একুশের অঙ্গীকার হোক শুদ্ধ বানানের চর্চা
মারুফ হোসেন মিশন
আইন বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডার অন্য যে কোনো ভাষার চেয়ে সমৃদ্ধ। বিশ্বে ইংরেজি ভাষার শব্দ যেখানে ৮০ হাজার, বাংলা ভাষার শব্দ সেখানে এক লাখ ২০ হাজার। রক্ত ও প্রাণের বিনিময়ে কষ্টার্জিত আমাদের এই ভাষা, শব্দ এবং বর্ণমালা। বর্তমান বিশ্বে সাত হাজারেরও বেশি ভাষা প্রচলিত থাকলেও পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র বাঙালি জাতিই ভাষার জন্য তাদের তাজা প্রাণ দিয়েছে। কিন্তু আমরা অকৃতজ্ঞের মতো তাদের অনন্য আত্মত্যাগকে ভুলে গিয়ে বাংলা ভাষাকে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করছি। যা তাদের আত্মত্যাগকে অপমানিত করার নামান্তর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যানারে, সাইন বোর্ডে, লিফলেটে, বিল বোর্ডের দিকে তাকালেই চোখ পড়ে বানান ভুলের ছড়াছড়ি। যা অতিশয় দুঃখজনক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলা ভাষা ও বাংলা বানানের ওপর আরও জোর দেওয়া উচিত। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নয়, বাঙালি হিসেবে প্রতিটা মানুষকেই তার নিজের ভাষাকে বিকৃত না করে ব্যবহারে যথেষ্ট যত্নশীল হওয়া অতীব জরুরি। একুশের অঙ্গীকার হোক শুদ্ধ বানানের চর্চা।
সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত
করতে হবে
আরিফ হোসাইন
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
মাতৃভাষা রক্ষায় বাঙালির আত্মত্যাগের ইতিহাস সবারই জানা। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর পরও বাংলা ভাষার যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করা হয়নি। এখন ফেব্রম্নয়ারির ২১ তারিখে সারাদিন মাইকে দেশাত্মবোধক গান বাজানো হয় না। কোথাও অনবরত হিন্দি, ইংরেজিসহ নানান ভিনদেশি ভাষার গান বাজে কোথাও রিমিক্স কিংবা ডিজে গানের সুরে চলে শব্দদূষণ। আমাদের শিশুদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে অভিভাবকরা বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন। ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অশ্লীল গানের তালে চলে অশ্লীল নৃত্য। সেই দৃশ্য রীতিমতো ভাইরাল হচ্ছে সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ভাষার যথাযথ সম্মান বজায় রাখতে হলে অবশ্যই সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
নতুন প্রজন্মের মধ্যে ভাষা চেতনা বোধ জাগ্রত করতে হবে
আরিফুল ইসলাম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
ভাষা শুধু একটা জাতির কথা বলার মাধ্যম নয়, ভাষা একটা জাতির সংস্কৃতির দর্পণ। আধুনিকতা আর প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বাংলা ভাষার প্রতি মনের টান যেন ভাটা পড়েছে। সেই সাথে সংস্কৃতির নানা দিক হারিয়ে যাচ্ছে বাংলা থেকে। আঞ্চলিক ভাষা তো এখন প্রায় মৃতু্যর পথে। কথা বলায়, কর্মক্ষেত্রে কিংবা উচ্চ শিক্ষার কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার যেন ক্রমশ কমেই যাচ্ছে। পৃথিবীতে এমন কোনো রাষ্ট্র নেই যারা ভাষার জন্য রাজপথে জীবন দিয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান সরকার ১৯৫৬ সালে বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে সংবিধানে উলেস্নখ করতে বাধ্য হয়েছে। তাই আমাদের উচিত এই ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সেই সাথে আঞ্চলিক ভাষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া। তবেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতি লালন করতে সহজ হবে।
ভাষার যথাযথ প্রয়োগ ও ইতিহাস চর্চা জরুরি
মো. নাইম খান
বাংলা বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
বাঙালি জাতির অভ্যন্তরে যে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য লালিত ছিল কার্যত ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে অথচ বর্তমানে ২১ ফেব্রম্নয়ারিকে অনেকে কেবল একটি অনুষ্ঠান হিসেবে জাহির করছে। ঢাকঢোল পিটিয়ে, শাড়ি, পাঞ্জাবি পড়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ফুল দিতে আসে শহীদ মিনারে। যে গর্ব আমরা বুকে লালন করি তাকে কলঙ্কিত করছে কিছু নির্লজ্জ। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট দিনে খালি পায়ে মিনারে ফুল দেওয়ার সংস্কৃতি হয়ে গেছে আমাদের সম্মান জানানোর মাধ্যম। অথচ সারা বছর পায়ে জুতা দিয়ে শহীদ মিনারে উঠে নোংরা করে রেখে আসার সময় বিন্দুমাত্রও ইতিহাস চর্চা হয় না। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সম্পর্কে জানে না? বই-পুস্তকে পুঁথিগত বিদ্যাটাও অর্জন করতে দেখা যায় না অনেকের মাঝেই। সঠিক ইতিহাস ও ভাষার যথাযথ প্রয়োগ পারে ভাষা শহীদের ও বাংলা ভাষার মর্যাদা দিতে। আমাদের সবার উচিত ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ভাষা দিবসের গুরুত্বকে উপলব্ধি করা।