ইবি ক্যাম্পাসজুড়ে শীতের আমেজ

প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

ওয়াসিফ আল আবরার
বাংলাদেশে ঋতুবৈচিত্র্যে শীতকাল একটি বিশিষ্ট ঋতু। হেমন্তের মাঝামাঝি সময় থেকেই শীতের আমেজ অনুভূত হয়। কুয়াশা মলিন রাতের আকাশ বেয়ে অবিরাম ঝড়ে বিন্দু বিন্দু শিশির। মুক্তো বিন্দুর মতো অজস্র শিশিরকণা টলটল করে ঘাস, লতাপাতা, ক্ষেতের ফসল এবং বৃক্ষরাজির পত্রে-পুষ্পে। কুয়াশাচ্ছন্ন শিশিরভেজা সকালের প্রকৃতিকে মনে হয় নিদারুণ বিমর্ষ। বইতে থাকে উত্তরে হিমেল হাওয়া। সবুজে ঘেরা ১৭৫ একরের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শীতের আমেজ কিঞ্চিত আলাদা। ভোরবেলায় সবুজ ঘাসের ওপর সূর্যের হালকা লালচে রংয়ের আলো পড়ে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় প্রতিটি ঘাসের মাথায় যেন মুক্তোদানার মতো শিশির কণা জমে আছে। সকালবেলা শিশিরে ভেজা আর ঘন কুয়াশা চাদরে আবৃত শীতের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য থাকে দেখার মতো। কুয়াশার চাদরে মোড়ানো সকালটায় যখন কম্বলের তলায় গুটি শুটি হয়ে আরেকটু ঘুমানো হয় না, তখন বাইরের স্নিগ্ধ সকাল মুদ্ধ করে অনেক শিক্ষার্থীকে। আড়মোড়া ভেঙে ঘুম ঘুম চোখে আরামের ঘুম হারাম করে ক্লাসে যেতে না চাইলেও ক্যারিয়ারের তাগিদে ক্লাসে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের। শীতের অলস সকালে রাস্তার দু'পাশজুড়ে বৃক্ষের সবুজ আদরকে সঙ্গী করে ছুটে চলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। শৈত্যপ্রবাহের সময়ে সকাল ৯টার ক্লাসে শিক্ষকদের লেকচারগুলো যেন আরও শীতলতা ছড়ায়। ক্লাসের জন্য ছুটে চলা তরুণদের মাঝে ভোরের কুয়াশাকে ঠেলে এক টুকরো মিষ্টি রোদের হীরক ঝিলিক যখন গায়ে লাগে তখন মনে তৈরি হয় এক ভালোলাগার মোহ। প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি এখানকার অধিবাসীদের অকৃত্রিম ভালোবাসা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক গ্রামে পরিণত করেছে। বিভিন্ন হলের সামনে তৈরি করা হয়েছে ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্ট। বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে খেলা। বিকাল থেকে জিমনেসিয়ামে এবং সন্ধ্যা হলেই হলের টিভি রুমে সময় কাটান শিক্ষার্থীরা। শীতের রুক্ষ আর শুষ্ক প্রকৃৃতি নাকি রং-রূপহীন। অথচ এ ক্যাম্পাসে রূপ-লাবণ্যের কোনো ঘাটতি হয় না কখনোই। শীতে ক্যাম্পাসের প্রকৃতি ও পরিবেশ সেজে ওঠে অন্যরকম সাজে। ডায়না চত্বর, মীর মশাররফ ভবনের প্রতিটি রাস্তার দুই পাশ, বিবিএ অনুষদ, প্যারাডাইস রোডের দু'পাশ ভরে উঠছে ফুলে ফুলে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আমবাগান, লিচুবাগানসহ আরও বিভিন্ন জায়গায় সকালের হালকা কুয়াশায় ঢেকে থাকে পুরো এলাকা। গাছগুলোকে দেখে মনে হয় শীতের চাদরে ঢাকা পড়েছে সব সৌন্দর্য। ক্লাসের পরে শিক্ষার্থীরা একটুকু মিষ্টি রোদ উপভোগ করার জন্য দল বেঁধে খুঁজতে থাকে রৌদ্রময় বসার স্থান। কুয়াশাকে পাশ কাটিয়ে বৃক্ষের পুষ্পরাজির ফাঁক গলে সূর্যের কিরণ ছাত্রছাত্রীদের গায়ে লাগার আনন্দের অনুভূতি ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়। মিষ্টি রোদের আলিঙ্গন মাখতে কেউবা কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে কেউবা শহীদ মিনারে, কেউ বসে ডায়না চত্বরে। শীতের সকালের অন্যতম সরগরম স্থল ক্যাম্পাসের বটতলা এবং বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনের সিঁড়ি ও ছাদ। সকালে ঘুম ঘুম চোখে এসে প্রথম ক্লাস শেষ করেই শিক্ষার্থীরা চলেন আসেন এই দু'টি জায়গায় কুয়াশাজড়ানো সকালে নরম রৌদ্রের স্নিগ্ধতা উপভোগ করতে। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাসে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ব্যাডমিন্টন ও ক্রিকেট খেলা। রোদের তেজ কম থাকায় ফুটবল মাঠ, ক্রিকেট মাঠ, আমতলায় দিনব্যাপী চলে ক্রিকেট খেলা। শর্ট পিচ ক্রিকেটের প্রতিই শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সবগুলো আবাসিক হলেই কাটা হয়েছে ব্যাডমিন্টনের কোর্ট। বিকেলে জিমনেসিয়ামে এবং মধ্যরাত পর্যন্ত অধিকাংশ হলের কোর্টেই চলে ব্যাডমিন্টন খেলা। অতিথি পাখির আনাগোনা, ঝরে যাওয়া গাছের পাতা, ভোরের গাড় সূর্য, শিশিরভেজা ঘাস, ঘাসের ডগায় টলমল করা শিশির বিন্দু, প্রজাপতির ওড়াউড়ি, পাকপাখাল মৌমাছির গুঞ্জন আর নুইয়ে পড়া ধানের ডগায় মোহনীয় হয়ে ওঠে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৫ একর। জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থী অমিন্তা বলেন, শীতে ইবি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যের প্রেমে পড়তে যে কেউ বাধ্য, আমিও তার ব্যতিক্রম নই। এ যেন এক রূপ পরিবর্তনের খেলা যা সকাল থেকে রাত অবধি শীত ক্যাম্পাসে রূপ পরিবর্তন করতে থাকে। ভোরের কুয়াশাকে আলিঙ্গন করে ক্লাসের দিকে যাওয়ার সময় এক টুকরো মিষ্টি রোদের হীরক ঝিলিক যখন কুয়াশার বিন্দুগুলো থেকে অপলক বিচ্ছুরিত হতে থাকে, তা মনে তৈরি করে এক ভালোলাগার মোহ। ফারহানা নওশীন তিতলি বলেন, গ্রিন ক্যাম্পাস খ্যাত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকাল মানেই কুয়াশার চাদরে ঢাকা অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি। শীতকালকে এত চমৎকারভাবে হয়তো আর কোথাও উপভোগ করা যাবে না এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া। ক্যাম্পাসের অপরূপ সৌন্দর্যকে শীতকালের কুয়াশা নতুন করে সাজিয়ে তোলে। টং দোকানের গরম চায়ের সাথে বন্ধুত্বের আড্ডা জমিয়ে তোলে এই ঋতুকে। ক্যাম্পাস থেকে চলে গেলে এই শীতকালকেই হয়তো সবচেয়ে বেশি মিস করব। হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শাকিল আহমেদ বলেন, শীতকাল মানেই অন্যরকম একটি আমেজ। আমার ক্যাম্পাসে শীত যেন এক অপূর্ব চিত্র, যেখানে প্রকৃতির প্রশান্তি এবং শীতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারা হয়। শীতকালে এই ক্যাম্পাসে শিশিরের স্নিগ্ধতা, সবুজ ঘাস আর গাছের পাতা থেকে ঝরে পড়ার যে অনুভূতি তা অদ্বিতীয়। শীতকালে আমাদের ক্যাম্পাস কুয়াশার চাদরে যেভাবে আবৃত হয় তা সত্যি মনোরম। ১৭৫ একরে যে প্রকৃতির অতুলনীয় সৌন্দর্য মিশে আছে তা উপলব্ধি করা যায় এই শীতের সময়ে।