ফসল উৎপাদন মাটির স্বাস্থ্যের ওপর সম্পূর্ণ নিভর্রশীল। মাটি হচ্ছে কৃষির মূল ভিত্তি। উর্বর মাটি না হলে ভালো ফসল উৎপাদন হয় না। তাই সুষম মাটিতে ৫ শতাংশ জৈব উপাদান থাকার কথা। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, মাটিতে মাত্রারিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারে দেশের মোট আবাদযোগ্য এক কোটি ১৪ লাখ ৮ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৬১ শতাংশে জৈব পদার্থের মারাত্মক ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
সাধারণত ৪৫ শতাংশ খনিজ বা মাটির কণা, ৫ শতাংশ জৈব এবং ২৫ শতাংশ করে পানি ও বাতাস থাকা মাটিকে সুষম মাটি বলা হয়। একটি আদর্শ জমিতে জৈব পদার্থের মাত্রা ৩.৫ শতাংশ থাকা অতি প্রয়োজনীয় হলেও এ দেশের বেশিরভাগ জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ এক দশমিক ১৭ শতাংশ এবং কিছু কিছু জমিতে এর পরিমাণ ১ শতাংশের চেয়েও কম? এর মধ্যে ৫৪ লাখ হেক্টর জমিতে ফসফরাস, ২৬ দশমিক ৩০ লাখ হেক্টর জমিতে পটাশিয়াম, ৩৩ দশমিক ৩০ লাখ আট হাজার হেক্টর জমিতে গন্ধক, ২৭ দশমিক ৭ লাখ হেক্টর জমিতে দস্তা সার, ২৩ দশমিক ৯ লাখ হেক্টর জমিতে বোরন সারের অভাব রয়েছে। এছাড়া, অনেক জমিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের অভাব। জলবায়ুর পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, একই জমিতে যুগের পর যুগ একই ফসলের চাষ, জমিকে বিশ্রাম না দেওয়া, রাসায়নিক সারের অসম ব্যবহারের কারণে মাটিতে জৈব পর্দাথের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনে খরা, লবণাক্ততা ও অতিবৃষ্টিতে কমছে মাটির উর্বরা শক্তি। অন্যদিকে, বেশি ফলনের আশায় কৃষকরা মানহীন রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে মাটিতে জৈব পর্দাথের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। দুর্বল হচ্ছে মাটির স্বাস্থ্য। অনুর্বর জমির পরিমাণও বাড়ছে। দেশের মোট জমির ৭৮ দশমিক ৯০ শতাংশ জমির মাটিতে জৈব পদার্থের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ফলে এখন ফসল উৎপাদনে বেশি সার ব্যবহার না করলে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া যায় না। এতে কৃষি উৎপাদন খরচ বাড়ছে।
ইউরিয়া, ফসফেট ও পটাশ রাসায়নিক সার ব্যাপক হারে জমিতে ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে সত্য কিন্তু ফসলের অন্যান্য অতি প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান সরবরাহ না থাকায় মাটিতে গাছের অনুখাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধিতে বাড়বে ফসলের উৎপাদন। এ জন্য অর্গানিক জৈব উপাদান বাড়াতে হবে। দীর্ঘদিন ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে মাটির জৈব উপাদান কমে গেছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাভাবিক সার ব্যবহারের পাশাপাশি স্বল্প মাত্রায় নিয়মিত অর্গানিক জৈব উপাদান মিরাকেল গ্রোথ জমিতে ব্যবহার করলে ফসলের আশানুরূপ ফলন নিশ্চিত করবে। বর্তমানে কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের আবাদি জমির উপর বিভিন্ন কলকারখানা এবং মৎস্য চাষের জন্য পুকুর খননের ফলে ফসলের জমি কমছে। জলবায়ুর প্রভাবে প্রতিদিনই কমছে কৃষি জমি। এতে আগামীর খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ঘাটতি তৈরি করতে পারে। তাই নির্ধারিত জমি আমরা আর বাড়াতে পারব না। তাই, একই জমিতে ফলন বৃদ্ধি বাড়াতে হবে। বাড়তি খাদ্য উৎপাদনে মাটির খাদ্য হিসেবে মিরাকেল গ্রোথ ব্যবহার করা যায়। মাটির এই অনুখাদ্য জমিতে ব্যবহারে, ইউরিয়া সারের ব্যবহার অর্ধেক কমে আসবে।
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর সীমিত জমি থেকেই খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। কিন্তু মাটি তার উর্বরা শক্তি হারিয়ে ফেললে খাদ্য উৎপাদনে ভাটা পড়বে এবং বর্ধিত খাদ্য উৎপাদনে দারুণ সংকট দেখা দেবে। কাজেই এ সমস্যার গুরুত্ব উপলব্ধি করে মাটির পরিবেশ এবং তার উর্বরতা সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য রাসায়নিক সারের ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে মাটিতে জৈব সারের ব্যবহার বাড়ানোর ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এটা করা সম্ভব না হলে বিপর্যয় অনিবার্য, সেটা ভবিষ্যতে বা সুদূর ভবিষ্যতে।
কৃষিবিদ ড. শহীদুল ইসলাম বলেন, এক বিঘা জমিতে অর্গানিক জৈব উপাদান বাড়াতে মাত্র এক কেজি মিরাকেল গ্রোথ ইউরিয়া সারের সঙ্গে মিসিয়ে আপনার ধানের চারা লাগানোর ১০ দিন পর থেকে শুরু করে ধানের শীষ বা থোর আসার আগ পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। আলু, মরিচ, বেগুন, ভুট্টা, কলা, পেঁপে, চা, সব ধরনের শাকসবজি, আম, লিচু, কাঠাল, নারিকেল, সুপারি, ছাদ বাগান বা টবের ক্ষেত্রেও পরিমাণ মতো ব্যবহার করা যায়। গাছের বৃদ্ধি, পুষ্টি ও অধিক ফলনের জন্য ১৬টি খাদ্য উপাদানের মধ্যে ৮টি অপরিহার্য উপাদান দিয়ে সমৃদ্ধ হচ্ছে মিরাকেল গ্রোথ। যা জমির উবর্রতা বাড়ানোর পাশাপাশি অধিক ফলনে সাহায্য করে।
সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, ইউরিয়া, ফসফেট ও পটাশ রাসায়নিক সার ব্যাপক হারে জমিতে ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে সত্য কিন্তু ফসলের অন্যান্য অতি প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান সরবরাহ না থাকায় মাটিতে গাছের এই অনুখাদ্যের অভাব পূরণ করার জন্য কাজ করবে মিরাকেল গ্রোথ। মাটির এই অনুখাদ্য জমিতে ব্যবহারে, ইউরিয়া সারের ব্যবহার অর্ধেক কমে আসবে। স্বাভাবিক সার ব্যবহারের পাশাপাশি স্বল্প মাত্রায় নিয়মিত মিরাকেল গ্রোথ জমিতে ব্যবহার করলে ফসলের আশানুরূপ ফলন নিশ্চিত হবে। লুমিনাস ওয়ার্ল্ড লিঃ এর মিরাকেল গ্রোথ হচ্ছে আমেরিকার ফর্মূলায় প্রস্তুত একটি অর্গানিক মাটির অনুখাদ্য। একটি চমৎকার পণ্য হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে কৃষকদের কাছে। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে কৃষকের বিশ্বাস, এটি একটি চমৎকার পণ্য। কম খরচে ফলন বৃদ্ধি পায়। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সামসুল আলম বলেন, জৈব উপাদান মিরাকেল গ্রোথ জমিতে ব্যবহার করলে ?দ্রম্নত গাছের শিকড় গঠনে ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। গাছের পাতার সবুজ কণিকা সৃষ্টি ও ক্লোরোফিল রক্ষায় সাহায্য করে। ফুল ফুটানো ও ফল গঠনে সাহায্য করে। ফুল ও কুঁড়ি ঝরে যাওয়া রোধ করে। হরমোনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়। মাটি থেকে বিষাক্ত দ্রব্যাদি গ্রহণে গাছকে বিরত রাখে। মাটির উর্বরতা বাড়িয়ে অধিক ফলনে সাহায্য করে। বীজ হতে পরিপূর্ণভাবে অঙ্করোধগমে সাহায্য করে। এতে দস্তা, সালফার, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়া, বোরন, লৌহ ও কপারসহ অন্যান্য কাজ করে থাকে।