রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

আলুবোখারা চাষে নতুন সম্ভাবনা

প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন
  ১৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
আলুবোখারা চাষে নতুন সম্ভাবনা

আলুবোখারা খেতে স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। আলুবোখারা মূলত পোলাও, বিরিয়ানি, রোস্ট, সালাদ, বোরহানি তৈরির কাজে লাগে। জ্যাম, জেলি, আচারসহ নানা মুখোরোচক খাবারও বানানো হয় এই ফল দিয়ে।

বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ বেশ লাভজনক। তবে ভারতের কাশ্মীর, হিমালয়, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং ইরানে প্রচুর পরিমাণে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। আলুবোখারায় ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ। আলুবোখারায় রয়েছে ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন- এ, বি, সি ও কে এবং ই।

আলুবোখারা ঔষধি ফসল। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। উচ্চ পুষ্টিমান, সুগন্ধিযুক্ত এবং ভেষজ গুণের কারণে এটি বেশ সমাদৃত। এ ছাড়াও অ্যালোভেরায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। তাই আলুবোখারা মানবদেহের জন্য তেমন কোনো ক্ষতিকর প্রভাব নেই। আর বাংলাদেশে এই মসলাজাতীয় ফসলটি চাষের জান্য ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে মাটির গুণাগুণ অনুযায়ী। আমাদের দেশের কৃষকদের যদি সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা বা সহযোগিতা করা হয় তাহলে আলুবোখারার বাণিজ্যিক চাষ সম্ভব ও সফল হবে।

আশ্চর্য রকমের সুস্বাদু ও রসালো এ ফল ফ্রেশ খাওয়া চলে অথবা চিনি, মরিচ ও সরিষার তেল সহযোগে চাটনির মতো করে অথবা বিভিন্ন উপাদান যোগ করে রান্না করে খাওয়া হয়। আলুবোখারা দিয়ে জ্যাম, জেলি, চাটনি, কেক, আচার প্রভৃতি তৈরি করা যায়। মধ্য ইংল্যান্ডে সিডার জাতীয় অ্যালকোহলিক বেভারেজ যা পস্নাম জাবকাস নামে পরিচিত তা আলুবোখারা থেকেই প্রস্তুত করা হয়। শুকনা আলুবোখারা (যা প্রম্নন নামে পরিচিত) মিষ্টি, রসালো এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এতে খাদ্য শক্তি কম (৪৬ কি.ক্যাল.) থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ উপযোগী। এতে যথেষ্ট পরিমাণে পটাসিয়াম, ফ্লোরাইড ও লৌহ রয়েছে- যা দেহকোষের সুরক্ষার জন্য উপযোগী। এর অন্যান্য ভিটামিনগুলো শ্বেতসার মেটাবলিজমে ও হাড়ের গঠনে ফসফরাস এবং ভিটামিনকে রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে ও বৃদ্ধদের আলঝেইমা রোগ প্রতিরোধ করে।

মসলা জাতের বিদেশি ফল আলুবোখারা চাষে সফলতা এসেছে পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে। এরই মধ্যে কৃষক পর্যায়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বারি আলুবোখারা-১। ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এ ফলটি বাণিজ্যিকভাবে চাষের বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন বিজ্ঞানীরা। আর পাহাড়ে নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে মসলা জাতীয় ফল আলুবোখারার চাষ। খাগড়াছড়িতে পরীক্ষামূলকভাবে বারি আলুবোখারা-১ চাষ করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। এখন প্রতিটি গাছে ১৫ থেকে ২০ কেজি করে ফলন এসেছে। সফলতা পেয়ে আলুবোখারা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে অনেক কৃষক। বিজ্ঞানীদের মতে, পাহাড়ের আবহাওয়া আলুবোখারা চাষে খুবই উপযোগী। পাহাড়ি অনাবাদি পতিত জমিতে চাষ করলে উৎপাদনশীলতা বাড়বে। বাড়ির আশপাশেও এ ফল চাষ করা যায়। হতে পারে বাণিজ্যিক চাষাবাদও।

