শৈশব : আমাদের জীবনের দূরন্ত সময়
প্রকাশ | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
হুসাইন আহমদ
আমাদের জীবনের এক অনন্য ও দূরন্ত সময় হচ্ছে শৈশব। শৈশবের সময়টাতে সাথীদের সঙ্গে খেলাধুলা করা, দুষ্টু-মিষ্টি দুষ্টুমিগুলো দলবদ্ধভাবে করা ও মজা করা ছিল আমাদের রোজকার রুটিন। আর বাড়ির আশপাশে অবস্থিত নদীরপাড়ে নিয়ম করে খেলাধুলা, আনন্দ-ফূর্তি করা ছিল আমাদের মনের জন্য সজীবতাস্বরূপ। তখনকার সময়গুলো সত্যিই বেশ আনন্দের ছিল। এই যেমন নিয়ম করে খেলাধুলা ও দুষ্টু-মিষ্টি দুষ্টুমিগুলো করার পরও আমাদের জীবনে ছোট বড় আশা ছিল। স্বপ্ন ছিল। বড় হওয়ার ইচ্ছে ছিল। মানুষ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল। দিন যত অতিবাহিত হতো, বড় হওয়ার ইচ্ছে ও স্বপ্নগুলো ততই আকর্ষণ করত। তন্মধ্যে মৌলিক এই ইচ্ছেটা সবার বেশি ছিল যে, জীবনে পড়াশোনা করতে হবে। বড় হতে হবে। যা ইচ্ছে করবে তাই পেতে হবে। মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। আরও কত কি।
হ্যাঁ, সে সময়ের স্বপ্ন ও চাহিদাগুলো অনেকটা এলোমেলো। তবুও দেখা হতো। কারণ শৈশব জীবনের দূরন্ত সময়। কেউ স্বপ্ন দেখতাম; অনেক বড় হবো, বড় হয়ে পড়াশোনা করব। ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার হব। নিজের ও বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করব। আবার কেউ স্বপ্ন দেখতাম; পড়াশোনা করব, করে অনেক বড় হব, ইত্যাদি ইত্যাদি। তেমনি আরও দশজনেরও স্বপ্ন ছিল; পড়াশোনা করব ও মানুষের মতো মানুষ হব। কিন্তু ঠিকই আমাদের প্রত্যেকের দিন সেই আগের মতোই শুরু করতাম ও শেষ করতাম। তেমনি আমাদের একদিনের ঘটনা; সময়টা পড়ন্ত বিকেল। সূর্যের আভা ছড়িয়ে আছে প্রকৃতির মায়াবি মুখে। সবাই মিলে নদীর পাড়ে বসে আছি। নদীর গা ঘেঁষা গাছের বাড়ন্ত পাতাগুলোর নড়াচড়া ও বাতাসে দোল খাওয়া উপভোগ করছিলাম। পাখিদের মিষ্টি মধুর কলরবে উড়ে যাওয়া দেখছিলাম। এ সবকিছু দেখতে দেখতে হঠাৎ ভাবনার জগতে চলে গিয়েছিলাম। আর আফসোস করছিলাম যে, ইশ! আমিও যদি পারতাম যেতে, ওই পাখিদের সঙ্গে, স্বপ্নের ভুবনে, দূর কোনো অচেনা পথে! কিন্তু অসম্ভব আর অসাধ্য অক্ষমতার দুয়ার পেরিয়ে তো যাওয়া সম্ভব না। তাই ভাবনাগুলো হৃদয়ের রঙিন পাতায় আঁকতে থাকলাম। যেই স্মৃতিগুলো আজও হৃদয়ের মণিকোঠায় জমা হয়ে আছে। মাঝে মধ্যে পাতাগুলো খুলে দেখি। অনুভব করি এক অদ্ভুত প্রশান্তি।
তেমিন মনখারাপের মনখারাপ হলে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। আর ভাবতাম, হয়তো আকাশ চুপিসারে বলছে- তুমি আমার দিকে তাকিয়ে থাক কেন? মেঘমালার দিকে তাকিয়ে থাক কেন? আর নিস্তব্ধ হয়ে পড় কেন? আমরা তো সময়ের মতোই বাধাহীন। সময় যেমন কারও জন্য অপেক্ষা করে না। শত কামনা-বাসনা তুচ্ছ করে চলে যায় অবিরাম গতিতে। সময়কে তো আর দেখা যায় না। বরং মেঘমালাকে দেখা যায়। তাই তোমরা এই মেঘমালা দেখেই উপলব্ধি কর। আর ভেবে নাও এই মেঘের মতোই সময়। আর তা এখন মেঘমালা হয়ে চলে যাচ্ছে। মেঘমালা সময়ের চলন্ত রূপ নিয়ে সবকিছু পেছনে ফেলে চলে যাচ্ছে। তুমিও সেভাবে জীবনের সব অবসন্নতা, জড়তা, ব্যথা-বেদনা, দুঃখ-হতাশা, অপ্রাপ্তির বঞ্চনা আর না পাওয়ার বেদনা ও নিরাশার প্রাচীর মাড়িয়ে এগিয়ে যাও সম্মুখপানে।
অতঃপর সেই শৈশবে আমরা মনে মনে নিয়ত করলাম যে, সময় যেমন থেমে থাকে না আমরাও নিশ্চল ভাবনার মাঝে ডুবে থাকব না। আজ থেকে আমরাও সময়ের সঙ্গে মিতালী করব। তারা চলে যাচ্ছে যাক, তাতে কি? আমরাও তার সঙ্গে পালস্না দিয়ে এগিয়ে যাব। জীবন গড়ব। আর আমরাও আকাশের মতো উদার, পাখির মতো স্বাধীন, সাগরের মতো বিশাল মনের অধিকারী হওয়ার চেষ্টা করব। আর অপসংস্কৃতির অন্ধকার দূরীভূত করে, সন্ধ্যার আঁধারে আলো ছড়ানোর চেষ্টা করব। মানুষের মতো মানুষ হব। মোটকথা, শৈশব : আমাদের জীবনের দূরন্ত সময়। এই দূরন্ত সোনালি সময়গুলো ও ভাবনাগুলো থেকে আমরা শিক্ষাগ্রহণ করব এবং সে অনুযায়ী জীবন গড়ার চেষ্টা করব।