শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে দ্বিগুণ

ইমরান সিদ্দিকী
  ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে দ্বিগুণ

কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য অথবা কৃষিজাত পণ্য দেশের শীর্ষ পাঁচ রপ্তানি খাতের একটি। আমদানি-রপ্তানি পণ্য বৈচিত্র্যকরণে কৃষিপণ্যের রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা। বিদেশে বাংলাদেশি কৃষিপণ্যের রয়েছে প্রচুর চাহিদাও। প্রযুক্তির আধুনিকায়ন ও মানসম্মত পণ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার ফলে বাংলাদেশের দ্রম্নত অগ্রগতি হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানির আয় বেড়েছে দ্বিগুণ।

তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থববছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশের কৃষিজাত পণ্যে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ২৫ কোটি ৭৪ লাখ ৯০ হাজার ডলার। যেখানে এ সময়ের জন্য এই জাতীয় পণ্যের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২১ কোটি ৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এ হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে ২২ দশমিক ১৩ শতাংশ। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে এ পণ্যের রপ্তানি আয় হয়েছিল ২৭ কোটি ১৬ লাখ ২০ হাজার ডলার। এতে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ৬৭৩ দশমিক ৭০ মিলিয়ন ডলার। চার বছরে বেড়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে এক দশমিক ১৬৩ মিলিয়ন উপনীত হয়। পরের অর্থবছর ২০২২-২৩ এ কিছুটা কমলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে আবারও রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। আগস্ট-জুলাইয়ে রপ্তানি হয়েছে ১৭৪ মিলিয়ন ডলার। দুই মাসে কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে।

রপ্তানিকারকরা বলছেন, চলতি বছরে কৃষিপণ্য রপ্তানি বেড়ে আবারও বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে। কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প সম্ভাবনাময়- যা রপ্তানির ক্ষেত্রে আগামীতে বড় অবদান রাখবে। বাংলাদেশ যে সব কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি করে তার মধ্যে প্রধানত শুকনা খাদ্য, তামাক ও তামাকজাত পণ্য, শাকসবজি, প্রাণিজ বা উদ্ভিজ্জ চর্বি ও তেল, সুগার-কনফেকশনারি, ফল ও জুস, পানীয়, চা, সেমাই, জুস, ওয়েল কেক ইত্যাদি উলেস্নখযোগ্য। এর মধ্যে রপ্তানির পরিমাণে দেড়শ মিলিয়নের উপরে থাকা কৃষিজাত পণ্যগুলো হলো- শুকনো খাবার, টোব্যাকো, প্রাণিজ বা উদ্ভিজ্জ চর্বি ও তেল। বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করা অন্য পণ্যগুলো হলো- হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং পাট ও পাটজাত পণ্য। এর মধ্যে কৃষিজাত পণ্যই ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েছে এবং গত পাঁচ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। প্রায় পুরোটাই স্থানীয়ভাবে মূল্য সংযোজিত।

রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর তথ্য মতে, বাংলাদেশে কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য বিশ্বের প্রায় ১৩০ দেশে রপ্তানি হয়। ভারত, মধ্যপ্রাচ্যের সবগুলো দেশে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মালয়েশিয়া ও জাপানেও বাংলাদেশের কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। চলতি অর্থববছরের প্রথম প্রান্তকে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় এসেছে শাকসবজি থেকে। এ সময়ে পণ্যটি থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ডলার। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়ছিল ১ কোটি ৪৫ লাখ ৫৭ হাজার ডলার। এ হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পণ্যটি থেকে রপ্তানি আয় বেড়েছে ২২৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আর গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২৬৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। ওই সময়ে পণ্যটি থেকে রপ্তানি আয় হয়েছিল ১ কোটি ৩০ লাখ ১০ হাজার ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় এসেছে শুকনা খাদ্যজাত পণ্য থেকে। এ সময়ে পণ্যটি থেকে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। যেখানে এ সময়ের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার। অবশ্য লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পণ্যটি থেকে রপ্তানি আয় কমেছে ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আর গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ৮ দশমিক ৩১ শতাংশ। ওই সময়ে পণ্যটি থেকে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৫ কোটি ২১ লাখ ৩০ হাজার ডলার। তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় এসেছে তামাক ও তামাকজাত পণ্য থেকে। আলোচ্য সময়ে পণ্যটি থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এ সময়ের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ৪ কোটি ১৭ লাখ ৪০ হাজার ডলার। অথাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পণ্যটি থেকে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় পণ্যটি থেকে রপ্তানি আয় কমেছে ৩৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। ওই সময়ে এ পণ্যের রপ্তানি আয় হয়েছিল ৬ কোটি ৯৭ লাখ ১০ হাজার ডলার। পরের অবস্থানে থাকা প্রাণিজ বা উদ্ভিজ্জ চর্বি ও তেল পণ্য রপ্তানি বাবদ আয় হয়েছে ২ কোটি ৮০ লাখ ৮০ হাজার ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এ হিসেবে পণ্যটি থেকে আলোচ্য সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ কম হয়েছে রপ্তানি আয়। আর গত অর্থবছরের একই সময়ে এ পণ্যটি থেকে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৫ কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার ডলার। যার থেকে আলোচ্য সময়ে রপ্তানি কমেছে ৪৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। পঞ্চম অবস্থানে থাকা তেল বিজ রপ্তানি বাবদ আলোচ্য সময়ে আয় হয়েছে ১ কোটি ২৬ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এজন্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এ সময়ে পণ্যটি থেকে রপ্তানি আয় বেড়েছে ২৮৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আর গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় বেড়েছে ৬৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। ওই সময়ে পণ্যটি থেকে রপ্তানি আয় হয়েছিল ৭৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