মধুপুরে নতুন ফসল হলেও বাংলাদেশে কিন্তু নতুন বলে মনে হয় না। মধুপুরের লাল মাটিতে এ মসলাজাতীয় ফসল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। শখের বসে মধুপুরের বিভিন্ন এলাকায় শৌখিন কৃষকরা কেউ কেউ বাড়ির আঙিনায় পরীক্ষামূলকভাবে এ ফসল চাষ শুরু করেছেন। আলুবোখারা পামজাতীয় ফসল। অনেকের মতে এ ফসলের আদি ভূমি মধ্য এশিয়ায়। এশিয়া অঞ্চলের অ্যালোভেরা উদ্ভিদ প্রজাতির মানানি, মেথাইল এবং রেডবাট জাতের আলুবোখারা গাছের চাষ হয়ে থাকে। ইউরোপীয় পাল্ম রোসাসে পরিবারের সম্পূরক ফলজ উদ্ভিদের একটি প্রজাতি হচ্ছে বাংলাদেশের এই আলুবোখারা। বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশে এশিয়া ও ইউরোপিয়ান জাত ছাড়াও বারী-১ জাতের আলুবোখারা চাষ হচ্ছে। আলুবোখারা শুকনা পামফল, প্রথমে এটি খেতে টক জাতীয় হয় এবং পাকার পর রং লাল হলে খেতে এটি মিষ্টি লাগে।

আলুবোখারা পাহাড়ি অঞ্চল ছাড়াও গড় এলাকায় বাণিজ্যিক চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে বাংলাদেশে আলুবোখারার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং দিন দিন তা বেড়েই চলছে। আলুবোখারা গাছ থেকে টানা ১৫ থেকে ২০ বছর রোগ বালাইহীনভাবে ফলন পাওয়া সম্ভব। আলুবোখারা সাধারণত উঁচু এলাকায় ভালো হয়। নিম্নাঞ্চল বা যেখানে পানি জমে থাকে সেখানে গাছ মরে যায়।

উরোপে আলুবোখারার উন্নত জাতগুলো উদ্ভাবিত হয়। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় প্রধান ও অবউষ্ণ এলাকায় বিশেষ করে মধ্য, দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব ইউরোপ তারপর উত্তর আফ্রিকা, পশ্চিম এশিয়া, চীন, ভারত, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ব্যাপকভাবে আলুবোখারার আবাদ হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন- ইংরেজিতে পস্নাম, গেজ, গার্ডেন পস্নাম- তবে বাংলাদেশ ও ভারতে আলুবোখারা এসব নামে ডাকা হয়। শুকনা আলুবোখারা (যা প্রম্নন নামে পরিচিত) মিষ্টি, রসালো এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এতে খাদ্য শক্তি কম (৪৬ কি.ক্যাল.) থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ উপযোগী। এতে যথেষ্ট পরিমাণে পটাসিয়াম, ফ্লোরাইড ও লৌহ রয়েছে- যা দেহকোষের সুরক্ষার জন্য উপযোগী। এর অন্যান্য ভিটামিনগুলো শ্বেতসার মেটাবলিজমে ও হাড়ের গঠনে ফসফরাস এবং ভিটামিনকে রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে ও বৃদ্ধদের আলঝেইমা রোগ প্রতিরোধ করে। সুস্বাদু ও রসালো এ ফলটি ফ্রেশ খাওয়া যায়।

আলুবোখারার ফল নন-ক্লাইমেক্টরিক হওয়ায় গাছ থেকেই ভালোভাবে পাকার পর তা সংগ্রহ করতে হয়। আলুবোখারার ফল ভালোভাবে পেকে গাঢ় লাল বা হালকা খয়েরী রং ধারণ করার পর ফল নরম হলেই সংগ্রহ করা উচিত। হালকা লাল বা হলুদ অবস্থায় সংগ্রহ করা হলে তা অত্যন্ত টক বা হালকা তেতো স্বাদেরও হতে পারে। বারি আলুবোখারা-১ এর বা এ জাতের প্রতি পূর্ণবয়স্ক (১০ থেকে ২০ বছর) গাছে দেড় থেকে তিন হাজার পর্যন্ত ফল পাওয়া যেতে পারে। হেক্টর প্রতি ৭ থেকে ১০ টন ফ্রেশ পাকা ফল পাওয়া যেতে পারে। যা থেকে হেক্টর প্রতি ২৮ থেকে ৪০ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে