শখের বশে ছাদে, বেলকোনিতে চাষ করতে পারেন ক্যাপসিকাম

প্রকাশ | ০৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন
শখের বশে ছাদে, বেলকোনিতে টবে ক্যাপসিকাম ফলানো সম্ভব। অক্টোবর, নভেম্বরে এ গাছ রোপণের উপযুক্ত সময়। বিভিন্নভাবে এ গাছ রোপণের মাটি তৈরি করা যায়। হাজার বছর আগে থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ চাষ করা হচ্ছে। ক্যাপসিকাম লাল, হলুদ ও সবুজ বর্ণে পাওয়া যায়। এর অপর নাম বেল পিপার। বর্তমানে আমাদের দেশে এটি বেশ জনপ্রিয় একটি খাদ্য উপাদানে পরিণত হয়েছে। দেশীয় সবজি না হলেও এর চাষ ধীরে ধীরে বাড়ছে দেশে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাবারে সহায়ক উপকরণ হিসেবে ক্যাপসিকাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সবজি হিসেবে চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্যাপসিকামের চাষ হচ্ছে। ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ খাবারকে সুস্বাদু করতে জুড়ি নেই। পুষ্টিগুণ বিচারে পিছিয়ে নেই ক্যাপসিকাম। প্রতি ১০০ গ্রাম ক্যাপসিকামে রয়েছে ৮৬০ মিলিগ্রাম প্রোটিন, ৪.৬০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১.৭০ মিলিগ্রাম, ৩৭০ আইইউ ভিটামিন এ। এছাড়া রয়েছে সামান্য পরিমাণ ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি-৬, থায়ামিন ও ফলিক এসিড। খনিজ উপাদানের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিংক, কপার ইত্যাদি। ক্যাপসিকামে আছে ক্যাপসাইসিনস- যা ডিএনএর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদানের সঙ্গে সংযুক্ত হতে বাধা দেয়। ক্যাপসিকাম অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। আর ভিটামিন সি তো আছেই। ভিটামিন এ, বি, সি বিটা ক্যারোটিন আছে। যা দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। ক্যাপসিকাম চাষ করাও কিন্তু বেশ সহজ। আজকাল বিশেষ করে শহরে এই মরিচের খাওয়ার চল দেখা যাচ্ছে। আজকাল বারান্দায় বা ছাদে সবজি বাগান করছেন অনেকে। একটি টবে ক্যাপসিকামের চারা রোপণ করে উৎপাদিত মাঝারি সাইজের একটি ক্যাপসিকাম হলেই চার সদস্যের একটি পরিবারের একবেলার খাওয়া হয়ে যায়। ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ একটি জনপ্রিয় সবজি। শখে ছাদে, বেলকোনিতে টবে ক্যাপসিকাম ফলানো সম্ভব। অক্টোবর ও নভেম্বরে এ গাছ রোপণের উপযুক্ত সময়। বিভিন্নভাবে এ গাছ রোপণের মাটি তৈরি করা যায়। ৫০ শতাংশ বাগানের মাটি, ২৫ শতাংশ বালি, ২৫ শতাংশ গোবর সার। সঙ্গে ১ চা চামচ ম্যাগনেসিয়াম সালফেট অথবা ৫০ শতাংশ সাধারণ মাটি, ২৫ শতাংশ কম্পোস। মাটি তৈরির সময় একবারে নিচের দিকে সবজির ফেলে দেয়া অংশ দেয়া যায়। ক্যাপসিকামও বিভিন্ন পুষ্টি উপকরণে ভরপুর। এই ক্যাপসিকামটি একটু অল্পবয়সিদের জন্য উপকারী। এ ক্যাপসিকামে ক্যাপসাইসিনস নামক উপাদান ডিএনএর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদানের সংযুক্ত হওয়াতে বাধা দেয়। এটি ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে। এটি মাইগ্রেন, সাইনাস, ইনফেকশন, দাঁতে ব্যথা, অস্টিওআর্থ্রাইটিস ইত্যাদি ব্যথা দূর করতে কাজ করে। সবুজ ক্যাপসিকাম শরীরের বাড়তি ক্যালরি পূরণে কাজ করে। ফলে চর্বি জমে না, একই সঙ্গে ওজনও বৃদ্ধি পায় না। সবুজ ক্যাপসিকাম রক্তের অণুচক্রিকা উদ্দীপিত করে সংক্রমণ রোধ করে থাকে। আজকাল চাইনিজ ডিশ দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। লাঞ্চ বক্সে যেই চাইনিজ সবজিটা থাকে সেখানে কিন্তু ক্যাপসিকাম মাস্ট। এছাড়া ফ্রায়েড রাইসেও অবশ্যই ক্যাপসিকাম থাকে। ফলে হোটেল রেস্টুরেন্টে এই সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এটি কিন্তু চাষি ভাইদের জন্য একটি সুখবর। যারা শহরে কৃষিকাজ করতে ভালোবাসেন তাদের জন্যও এটি বড় সুযোগ হতে পারে। চাইলে ছাদে বাণিজ্যিকভাবে ক্যাটসিকাম চাষ করতে পারেন। বিক্রি নিয়ে আপনাকে খুব একটা বেগ পেতে হবে না। দামও পাবেন ভালো। ক্যাপসিকাম হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতেও সহজেই চাষ করা যায়। ছোট গাছ কিন্তু বেশি ফল পাওয়া যায়। এ কারণে হাইড্রোপনিক পদ্ধতির জন্য একটি উপযুক্ত ফসল এই ক্যাপসিকাম। আপনি আপনার ছাদে ছোট্ট একটি হাইড্রোপনিক সিস্টেমে ক্যাপসিকাম চাষ করে মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। সবুজ ক্ষতিকারক পোকামাকড় গাছের ধারে কাছেও আসতে পারবে না। যদি মাসে একবার ম্যাগনেসিয়াম সালফেট বা ইপসম সল্ট ব্যবহার করতে পারেন। গাছের পাতা হলুদ হয় ম্যাগনেসিয়াম সালফেটের অভাবে। যেটা পূরণ করবে ইপসম সল্ট স্পে। গত কয়েক বছরে ঘরোয়া অনেক ধরনের রান্নাতেও এই সবজিটি ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধু সবুজ নয়, লাল-হলুদ নানা বাহারি রঙের ক্যাপসিকামকে অনেকে চেনেন বেল পেপার নামে। ক্যাপসিকাম বা বেলপেপার বললে মূলত স্বাদ সৌন্দর্যের কথা মাথায় আসে। তবে পুষ্টিবিদরা বলছেন, শুধু স্বাদ বা সৌন্দর্য বৃদ্ধিই নয়, স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবেও ক্যাপসিকামের তুলনা নেই। লাল ও সবুজ ক্যাপসিকামের মধ্যে লালটি বেশি পুষ্টিগুণসম্পন্ন। এতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বেশি থাকে। লাল ক্যাপসিকামটি খেলে ত্বকের স্বাভাবিকতা বজায় থাকে। চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। চোখ ভালো থাকে। এতে কোলেস্টেরল কম থাকার কারণে মোটা হওয়ার প্রবণতা কমে যায়। ত্বক পরিষ্কার রাখতে ক্যাপসিকাম বেশ উপকারী। ত্বকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত রোগের ক্ষেত্রে ক্যাপসিকাম রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে ত্বকের ব্রণ ও র?্যাশের হাত থেকে রক্ষা করে। লাল ক্যাপসিকাম যে কোনো ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। ক্যাপসিকাম খেলে মাথার তালুর রক্ত চলাচল বজায় রাখতে সাহায্য করে। নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে ক্যাপসিকাম। খনিজের অভাব পূরণ করে। পটাশিয়াম বেশি থাকার কারণে বয়স্কদের জন্য লাল ক্যাপসিকাম খাওয়াই ভালো। বিভিন্ন উপকরণ বেশি থাকার কারণে বাজারে লাল ক্যাপসিকামের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। বীজ বপণের উপযুক্ত সময় অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। তবে বর্তমানে ঘরোয়া কৃষকরা ১২ মাসই এটি চাষের চেষ্টা করছেন। ক্যাপসিকাম উৎপাদনের জন্য ১৬০-২৫০ সে. তাপমাত্রা ও শুষ্ক পরিবেশ সবচেয়ে উপযোগী। রাতের তাপমাত্রা ১৬০-২১০ সে. এর কম বা বেশি হলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ফুল ঝরে পড়ে, ফলন ও মান কমে যায়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারেই ফলন হয় না। ক্যাপসিকাম চাষ করার জন্য বাজা থেকে কেনা ক্যাপসিকাম থেকেই বীজ সংগ্রহ করতে পারেন। আবার বাজারে বীজ কিনতেও পাওয়া যায়। ক্যাপসিকাম থেকে বীজ সংগ্রহ করতে চাইলে পরিপক্ক ক্যাপসিকাম থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। এরপর মাটি দিয়ে একটি পাত্র পূর্ণ করুন এবং বীজগুলি বপন করুন। আপনি যে কোনো পাত্রে এই উদ্ভিদ লাগাতে পারেন, তবে গভীরতা কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি হতে হবে। উদ্ভিদ লাগানোর পরে, আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত পানি দিন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এর থেকে বীজ অঙ্কুরিত হবে। আর বীজ দিয়ে চাষ করতে চাইলে বীজ থেকে প্রথমে চারা তৈরি করে নিতে হয়। প্রতি শতকের জন্য ১ গ্রাম বীজ দরকার হয়। বীজগুলোকে ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে আগে থেকে তৈরি করে রাখা বীজতলায় ১০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে লাইন করে বীজ বুনতে হবে।