দিনের পর দিন কৃষিপণ্যের রপ্তানির পরিমাণ বাড়ছে। বাংলাদেশ হতে নানাবিধ কৃষিপণ্যসমূহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এর মধ্যে পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চা পাতা, আম, কাঁঠাল, লেবু, লিচু, লটকন, আমড়া, পেয়ারা, শুকনা বরই, হিমায়িত সবজি আলু, কচু, পটোল, মুখীকচু, লাউ, পেঁপে, শিম, করলা, কাকরুল, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, গুড়া মসলা, কালিজিরা, হলুদের গুঁড়া, মরিচের গুঁড়া, শুকনা মরিচ, বিরিয়ানি মসলা, কারি মসলা, ড্রিংকস, বিস্কুট, চানাচুর, সেমাই, পটেটো ফ্লেকস, নুডলস, ড্রাই কেক, মুড়ি, চিড়া, ফুড স্টাফ প্রভৃতি বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাদেশ হতে যে সব দেশে শাকসবজি রপ্তানি হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো- সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কাতার, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, কুয়েত, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল এবং যেসব দেশে ফল রপ্তানি হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো- কাতার, ভারত, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, সৌদি আরব ও অস্ট্রেলিয়া।

কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মধ্যে বেশি রপ্তানি হয় রুটি, বিস্কুট ও চানাচুর জাতীয় শুকনা খাবার, ভোজ্যতেল ও সমজাতীয় পণ্য, ফলের রস, বিভিন্ন ধরনের মসলা, পানীয় এবং জ্যাম-জেলির মতো বিভিন্ন সুগার কনফেকশনারি। তার বাইরে চা, শাকসবজি এবং ফলমূলও রপ্তানি হচ্ছে। অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে পান-সুপারিসহ অন্যান্য পণ্যও বিদেশে যাচ্ছে। বর্তমানে সবজি, তামাক, ফুল, ফলসহ অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। ১০ মাসে ৮ কোটি ৮২ লাখ ডলারের সবজি রপ্তানি হয়েছে। তাছাড়া ৯ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের তামাক, ৩ কোটি ২৭ লাখ ডলারের মসলা রপ্তানি হয়েছে।

বাপার তথ্য অনুসারে, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের অভ্যন্তরীণ বার্ষিক বাজার ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। কাজ করছেন প্রায় ২০ লাখ মানুষ। ২০০০ সালের দিকে শুরু হয় এই খাতের পণ্য রপ্তানি। সরকারের ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধা, ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনার ফলে প্রতিযোগী দেশ ভারত, এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোর পাশাপাশি দ্রম্নত বাড়ছে দেশের রপ্তানির বাজারও। বিশ্বে খাদ্যজাত পণ্যের বড় বাজার রয়েছে- যার পরিমাণ সাত ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি। সেখানে বাংলাদেশের অংশ মাত্র ১০০ কোটি ডলার। কৃষকরা প্রচলিত চাষাবাদ পদ্ধতির পাশাপাশি বিপুল পরিমাণে শাকসবজি এবং ফলমূলের আবাদ করছেন। ফলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন শাকসবজি ও ফলমূল বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতকারী কোম্পানি কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে