'ওগো তুমি কোথা যাও কোন বিদেশে! বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে!' সোনার তরী কাব্যগ্রন্থের বেশিরভাগ কবিতায় পদ্মাপাড়ের পলিস্নপ্রকৃতি, মানুষের সুখ-দুঃখ জীবনধারার গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। আজ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নেই কিন্তু রয়েছে তার স্মৃতিবিজড়িত রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি। গ্রামীণ পরিবেশ আর মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আচ্ছাদিত রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত একটি ঐতিহাসিক স্থান শিলাইদহ কুঠিবাড়ি। কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলায় পদ্মা নদীর তীরঘেঁষে এর অবস্থান। বিরাহিমপুর জমিদারির সদর কাচারি ও জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে কুঠিবাড়ির জন্য শিলাইদহ বিখ্যাত।
গল্প করছিলাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া, জয়পুরহাট জেলা কল্যাণ সমিতির বার্ষিক বনভোজন ও মিলনমেলা ২০২৩ নিয়ে। আকাশছোঁয়া স্বপ্ন, বুকভরা আশা আর মায়াভরা দৃষ্টি দিয়ে শুরু হওয়া এক নতুন অঙ্গনের নতুন পথচলা। সময় চলে যায়, বছরের পরে বছর কেটে যায়। তবে রয়ে যায় শুধু দুঃখ-সুখের স্মৃতিগুলো, যে স্মৃতিগুলো আমাদের মস্তিষ্কে অনবরত ঘুরপাক খায়। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়াতে জয়পুরহাটের অসংখ্য তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত। ঐক্য, শৃঙ্খলা ও ভ্রাতৃত্বের আরেক নাম জয়পুরহাট জেলা কল্যাণ সমিতি।
স্মৃতির দর্পণে জমে থাকা একটি সুন্দর দিনের কথা বলছিলাম। ফজরের নামাজের পর থেকেই প্রস্তুতি চলছিল। হঠাৎ আমার জেলার বড় ভাই সুমন ভাই এসে ডাকছিল এখনো তোমরা বের হওনি? তাড়াতাড়ি বের হয়ে খাবার না খেয়েই সুমন ভাই, রুমমেট ইউসুফ আর আমি জিয়া মোড়ে গেলাম। দেখি সভাপতি আরিফ ভাই আর তার সঙ্গে দু-একজন মাত্র আছেন। আমরা মনে করেছিলাম সবাই হয়তো চলে এসেছে, আমরা অনেক দেরি করেছি। কিন্তু না হিতেবিপরীত হয়েছে আমরা গিয়েছি, কিন্তু এখনো অন্য কেউ আসেনি। আমরা তিন জন কিছু নাস্তা করলাম। কিছু সময় অপেক্ষা করার পরে একজন একজন করে সবাই প্রায় চলে এলো। প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র বাসে ওঠানো হলে আলস্নাহর নামে যাত্রা শুরু করলাম। মেইন গেটের সামনে মুজিব মু্যরালের পাশে সবাই একফ্রেমে দাঁড়িয়ে গ্রম্নপ ছবি তোলা হলো। সুমন ভাই ছিল ফটোগ্রাফার, তিনি সেদিন অনেক পরিশ্রম করে ধৈর্য ও নিরলসভাবে সবার ছবিগুলো তুলেছিলেন। ছবি তোলা হয়ে গেলে সভাপতি আরিফ ভাইয়ের দিকনির্দেশনায় আমরা আমাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম ভ্রমণ, তাও রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির মতো একটি ঐতিহাসিক জায়গায়। সত্যিই সবার মধ্যে অসাধারণ একটা অনুভূতি কাজ করছিল। বাসের খোলা জানালা দিয়ে পরিবেশের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলো অবলোকন করতে করতে অবশেষে পৌঁছে গেলাম রবি ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত সেই রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে। আমাদের আয়োজনকে সাফল্যমন্ডিত করতে স্যারদের বিশেষ ভূমিকা ছিল। আমাদের জয়পুরহাটের নক্ষত্রস্বরূপ বিপুল রায় স্যার ও ডক্টর কামরুল হাসান স্যারের হৃদয়স্পর্শী বক্তব্য ও ছাত্রদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ সবার হৃদয় কেড়ে নিয়েছিল। শুধু তাই নয় আমাদের বড় ভাই-আপুদের অমায়িক ব্যবহার, স্নেহের বন্ধনে আমাদের সাদরে গ্রহণ, ক্রেস্ট ও স্মরণিকা দিয়ে সবাইকে বরণ করে নেওয়া সত্যিই অসাধারণ একটা অনুভূতি কাজ করছিল। সকাল পেরিয়ে স্মৃতিমাখা মধ্যাহ্নভোজের সময় হয়ে এলো। সেদিনের খাবারটা ছিল অত্যন্ত মজাদার ও সুস্বাদু। দুপুর গড়িয়ে অনুষ্ঠানের প্রথম অংশ আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পূর্ণ হলে আমরা সবাই দলবেঁধে রবি ঠাকুরের কুঠির ভেতরে গেলাম, সেখানে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহার্য অসংখ্য জিনিস ও তার ছবিগুলো দেয়ালিকায় সংরক্ষিত ছিল; সবাই ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। আমরা বিকালে সেখানে আসরের নামাজ পড়ে রওনা দেয় গড়াই নদীর তীরে। গড়াই নদীর তীরে সবাই মিলে কিছু সময় অতিবাহিত করি প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন করে আমরা ক্যাম্পাসে ফেরার জন্য রওনা দিলাম। বাসের মধ্যে লটারি ড্র হচ্ছিল সবার মধ্যে পুরস্কার পাওয়ার একটা উত্তেজনা কাজ করছিল। জাহিদ ভাইসহ অনেকের অসাধারণ সংগীত, কবিতা আবৃত্তি ও হামদ-নাত গাইতে গাইতে ক্যাম্পাসে ফিরলাম। এভাবেই আমরা একটি সুন্দর দিন অতিবাহিত করলাম। এরই মধ্য দিয়ে আমাদের অসংখ্য স্মৃতিবিজড়িত রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির সফরটি খুব আনন্দের সঙ্গে শেষ হলো।