প্রাচ্যের ভেনিসখ্যাত বরিশালের কোলঘেঁষে অবস্থিত দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠবিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ দিকের ফটক পার হলেই নজর কাড়ে ভোলা রোড নামে খ্যাত প্রায় ১১ কিলোমিটারের একটি মহাসড়ক। ভোলা-বরিশাল আঞ্চলিক এই মহাসড়কটি যেন সবুজ সমারোহের এক অপূর্ব নিদর্শন। মহাসড়কের দুই পাশে বিস্তার করছে শত শত গাছ। মসৃণ পিচঢালা পথের দু'পাশে সারি সারি গাছ, একে অপরের সঙ্গে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে মহাসড়কটি যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বেড়েছে বহুগুণ।
যান্ত্রিক কোলাহলময়, ব্যস্ততার জীবন থেকে ছুটে গিয়ে একটু প্রশান্তির খোঁজ পেতে অনেকেই একাকী কিংবা প্রিয় মানুষের হাতটি ধরে হাঁটতে বেরিয়ে যায় এই পিচঢালা পথে। হাঁটতে হাঁটতে শুনতে পাওয়া যায় পাখির কিচিরমিচির শব্দ। বৃষ্টির মৌসুমে পিচঢালা রাস্তা যখন ধুলাবালি মুক্ত হয় আর গাছের পাতা যখন বৃষ্টির পানিতে স্নান করে সবুজ থেকে গাঢ় সবুজে রূপান্তরিত হয় তখন সৌন্দর্যের মাত্রা ছাড়ায়।
২০১৭ সালে বরিশাল জেলার তৎকালীন ডিসি ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামানের নেতৃত্বে বরিশাল-ভোলা আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রায় তিন হাজার ফুলের গাছ রোপণ করা হয়। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বরিশাল-ভোলা সড়কের হিরণ পয়েন্ট থেকে চরকাউয়া পয়েন্ট পর্যন্ত ৪.৮ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে তিন ধরনের ফুলের বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রায় আড়াই হাজার মানুষ, ৯৬টি এনজিও সংস্থা, সিটি করপোরেশন ও বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে সড়কের দুই পাশে কৃষ্ণচূড়া, সোনালু ও জারুলসহ নানা ধরনের বৃক্ষরোপণ করা হয়। সারি সারি বৃক্ষের পাশাপাশি মহাসড়কটিতে রয়েছে অসংখ্য চায়ের দোকান, স্ট্রিট ফুড, রেস্তোরাঁ আর কাঁচাবাজার।
মূলত এ মহাসড়কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি দর্শনার্থী কিংবা পথিকেরা নিজেদের আনন্দঘন মুহূর্ত জমানো চায়ের আড্ডায় বসে। ভোলা রোডে তেমনি এক চায়ের আড্ডায় কথা হয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী রবিউল খানের সাথে। ভোলা রোড নিয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করতে তিনি বলেন, ভোলা রোড মানেই দু'পাশে সবুজ গাছ আর চায়ের টং দোকানের আড্ডা। ক্যাম্পাসের কোলাহল আর মানসিক চাপ দূরে ঠেলে একটুখানি নীরবতায় নিজেকে খুঁজে পাওয়ার গল্পগুলোর স্মৃতিরোমন্থনের সাক্ষী ভোলা রোড। এখানে দক্ষিণের হাওয়া যখন পূর্বের দমকা হাওয়ার সাথে মিলিত হয় তখন সৃষ্টি হয় এক অন্যরকম পরিবেশ। এ ছাড়া বৃষ্টিস্নাত পথ যেন চেয়ে থাকে আমার অস্তিত্ব জানানোর জন্য। শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন হাঁটতে যাই এ পথ ধরে তখন নিজেকে মনে হয়- আমি আছি নিস্তব্ধতায়, নীরবতায়।