মাবলম্বীও। ক্যাম্পাসের এ ইফতার আয়োজনে প্রায় সময় প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। এর মধ্য দিয়ে অল্প সময়ের জন্য হলেও তারা ক্যাম্পাসের প্রিয় মুহূর্তগুলো খুঁজতে চেষ্টা করেন।