রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সিআরবিতে মনমুগ্ধকর পিঠাপুলির উৎসব

ক্যাম্পাস ডেস্ক
  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
সিআরবিতে মনমুগ্ধকর পিঠাপুলির উৎসব

পিঠাপুলির দেশ বাংলাদেশ। বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে পিঠাপুলি অত্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। ভাতের পর একচেটিয়া বাঙালির খাদ্য সংস্কৃতিতে সবচেয়ে বেশি অভ্যস্ত পিঠাপুলিতে। এ দেশের লোক ইতিহাস-ঐতিহ্যে পিঠাপুলি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। আবহমান কাল থেকে লক্ষ্য করা যায়, পিঠা লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই স্বতন্ত্র ধারা। প্রচলিত পিঠায় ধরে রাখে আত্মীয়বন্ধন। আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি পিঠা পাঠানো এ দেশের সমাজ-সংস্কৃতির বড় একটি রীতি। সমাজে এই রীতি বা নিয়ম পালন হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। পিঠা শীতকালেই মজাদার খাবার হিসেবে দেখা যায় বাঙালির ঘরে ঘরে। জিভের জন্য যে অসাধারণ স্বাদের জোগান দেয়, এর সঠিক বর্ণনা বোধহয় শুধুমাত্র জিভের স্বাদকোরকগুলোর কাছেই লুকিয়ে থাকে।

বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যরা আমরা যেহেতু সবাই লেখালেখি পছন্দ করি, লেখালেখি নিয়ে আমাদের সবসময় আলোচনা হয়। কিন্তু এবারের আড্ডায় লেখালেখি-সংক্রান্ত নয়; বরং পিঠাউৎসব নিয়েই আমরা আনন্দ মেতে উঠেছিলাম। আমাদের যেমন কথা, তেমনিই কাজ। যথাসময় আমরা সবাই সিআরবিতে পৌঁছলাম। সেখানে গিয়ে দেখি উপস্থিত রয়েছেন, বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আজহার মাহমুদ ভাইয়া আর যুবায়ের আহমেদ ভাইয়া, সাবেক কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাসনিম হাসান ও সদস্য সাদিক ইবনে কাদের, আশরাফুল ইসলাম, আরিফুল কাদের, ইসমাইল হোসেন, মো. রাকিব, মুনতাসীর, মো. সায়েম, ওমর ফারুক, জেরিন, আরাফাত, জুনায়েদুর রহমান, ঋতু দে, সাবিহা জামা, রিয়াজ, ফাতেমাতুজ জোহরা, আবদুলস্নাহ, মোহাম্মদ তাহেরসহ আরও অনেকে। এর কিছুক্ষণ পরপরই আমাদের এই শাখার সাবেক অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ এনামুল হক ও বর্তমান অর্থ সম্পাদক রায়হান উদ্দীন হাজির হন। আমরা সবাই গোল করে বসতে বসতে আরও ক'জন নতুন সদস্য এসে উপস্থিত। এরপরই আমাদের পিঠা খাওয়া উৎসব শুরু হয়।

আমাদের পিঠাউৎসব আয়োজনে বিশেষ কিছু পিঠার মধ্যে অন্যতম হলো- বিনি পিঠা, মালপোয়া পিঠা, সিমাই পিঠা, সূর্যমুখী পিঠা, ঝিনুক পিঠা, চিতই পিঠা, খেজুর পিঠা, বিনুনীর মতো গড়া বেনি পিঠা, ঝাল কুশ পিঠা, মিঠে নকশায় সাজানো নকশই পিঠা, পাঁপড়ের আকারের মলকো পিঠা, করলা পিঠা, চঙ্গা পিঠা, মুঠা পিঠা এবং রস চিতই পিঠা।

পিঠা খাওয়া শেষে এক সদস্যকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, এই পিঠাউৎসবে আসতে পেরে যারপরনাই উচ্ছ্বসিত। তার মতে, খাওয়ার চেয়ে এত পিঠা একসঙ্গে দেখার আনন্দই বেশি।

পিঠাউৎসব নিয়ে সাবেক কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, যুবায়ের আহমদ ভাইয়া বলেন, পিঠাউৎসব বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরছে। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে নিজেদের ভেতর সম্প্রীতি গড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়।

এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপদেষ্টা আজহার মাহমুদ বলেন, এমন একটা সময় ছিল যখন আত্মীয়স্বজনদের নিমন্ত্রণ করে পিঠা খাওয়ানোর একটা রেওয়াজ প্রচলিত ছিল। কিন্তু এখন সেসব শুধুই স্মৃতি। শীতের সময় এখন আর বাড়িতে বেড়াতে আসা অতিথিদের পিঠা দিয়ে আপ্যায়িত করা হয় না। এর ফলে দিন দিন পরিবারিক ও সামাজিক বন্ধনের মাধ্যমগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই বন্ধন সুদৃঢ় করতে শহরের নতুন প্রজন্মের কাছে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সব পিঠার পরিচিতি তুলে ধরতে এই উৎসবের সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য রয়েছে।

কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাসনিম হাসান মজুমদার এই পিঠাউৎসবে এসে বলেন, শহরের ফুসফুসখ্যাত সিআরবিতে চট্টগ্রামের স্বনামধন্য কলেজ থেকে আমরা কয়েকজন পিঠাউৎসবে উপস্থিত হয়েছিলাম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যরা বাহারি পিঠার পসরা সাজিয়েছিল। পেটপুরে খেয়েছিলাম। স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। আশা করছি, সামনেও চট্টগ্রামের সদস্যরা নিত্যনতুন আয়োজন নিয়ে উপস্থিত হবে। শুভ কামনা তরুণ তুর্কিদের জন্য।

এরপর সাবেক অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ এনামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের ইতি টানে। এরপর সবাই তৃপ্তি নিয়ে ফিরেছি যার যার বাসায়। শীতের সকালের কুয়াশা কিংবা সন্ধ্যার ঠান্ডা বাতাসে ভাপা পিঠার গরম আর সুগন্ধি ধোঁয়ায় মন ব্যাকুল হয়ে যায়। সরষে বা ধনে পাতার বাটা অথবা শুঁটকির ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা মুখে দিলে শরীরের শীত অনেকটাই কমে যায়। তাই বলা যায়, পিঠা ছাড়া শীত সত্যিই জমে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে