কালো গমের যত পুষ্টিগুণ

প্রকাশ | ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন
দিনের পর দিন পাল্টাচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা। একই সঙ্গে রংও পাল্টাচ্ছে খাদ্য তালিকার। তার সঙ্গে গ্রাম ও শহরে পরিবর্তিত হচ্ছে খাদ্যাভ্যাসও। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এখন বেছে নিচ্ছেন পুষ্টিকর খাদ্যদ্রব্যকে। মানুষের আর্থিক উন্নতি হওয়ায় সবাই ভালো পুষ্টিকর খাবার থেকে এখন বিষাক্ত কীটনাশক ও সারমুক্ত অর্গানিক খাদ্যের দিকে ঝুঁকছেন। কালো ধান থেকে সুগন্ধী চাল পাওয়া যায়। তাই কালো ধান চাষ হচ্ছে বাংলাদেশে। এবার পুষ্টিকর কালো গমের চাষ করার সময়ও এসেছে। মূলত, এই কালো গম অত্যন্ত পুষ্টিকর। আর এই পুষ্টিগুণের জন্যই কালো গমের বিপুল চাহিদা পরিলক্ষিত হয়। এই গমে আয়রনের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি থাকে। এছাড়াও, এই গম রক্তচাপ, ক্যানসার, স্থূলতা এবং সুগার রোগীদের জন্য দারুণভাবে উপকারী। পাশাপাশি, নিয়মিত এই গম খেলে রক্তস্বল্পতা দূর হয় এবং দৃষ্টিশক্তি প্রখর হয়। এই গম কালো হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো এটিতে অ্যান্থোসায়ানিন পিগমেন্ট বেশি থাকে- যা একটি রঞ্জক পদাথের্র মতো কাজ করে। এদিকে, সাদা গমে এর পরিমাণ থাকে মাত্র ৫ থেকে ১৫ পিপিএম। তবে, কালো গমে এর পরিমাণ হয় ৪০ থেকে ১৪০ পিপিএম। এছাড়াও, কালো গমে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট অ্যানথ্রোসায়ানিন পাওয়া যায়- যা বিভিন্ন মারণ রোগের নিরাময়ে কাজে লাগে। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ কালো গম ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ অনেক এলাকায় কৃষকরা চাষ করছেন। কালো গম চাষের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আয় করতে পারবেন লাখ লাখ টাকা। সর্বোপরি, দিন দিন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এই গমের চাহিদা। যার ফলে, নিশ্চিন্তে কালো গম চাষ শুরু করতে পারেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই কালো গম চাষ করে সফল হয়েছেন বহু কৃষক। ভারতের ন্যাশনাল এগ্রি ফুড বায়োটেকনোলজি ইনস্টিটিউট কালো গমের গবেষণা করেছে। কৃষিবিদ ড. মনিকা গর্গ ২০১০ সাল থেকে গবেষণা শুরু করেন। এরপরে কালো গমের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। কয়েক বছর কৃষক কালো গমের চাষ করেছেন। উত্তর প্রদেশে কালো গমের চাষ বেশি হচ্ছে। বেশিরভাগ কৃষক রবি মৌসুমে গম চাষ করেন। নতুন এই উদ্ভাবিত কালো বর্ণের গমের চাষ কেবল কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করবে না, মানুষকে মারাত্মক রোগ থেকেও বাঁচাবে। কালো গমের আটা বা ময়দার রং সাদা করা হয়ে থাকে। বিহারে কালো ধানের পর কালো গমের চাষও করেছেন বাঁকা জেলার কৃষকরা। কালো ধানের পাশাপাশি কালো গমের চাষ করলে দ্বিগুণ লাভবান হওয়া যায় বলে মনে করছেন চাষিরা। বাজারে কালো গমের চাহিদা অত্যন্ত বেশি থাকায় এটির দামও সাধারণ গমের তুলনায় অনেকটাই বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাধারণ গমের চেয়ে প্রায় ৪ গুণ বেশি দামে বিক্রি করা হয় এই গম। শুধু তাই নয়, যেখানে সাধারণ গমের দাম প্রতি কুইন্টালে মাত্র ২,০০০ টাকা সেখানে কালো গম প্রতি কুইন্টালে নিশ্চিন্তে সাত থেকে আট হাজার টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। স্বাভাবিকভাবেই, এই চাষের মাধ্যমে বিরাট লাভবান কৃষকরা। কৃষকরা রবি মৌসুমে গম চাষ করতে পারে। এর আবাদে অনেক উন্নত জাতের বীজবপন করা যায়। বিজ্ঞানীদের দ্বারা উদ্ভাবিত কালো বর্ণের গমের চাষ কেবল কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করবে না, মানুষকে মারাত্মক রোগ থেকেও বাঁচাবে। মনে রাখতে হবে যে, এই গম চাষের ক্ষেত্রে আর্দ্রতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমতাবস্থায়, নভেম্বর মাসে এই গম রোপনের জন্য সঠিক সময় হিসেবে বিবেচিত হয়। এদিকে, নভেম্বরের পর রোপণ করলে ফলন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। কালো গম সাধারণ গমের মতোই বোনা হয় এবং তিনবার সেচ দেওয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে, সাধারণ গমের চেয়ে কালো গমের ফলন বেশি হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী জানা গেছে, ১ বিঘা জমিতে কালো গম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কেজি পর্যন্ত উৎপাদিত হতে পারে। মাত্র ২ লাখ টাকা দিয়ে কালো গম চাষ কিংবা ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। পাশাপাশি, বাজারে এক কুইন্টাল গমের দাম ৮ হাজার টাকা হলে নিশ্চিন্তে প্রায় ৯ লাখ টাকা পর্যন্ত খুব সহজেই আয় করা সম্ভব। কৃষিবিদ ড. অধ্যাপক শাসসুল হুদা বলেন, কৃষক যদি কালো গম চাষ করেন, তবে এটি তার পক্ষে খুব উপকারী হবে। একদিকে কৃষক ভালো দামে গম বিক্রি করতে পারবেন; অন্যদিকে, তা স্বাস্থ্যের পক্ষেও ভালো। কালো গম কমপক্ষে প্রতি কুইন্টাল ৩ হাজার ৫০০ টাকায় বাজারে বিক্রি হয়। কালো গমের আটায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থোসায়ানিন থাকে। এটি বস্নাড সুগার, বস্নাড প্রেসার, হার্ট অ্যাটাক, ক্যানসার, মানসিক চাপ, ব্যথা এবং রক্তশূন্যতার মতো রোগের জন্য খুবই কার্যকর।