বিশাল দানব আকৃতির 'সূর্যপুরী' আমগাছের অবস্থান- ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের মন্ডুমালা গ্রামে। গাছটির সঠিক বয়স সম্পর্কে কেউ বলতে পারেন না। তবে, গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিরা বলেন, সূর্যপুরী আমগাছটির আনুমানিক বয়স ২২০-এর মতো। রাজধানী ঢাকা থেকে গাছটি ৪৬৬ কিলোমিটার উওর পশ্চিমে অবস্থিত। এলাকাবাসীর দাবি,গাছটি এশিয়ার সর্ববৃহৎ ও সর্বপ্রাচীন আমগাছ। তত্ত্বানুসারে, জমিদার সতেন্দ্রনাথ বাবু এবং তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু 'বৈরী ধনী' এখানে আমগাছটি লাগিয়েছিলেন। আনুমানিক সাড়ে ৩৫০ বছর আগে, 'ভারতবর্ষের উওর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুরের 'সূর্যপুরী' গ্রামে এই আমগাছের জনপ্রিয়তা ছিল। গ্রামটির নামানুসারে গাছটির নামকরণ করা হয়।গাছটির উচ্চতা প্রায় ৮০-৯০ ফুট। গাছটির ঘের ৩৫ ফুট। আমগাছটি দুই বিঘার বেশি জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। গাছটি সারি ডালের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একীভূত ও পুঞ্জিভূত। দিনে সূর্যের আলোয় দূর থেকে গাছটিকে দেখে মনে হবে, 'গাঢ় সবুজ টিলার মধ্যে বুক চিড়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রকৃতির অত্যন্ত্র প্রহরী'। আর আবহা আলোয় মনে হয়, 'সিন্দাবাদের ভয়ানক দৈত্য'।গাছের চারপাশে ১৯টি ডালপালা অক্টোপাসের মতো, মাটিতে নুয়ে পরে শেখড়ের জন্ম দিয়েছে। ফলে একেকটি ডাল রূপান্তরিত বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। রূপান্তরিত ডাল-পালাগুলো বৃক্ষে পরিণত হওয়ার ফলে মূল গাছটি আরও ১০০ বছর বেঁচে থাকার ইঙ্গিত বহন করে। গাছটিতে বছর বেঁধে '১২০ মণ থেকে ১৫০ মণ' আম উৎপাদিত হয়। গাছটি অধিক পুরনো হলেও ফলনে তার কোনো ঘাটতি প্রকাশ পায় না। আমগুলো দেখতে ছোট মাঝারি আকারের, সরু ও মিষ্টি। প্রতিটি আমের ওজন হয়ে থাকে '১৪০ গ্রাম থেকে ১৬০গ্রাম'। আমগুলো বেশ সুস্বাদু ও রসালো হয়ে থাকে। এই আমের খাদ্যাংশ '৫৭ শতাংশ এর মধ্যে ১৭ শতাংশ' মিষ্টান্ন। সাধারণত জুন মাস থেকে এই গাছের আম পাকতে শুরু করে এবং জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায়। সূর্যপুরী আম বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় জাত। সূর্যপুরী আমগাছটি উত্তরাধিকারী সূত্রে পাওয়া গাছটির বর্তমান মালিক আপন দুই ভাই সৈনিক সাইদুর মোলস্না এবং মো. নূর ইসলাম। বর্তমানে গাছটি পরিচালনার দায়িত্বে আছেন মালিকদ্বয়ের ভাগিনা। গাছটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিনোদনকেন্দ্র। গাছটির পাশেই শিশুদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা স্থাপন করা হয়েছে। গাছটিকে দেখতে ২০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়।গাছটিকে এক নজর দেখার জন্য প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে ভিড় জমায় দর্শণার্থীরা। গ্রামের একজন প্রবীণ ব্যক্তি বলেন, আমাদের গ্রামে এই শতবর্ষী গাছটি দেখতে বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক আসেন। গাছটির জন্য আমরা গ্রামবাসী গর্বিত এবং আনন্দিত। গাছটির নান্দনিক ও ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যের কারণে গাছটি দেখতে এবং আমের স্বাদ নিতে বিদেশ থেকে ছুটে আসেন অনেক পর্যটক। গাছ থেকে উৎপাদিত আম গ্রামের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়। সূর্যপুরী আমের জাত জনপ্রিয় হওয়ায় সাধারণত আমের তুলনায় বেশি মূল্যে বিক্রি করা যায়। সূর্যপুরী আম বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।