শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

৩২ একরে পুনরায় জীবন্ত হলো নকশিকাঁথার মাঠ

হুমায়রা রহমান সেতু
  ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
৩২ একরে পুনরায় জীবন্ত হলো নকশিকাঁথার মাঠ

'আজিকে রুপার কোন কাজ নাই, ঘুম হতে যেন জাগি,

শিয়রে দেখিছে রাজার কুমারী তাহারই ব্যথার ভাগী।

সাজুও দেখিছে কোথাকার যেন রাজার কুমার আজি,

ঘুম হতে তারে সবে জাগায়েছে অরুণ-আলোয় সাজি।'

বাংলা ভাষার অমর আখ্যানকাব্য নকশিকাঁথার মাঠকে ৩২ একরের বুকে পুনরায় জীবন্ত করে তুলল একঝাঁক সাহিত্য পিপাসু। শব্দ প্রীতির ছকে বাঁধা পড়ে ১৯২৯ এর কাব্যউপন্যাসটিকে প্রায় ১ শতাব্দী পরে আবারও জাগিয়ে তোলে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২৭ ব্যাচের পঞ্চম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা।

যান্ত্রিকতাময় শহুরে জীবনকে পাশ কাটিয়ে সবুজ বৃক্ষরাজির গবি প্রাঙ্গণ যেন বাহারি বাতায়নকে ভেদ করে ফিরে যায় সেই পলস্নীকবি জসীমউদদীনের নকশিকাঁথার মাঠে। যার পরতে পরতে ভালোবাসার সুতোয় বুনা লোকজ জীবন গাঁথা।

কোর্স ক্রম:ব-৩৫০৫, জসীমউদ্‌দীন (গদ্য ও পদ্য) এর নকশিকাঁথার মাঠ কাব্যগ্রন্থ অবলম্বনে ২৯ ডিসেম্বর আয়োজন করা হয় এই উপস্থাপনা পর্বের।

নির্ধারিত তারিখে সেমিস্টারটিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা নিজেদের টেনে নিয়ে যায় শত সহস্র দিন পিছিয়ে যেখানে তাদের দেখা মেলে সাজু ও রুপায়ের বেশে। হাতে ও পায়ে আলতা চিকন পাড়ের সুতোর শাড়ি। হাত ভর্তি কাচের চুরি। গ্রাম্য বালার চিকন বিনুনি যেন পলস্নীকবির নিজের হাতে লেখা।

উপস্থাপনা যদিও নম্বরভিত্তিক ছিল সেই নম্বরের দিকে ছিল না কারো ঘোর। সবাই যেন হারিয়ে গিয়েছিল পলস্নীর সেই পরতে পরতে। যেন এক অন্যরকম উৎসবের আমেজে মেতে উঠল পুরো বিভাগ। শিক্ষকরা এসে শামিল হলেন সেই আনন্দে।

শুরু হলো উপস্থাপনা পর্ব। নিজেদের যেন সবাই আবিষ্কার করতে লাগল সেই মুর্শিদি গানের তালে। গায়ের লোমগুলোতে শিহরণ উঠে গেল যখন পলস্নীকবির বিদ্রোহের আহ্বান জেগে উঠলো -

'মাটির সাথে মুখ লাগায়ে, মাটির সাথে বুক লাগায়ে

'আলী! আলী!!' শব্দ করি মাটি বুঝি দ্যায় ফাটায়ে'

পরক্ষণেই আবার প্রিয়কে হারানোর ব্যথায় বুক দুমড়ে ওঠে-

\হ

'কেন বিধি তারে এত দুখ দিলে, কেন, কেন, হায় কেন,

মনের-মতন কাঁদায় তাহারে 'পথের কাঙ্গালী'হেন?

গ্রাম্য জীবনের অবুঝ নিটল ভালোবাসা দোলা দিয়ে যায় সকলের মনে। উপস্থাপনা শেষে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে যেয়ে এই সেমিস্টারে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী সাদিয়া রহমান লাবণ্য জানান, 'বিখ্যাত কাব্য কাহিনীর সেই চরিত্র সাজু ও রুপাই সাজার মাধ্যমে আমরা সকলেই যেন সেই গ্রামীণ জীবনের কিশোরী মধ্যকার আবেগ অনুভূতি ব্যতিক্রম উপায়ে অনুভব করতে পেরেছি। যান্ত্রিক জীবন থেকে বের হয়ে ক্ষণিকের জন্য অনুভব করেছি গ্রামীণ সাধারণ জীবনের বাস্তবতা। এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ।'

সব শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রাণ ফিরতে দেখে উপস্থাপনাটির তত্ত্বাবধায়ক বাংলা বিভাগের সহকারী প্রভাষক শামসুন নাহার সেতু জানান, 'ইট-কাঠ দালানের শহরে যখন হাঁপিয়ে উঠি আমরা তখন আমাদের মনের শ্রান্তি দেয় নকশিকাঁথার মাঠ।

রুপাই সাজুর প্রেম লোকজ জীবন আমাদের হাত ধরে টেনে নিয়ে বলে - কেন বিশ্ব দরবারের দারস্থ হওয়া? স্বয়ংসম্পূর্ণ আমাদের যে সংস্কৃতি সেটা নিয়েই মাথা উচু করে বাঁচি না কেন আমরা?

নকশিকাঁথার মাঠে বিছানো যে শীতলপাটি তার চেয়ে উপভোগ্য আর কী হতে পারে বাঙালির জন্য? আজ তোমাদের সাজু ও রুপাই রূপে দেখে ভীষণ ভালো লাগলো।'

পলস্নীকবির অতি যত্নে ভাবাবেগে রচিত এই নকশী কাঁথার মাঠ যার পরতে পরতে রয়েছে গ্রামীণ জীবন চিত্র। লোকজ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। যার হালকা বাতাস ছড়িয়ে গিয়েছিল গবি প্রাঙ্গণেও

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে