শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১

বাড়ির টবে চাষ করতে পারেন সুস্বাদু এলাচ

প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন
  ১৮ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
বাড়ির টবে চাষ করতে পারেন সুস্বাদু এলাচ

যে কোনো সুস্বাদু খাবারের সুগন্ধি বাড়াতে এলাচ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও মুখের দুর্গন্ধ বা মুখশুদ্ধি করতেও এলাচের ব্যবহার রয়েছে। বাড়ির সাধারণ পাত্রেই এলাচ চাষ করা সম্ভব। কারণ এলাচ গাছ তেমন বড় হয় না। তাই আপনি চাইলে বাড়ির টবে এলাচ গাছ লাগাতে পারেন। এলাচ এমন একটি মশলা উপাদান- যা মোটামুটি সব রান্নাঘরেই থাকে। এটি নানারকমের খাবারে বিশেষ সুগন্ধ ও স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। তবে এলাচের ব্যবহার কেবল মাত্র রান্নাতেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং নানা ঔষধি গুণাবলি ও স্বাস্থ্য উপকারিতায় ভূমিকা রাখছে।

বাজারে এলাচের বীজ পাওয়া যায়। সবুজ রঙের এলাচ হলে চারা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কিনে নিয়ে আসার পরে একটি বায়ুরোধক পাত্রে সারারাত বীজগুলিকে ভিজিয়ে রাখতে হবে। বীজ থেকে চারা বের করার জন্য একটা পাত্রে বীজ পানির মধ্যে ভিজিয়ে রেখে এর মধ্যে কালো ও লাল মাটি মেশাতে হবে। তবে এর পরিবর্তে গোবর ব্যবহার করা যেতে পারে। ১৫ দিনের মধ্যেই চারা বড় হতে শুরু করবে। গাছে যাতে পোকামাকড় না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ পোকামাকড়ের কারণে গাছের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। সকাল এবং সন্ধ্যার সময় নিয়মিত গাছে পানি দিতে হবে। এইভাবে গাছের সঠিক পরিচর্যা করলে ১ মাসের পর থেকেই গাছটি বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

এলাচ গাছটি দীর্ঘকাল বেঁচে থাকে। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানিও করা সম্ভব হয়। দেশের মাটিতে উৎপাদিত এলাচ। এতে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশে আসবে বৈদেশিক মুদ্রাও। এলাচ বা এলাচি চাষের জন্য জমি উবর্র হতে হবে। হালকা ছায়া যুক্ত জমি এই ফসলের চাষে উপযুক্ত। তবে জমি ভেজা বা সঁ্যাতসেঁতে হওয়া যাবে না। ভেজা বা সঁ্যাতসেঁতে জমিতে এলাচের চাষাবাদে ভালো ফলন পাওয়া যায় না। এলাচ চাষ করার জন্য সব সময় আলাদা কোনো জমির দরকার হয় না। যে কোনো গাছের নিচে, বাগান বা বাড়ির আঙিনা এলাচ চাষের জন্য উপযোগী। অন্য কোনো ফসলের মাঠেও মসলা জাতীয় ফসলের চাষাবাদ করা যায়। এলাচ চাষের জমিতে (এটেল মাটি হয়) বালির পরিমাণ কম থাকলে অতিরিক্ত বালি মেশাতে হবে। তবে এই ফসলের চাষের জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিতে হবে। প্রয়োজনে মাটি পরীক্ষা করে নিতে হবে। জৈব উপদানের পরিমাণ কম থাকলে গোবর সার বা কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করা উত্তম। ভালো ফলনের জন্য ১৫ দিন অন্তর অন্তর ২ ফুট চওড়া ও দেড়ফিট গভীর গর্ত করে গোবর সার বা জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। সঙ্গে অবশ্যই দানাদার কীটনাশক দিতে হবে। কৃষকদের জন্য অর্থকরী ফসল হিসেবে অন্যতম হলো এলাচ। যা চাষ করে লাখ লাখ টাকা আয় করা যায়। বাজারে এর খুব ভালো দাম পাওয়া যায়।

সুগন্ধি মশলা হিসেবে এলাচের বেশ খ্যাতি রয়েছে। অনেকেই বাজার থেকে এলাচ কিনে থাকেন। তবে বাড়িতেও সহজেই এই মশলা চাষ করা সম্ভব। এটি যেমন রান্নার কাজে লাগবে তেমনি এলাচের গাছ বাড়ির শোভাও বৃদ্ধি করবে। এলাচ যে শুধু স্বাদ এবং গন্ধেই ভরপুর তাই নয়, এর মধ্যে পুষ্টিগুণও বর্তমান। এলাচে রয়েছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, কোলেস্টেরল, ফাইবার, রাইবোফ্ল্যাভিন, পাইরিডক্সিন, থিয়ামিন, ইলেক্ট্রোলাইট, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম,জিঙ্ক, ভিটামিন এ, সি'সহ আরো অনেক উপাদান। এলাচ বিভিন্ন রকমের সমস্যা যেমন সর্দি, কাশি, ফুসফুসের সমস্যা, রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা ইত্যাদি থেকে মুক্তি দেয়। এছাড়া ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসকষ্ট, হুপিংকাশি ও ফুসফুস সংক্রমণের মতো রোগ দূর করে এলাচ। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় এলাচ খুব উপকারী। সু্যপ বা স্টু-এর মধ্যে এলাচ মিশিয়ে খেলে খুব সহজেই কিছু দিনের মধ্যে রক্তচাপ নিচে নামতে শুরু করে। হৃদরোগ প্রতিরোধ হয় এবং হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক থাকে। রক্তনালিতে রক্ত জমে যাওয়ার সমস্যা সমাধানে এলাচের ভূমিকা অপরিসীম। প্রতিদিন এলাচ খেলে রক্তের ঘনত্ব সঠিক থাকে।

এলাচের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান হাটের জন্য ভালো। এলাচ কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপেও দারুণ একটি ওষুধ এলাচ। নিয়মিত এলাচ খেলে মুখের দুর্গন্ধের পাশাপাশি মাড়ির ইনফেকশন, মুখের ফোঁড়াসহ দাঁত ও মাড়ির নানা সমস্যা থেকে রক্ষা করে। এলাচের খাদ্যগুণের কারণে অনেক ধরনের ক্যানসারের টিউমার বা কোষগুলি বাড়তে পারে না। কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ক্ষেত্রে এলাচের গুণাগুণ বিশেষভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এলাচ পেটের নানা সমস্যা এবং হজমের সমস্যায় অনেক কার্যকরী। বুক জ্বালাপোড়া, বমি ভাব, পেট ফাঁপা, এসিডিটির হাত থেকে মুক্তি পেতে এলাচ। দেহের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে দিতে এলাচের জুড়ি নেই। এলাচের ডিউরেটিক উপাদান দেহের ক্ষতিকর টক্সিন পরিষ্কারে সহায়তা করে। মাথা ব্যথা দূর করতে এলাচ চা অনেক সহায়ক। গরম পানিতে এলাচ গুঁড়ো ও মধু দিয়ে ফুটিয়ে পান করলে, মাথা ব্যথা কমতে শুরু করে। তাছাড়া এলাচ চা মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

নিয়মিত এলাচের নির্যাস পানিও পান করলে মানসিক উদ্বেগ অনেকটাই কমে যায়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। এলাচ ত্বকের ক্ষতি পূরণেও বেশ সহায়ক। হেঁচকির সমস্যার সমাধানে এক কাপ গরম পানিতে এক চা চামচ এলাচ মিশিয়ে ১৫ মিনিট রেখে সেটি আস্ততে আস্ততে পান করলে উপকার পাওয়া যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে