রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বই ও বইমেলা নিয়ে তরুণ প্রজন্মের ভাবনা

পৃথিবীতে অনেক মেলা হয়ে থাকলেও বইমেলা আমাদের সবার কাছে বেশ জনপ্রিয়। কারণ একে এক কথায় বলা চলে জ্ঞান চর্চার মেলা। একটি দেশ তখনই উন্নতি লাভ করে যখনই সে দেশের মানুষ নিজের ভাষা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি দ্বারা পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করে। আর বইমেলা হলো সেই জ্ঞান অর্জনের পথপ্রদর্শক। তাই বইমেলা নিয়ে একঝাঁক মেধাবী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর মতামত জানাচ্ছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাদের হোসেন ভূঁইয়া।
  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বই ও বইমেলা নিয়ে তরুণ প্রজন্মের ভাবনা

মানসম্মত লেখক সৃষ্টি হওয়া প্রয়োজন

সায়মা রহমান সেঁজুতি

প্রাণিবিদ্যা বিভাগ

ফেনী সরকারি কলেজ।

বইয়ের কথা বললে আসে কাগজের কথা, লেখক, প্রকাশক, লাইব্রেরি ও বুকশপের কথা। বই এমন একটি প্রণালি যা কেবলমাত্র পাঠ্যবস্তুই নয়, এটি পাঠক এবং শব্দের মধ্যে আত্মীয়তা সৃষ্টি করার মাধ্যম। বাংলাদেশের বইমেলা লেখক, পাঠক ও প্রকাশকের জন্য নিঃসন্দেহে এক মিলনমেলা। বই মানব সভ্যতার অন্যতম প্রাণসত্তা। আগে যেমন বই এবং বইমেলার প্রতি মানুষের আকর্ষণ ছিল বর্তমানে সেই আকর্ষণ অনেকাংশে কমে এসেছে। আজকের দিনে খুব কম সংখ্যক মানুষ বই কেনেন। বর্তমানে সব বয়সের মানুষ বিশেষ করে কিশোর ও তরুণ প্রজন্ম মোবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদির প্রতি এতটাই আসক্ত যে তারা বই পড়া উপভোগের পাশাপাশি তাদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশেও পিছিয়ে রয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে অনেক নতুন লেখকের আবির্ভাব ঘটেছে যাদের মধ্যে কিছু কিছু লেখকের লিখা বইয়ের মধ্যে রুচিবোধের অভাব, শব্দ চয়নে অপরিপক্ব, মানসম্মত নয় যা পাঠকের মনকে ছুঁতে পারে না। এসব বইয়ের আধিক্য বর্তমানে এতটাই বেশি যে পাঠকদের বইয়ের প্রতি আকর্ষণ কমে যাচ্ছে। তাই মানসম্মত লেখক সৃষ্টি হতে হবে। তবেই বইমেলা পাঠক নন্দিত হবে।

\হ

রূপ চর্চিত বইমেলা

ইমরান আরেফিন

অর্থনীতি বিভাগ

সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।

অমর একুশে বইমেলা বাঙালি জাতি, বাংলা ভাষার এক অন্যন্য আবিষ্কার যেখানে নবীন, প্রবীণ লেখকদের মিলনমেলা। বইমেলা একটি জাতীর সংস্কৃতির, ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। বই সম্পর্কে ফরাসি দার্শনিক দেকার্তে বলেন- 'ভালো বই পড়া মানে গত শতাব্দীর সেরা মানুষদের সঙ্গে কথা বলা।' কিন্তু প্রশ্ন হলো আমর একুশে বইমেলা তার জৌলুস কতটা ধরে রাখতে পেরেছে? দিনকে দিন বইয়ের সংখ্যা, পাবলিকেশন্সের সংখ্যা বাড়লেও গুণী লেখদের হাহাকার। এ যেন এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা, এক অসুস্থ সংস্কৃতি চর্চা। সদ্য নাম কামানো এক শ্রেণি প্রকাশ করে ফেলছে তাদের বই, আর তাদের ভিড়ে চাপা পড়ে যাচ্ছেন অনেক প্রতিভাবান লেখকরা। তাই বইয়ের গুণগতমান পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি নবীন লেখক, পাঠক, সমালোচককে পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে উৎসাহিত করতে হবে। তবেই অমর একুশে বইমেলা তার সৌন্দর্যে বিকশিত করবে আমাদের বাংলা ভাষাকে বাঙালির সংস্কৃতিকে।

বইমেলা পাঠকের জ্ঞানপিপাসা জাগ্রত করুক

নাজমুল হক বিক্রম

লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

পৃথিবীতে যত ধরনের মেলার আয়োজন হয় তার মাঝে বইমেলাই সর্বোৎকৃষ্ট, যেখানে জ্ঞানের চর্চা হয়। সারা দেশের জ্ঞান তাপসরা ভিড় করেন লেখক অথবা পাঠকের বেশে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে বইমেলার জৌলুস অনেকটাই ম্রিয়মাণ হয়ে এসেছে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে। যার পেছনে জ্ঞানপিপাসা কমে যাওয়াই সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। অধিকাংশ তরুণই অনলাইন দুনিয়ায় ব্যস্ত যাদের কাছে বই অথবা বইমেলা আলাদা কোনো তাৎপর্য বহন কওে না। তদুপরি অধিকাংশ অভিভাবকও বই পড়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন নন। প্রতিটি ভালো বই আমাদের চিন্তার জগতকে বিকশিত করতে সাহায্য করে। অনলাইন জগৎ আমাদের জীবনকে যতই সহজ করুক, কখনোই বইয়ের বিকল্প হতে পারে না। জ্ঞানার্জনের সবচেয়ে কার্যকরী পন্থা হচ্ছে বইয়ের রাজ্যে হারিয়ে যাওয়া। তরুণ প্রজন্মের কাছে জ্ঞানপিপাসা ফিরিয়ে আনাটাই বর্তমানে বইমেলার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

শিশুদের বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে

মেহেরুন ইসলাম

শিশু সাহিত্যিক

সিনিয়র স্টাফ নার্স

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

বইমেলা এ যেন এক প্রাণের মেলা! লেখক, পাঠক ও প্রকাশকের মিলনায়তন, বহুল কাঙ্ক্ষিত একটি চাওয়া। বছর ঘুরে ফেব্রম্নয়ারি আসে শহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণে, সঙ্গে আনে বইমেলাও। ভাষার মাসেই প্রাণের বইমেলা, কী সুন্দর এক মেলবন্ধন!

আজকাল মানুষ তেমন বইকেনে না। অধিকাংশই বই-বিমুখ। মানুষ আধুনিক প্রযুক্তির গোলক ধাঁধায় আটকে আছে। নতুন বই, নতুন পাতা, মোহনীয় গন্ধ- তাদের আর আকৃষ্ট করে না। বিশেষ করে শিশুরাও ডিভাইস আসক্ত। গেমস, কার্টুন নিয়েই পড়ে থাকে সারা বছর। একাডেমিকের বাইরে কিছুই জানে না। তাদের জ্ঞান-বুদ্ধিও সীমিত। তাই এসব থেকে আমাদের বের হতে হবে। নিজেও বই পড়তে হবে, পাশাপাশি শিশুদেরও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। রঙিন ছবি, সুন্দর প্রচ্ছদে সাজানো ছড়া, গল্পের বইগুলো তুলে দিতে হবে শিশুদের হাতে। নতুন প্রজন্মের বিকাশে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই।

বই পড়ার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে

হৃদিতা রায় বহ্নি

বাংলা ও সাহিত্য বিভাগ

সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।

বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। বলা যায় বইপ্রেমী মানুষের জন্য একপ্রকার উৎসব। মানুষ কখনো বই পড়ে কল্পনার জগতে হারিয়ে যায়। আবার কখনো কঠিন বাস্তবতা অনুধাবন করতে শেখে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ছেলেমেয়েরা বই পড়ার প্রতি অনাগ্রহ প্রকাশ করছে। এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে দেখা যায় মোবাইলের আসক্তি। মোবাইল গেম খেলা কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অধিক সময় কাটানোর ফলে ছেলেমেয়েরা ক্রমাগত বই পড়ার অভ্যাস থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। বই পড়ার মাধ্যমে একটি মানুষের চেতনাবোধ জাগ্রত হয়। অবসর সময়ে একটি বই পড়ার মাধ্যমে অজানা বিষয় নিয়ে জানা যায়। বহু বছর ধরে হয়ে আসা এই বইমেলাতে অনেক মানুষের সমাগম হয়। প্রিয় লেখকের বই কিনতে উৎসুক মানুষ আগ্রহ প্রকাশ করে। তবে অতীতের বইমেলা আর সাম্প্রতিক সময়ের বইমেলার মধ্যে কিছু ব্যবধান তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার করার কারণে মানুষ আজ বইবিমুখ হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের মধ্যে বই পড়া নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। বই পড়ার গুরুত্ব নিয়ে সেমিনার আয়োজন করা যেতে পারে। ভাষার মাসে এই বইমেলা বাঙালির চিরকালের ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে আমাদের সবাইকে বই পড়ার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

লেখক-পাঠকের সম্মিলন প্রয়োজন

জোবাইদুল ইসলাম

শিক্ষার্থী, আরবি বিভাগ,

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

বইমেলা বইপ্রেমীদের প্রাণের মেলা। প্রতি বছর ফেব্রম্নয়ারি মাস এলেই বইপ্রেমীরা ছুটে আসেন বইমেলাতে। রাজধানী শহর ঢাকাসহ প্রতিটি শহরেই বইমেলার আয়োজন করা হয়। এসব বইমেলাতে বিভিন্ন প্রকাশনী নান্দনিকরূপে স্টল সাজিয়ে যেমন পাঠককে আকৃষ্ট করতে পারে তেমনি ভালো মানের বই প্রকাশ করে পাঠকদের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে পারে। এক্ষেত্রে তারুণ্যকে বইমেলা এবং বইপড়ার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে প্রয়োজন লেখক-পাঠকের সম্মিলন। একজন তরুণ-তরুণী যখন বইমেলাতে এসে তার প্রিয় লেখক-লেখিকার হাত থেকে অটোগ্রাফসহ বই নেবে তখন বইটি পড়ার প্রতি তার অন্যরকম একটা আগ্রহ কাজ করবে।

এছাড়া শিশুদেরকেও বইমেলায় নিয়ে আসতে হবে। বইমেলায় শিশুদের পাঠোপযোগী হরেক রকম বই পাওয়া যায়। শিশুদের স্মার্টফোনমুখী না করে বইমুখী করতে বইমেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সবশেষে, বইমেলা হোক তারুণ্যের প্রাণের মেলা, বইমেলায় সম্মিলন ঘটুক লেখক-পাঠকের এই কামনা করি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে