যে বার্তা দেয় কুয়াশা উৎসব
প্রকাশ | ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শাহ বিলিয়া জুলফিকার
'এসেছে শীত গাহিতে গীত বসন্তেরই জয়'- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথার্থই বলেছেন। কেননা ষড়ঋতুর এ দেশে শীত হলো অন্যতম প্রধান ঋতু। শীতের আগমনী বার্তা মানেই পিঠা-পুলি, খেজুর রস, রঙবেরঙের শাকসবজি আর সরষে ক্ষেতের হলুদ গালিচার চোখ ধাঁধানো দৃশ্য। প্রতিদিন ভোরে নজরে কেড়ে নেয় শিশির ভিজা ঘাস। শীতের সকালে কুয়াশার চাদরে আবৃত থাকে চারপাশ। এজন্যই হয়তো পলস্নীকবি জসীম উদ্দীনও বলেছিলেন 'ঘুম হতে আজ জেগেই দেখি শিশির-ঝরা ঘাসে/ সারা রাতের স্বপন আমার মিঠেল রোদে হাসে।'
সাধারণত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত শীতকাল। এই শীতকালে দেশব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। তবে গ্রামীণ ও শহুরে জীবনভেদে শীতের আমেজে রয়েছে ব্যাপক ফারাক। প্রকৃতপক্ষে নাগরিক কোলাহলের বাইরে গ্রামীণ পরিবেশেই ঘটে শীতের আত্মপ্রকাশ। শীতের আমেজ গ্রামীণ সাদাসিধে জীবনেই বেশি উপভোগ্য। শীত ও শীতের কুয়াশাকে বরণ করে নিতে এবং সেই সঙ্গে নাগরিক জীবনে থেকেও গ্রামীণ পরিবেশ উপলব্ধি করতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন করা হয়েছে। 'হারাবার আগে পায়ে মাখো শিশির, কুয়াশার মাঠে বাড়ুক প্রাণের ভিড়' স্স্নোগানকে সামনে নিয়ে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ১০ ও ১১ ডিসেম্বর দুই দিনব্যাপী 'কুয়াশা উৎসব-১৪৩০'। আবহমান গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে উৎসবে ছিল কুঁড়েঘর, পালকি, পালাগানসহ গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী নানা আয়োজন। সর্বত্রই ছিল বাঙালি সংস্কৃতিকে তুলে ধরার প্রয়াস। দু'দিনব্যাপী এই উৎসবটি ১০ ডিসেম্বর যন্ত্র সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন হয়। দু'দিনব্যাপী এ উৎসবে ছিল রাগসঙ্গীত, রবীন্দ্র সঙ্গীত, পিঠা পার্বণ, অধিবাসী নৃত্য, কবিতা, সাহিত্য আড্ডা, পালা, নজরুল শ্রদ্ধাঞ্জলি, লোকনৃত্য, ফোরকাস্ট, গঞ্জে ফেরেশতা, মাদল, রম্য বিতর্ক, ক্যাম্পাস গানের দল, মৈমনসিংহ গীতিকার শতবর্ষ উদ্যাপন, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, মঞ্চ সমাপনী ও সমাপনী কীর্তন। তাছাড়া মূল আকর্ষণ ছিল কবিতা প্রহরী, মুয়ীয মাহফুজ, কফিল আহমেদ, সহজিয়াসহ আরও অনেকেই। কুয়াশা উৎসবে অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ছিল নানা রকম পিঠাপুলি, চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, বই ও গহনার দোকান। পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ছিল চিত্রকলা, আলোকচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। এসব আয়োজনের মধ্য দিয়েই উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল নজরুল তীর্থ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুধুমাত্র শিক্ষার্থীই নন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কুয়াশা উৎসবকে উপভোগ করতে অনেকেই ছুটে এসেছিলেন ক্যাম্পাসে। সেই সঙ্গে ছিল সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের একত্রে উৎসব উদযাপনের সুভাগ্য। প্রতিটি শিক্ষার্থীই কুয়াশা উৎসবকে আনন্দ ও উদ্দীপনার সঙ্গে উপভোগ করেছে। তবে বিশেষ করে সদ্য ভর্তি হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দীপনা ছিল একটু বেশি। উৎসব কেমন কেটেছে জানতে চাইলে নবীন শিক্ষার্থী ব্যবস্থাপনা বিভাগের নাঈম আহমেদ রাহী বলেন, 'আমার কুয়াশা উৎসবের অনুভূতি চোখের কোনায় এখনো উজ্জ্বল ক্যানভাসে ভাসে। বিবিএ ফেকাল্টির ৯তলা থেকে কেন্দ্রীয় মাঠ এর নতুন রূপ দেখে বিমোহিত হয়েছিলাম। আমরা ১৭তম ব্যাচ আসার তিন মাসেই এমন অসাধারণ এক আয়োজন পেয়েছি।' আনন্দঘন সময় আর কুয়াশা উৎসব চলে গেলেও, কুয়াশা যে বার্তা দিয়ে গেল তা ভুলতে চাই না। প্রত্যাশা করি, আমরা আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য ও বাংলা সংস্কৃতিকে ভুলে যাব না। বরং গ্রামীণ ঐতিহ্য আর বাংলা সংস্কৃতিকে বুকে ধারণ করে, শীত ও শীতের কুয়াশাকে বরণ করে নেব। সেইসঙ্গে আপন কওে নেব কুয়াশা উৎসবের মতো নানা উৎসবকে।