কৃষিতে বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় সাফল্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশ্ব উদাহরণ
প্রকাশ | ২৩ জুন ২০২৪, ০০:০০
আলতাব হোসেন
কৃষিতে বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় সাফল্য। খাদ্যশস্য উৎপাদনে এখন বিশ্ব উদাহরণ। কেবল উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, হেক্টর প্রতি ধান উৎপাদনের দিক থেকেও অধিকাংশ দেশকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। বাংলার কৃষকরা এখানেই থেমে যাননি। একই জমিতে বছরে একাধিক ফসল চাষের দিক থেকেও বাংলাদেশ এখন বিশ্বের জন্য উদাহরণ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন তিন গুণেরও বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচগুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ১০ গুণ।
কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে ১৯৭২-৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম বার্ষিক বাজেটে ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে ১০১ কোটি টাকা শুধু কৃষি উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ করেছিলেন। প্রথম বাজেটেই কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নে কৃষি খাতে ভর্তুকির ব্যবস্থা করেন। বাজেটে ভর্তুকি দিয়ে বিনামূল্যে কীটনাশক ও সার সরবরাহ করেন। এ ছাড়াও ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষিকর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কৃষিপণ্য বিশেষ করে ধান, পাট, আখের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে নূ্যনতম ন্যায্যমূল্য বেঁধে দিয়েছিলেন। ব্যবস্থা করেছিলেন গরিব কৃষকদের রেশনের।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ধারাবাহিকতা ফিরে আসায় বর্তমানে ধান উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় বাংলাদেশ। এ ছাড়াও পাট রপ্তানিতে বিশ্বে প্রথম বাংলাদেশ। ইলিশ মাছ উৎপাদনে প্রথম বাংলাদেশ। সবজিতে তৃতীয়, মিঠাপানির মাছে তৃতীয়, আম উৎপাদনে বিশ্বে নবম বাংলাদেশ। আলু উৎপাদনে শীর্ষ দশে বাংলাদেশ। বস্ন্যাক বেঙ্গল ছাগল উৎপাদনে চতুর্থ। আর ছাগলের দুধ উৎপাদনে দ্বিতীয়, পেয়ারা উৎপাদনে বিশ্বে অষ্টম, কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয় এবং জলবায়ুসহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবনে শীর্ষে বাংলাদেশ। কেবল উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, হেক্টরপ্রতি উৎপাদনের দিক থেকেও অধিকাংশ দেশকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। একই জমিতে বছরে একাধিক ফসল চাষের দিক থেকেও বাংলাদেশ এখন বিশ্ব উদাহারণ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন তিন গুণেরও বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচগুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ১০ গুণ। দুই যুগ আগেও দেশের অর্ধেক এলাকায় একটি ও বাকি এলাকায় দুটি ফসল হতো। বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে দুটি ফসল হচ্ছে। পরিশ্রমী কৃষক ও কৃষি বিজ্ঞানীদের যৌথ প্রয়াসে এ সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। স্বাধীনতার পর প্রতি হেক্টর জমিতে দুই টন ধান উৎপাদিত হতো। এখন হেক্টর প্রতি উৎপাদন হচ্ছে চার টনেরও বেশি। হিসাব করলে তা ছয় টন আর এভাবেই প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধি, উন্নতজাতের ব্যবহার ও পুষ্টি ব্যবস্থাপনার ফলে দেশে ১৯৭০ সালের তুলনায় বর্তমানে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ৩০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষিজমি কমতে থাকাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব উদাহরণ। দেশের খোরপোশ কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষিতে উন্নীত হয়েছে। জিডিপিতে এখন কৃষির অবদান ৪ শতাংশ। কৃষিতে দেশের ৪০ শতাংশ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের আগে এবং অব্যবহিত পরে প্রায় সাত কোটি মানুষের খাদ্য উৎপাদন করতেই হিমশিম খেতে হয়েছে দেশকে। তখন আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হতো। অথচ এখন দেশের লোকসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি, পাশাপাশি প্রতিদিন আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে ২০ শতাংশ করে। এরপরও আমন, আউশ ও বোরো ধানের বাম্পার ফলনে বছরে প্রায় সাড়ে চার কোটি টনের বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদনের রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের খাদ্য সংকটকে ইঙ্গিত করে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ একটি 'তলাবিহীন ঝুড়ি' বলে মন্তব্য করেছিলেন। বাংলাদেশ এখন আর খাদ্য সংকটের দেশ নয়। বাংলাদেশ এখন চাল-সবজিসহ খাদ্যপণ্য রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশসহ ১৪৪টি দেশে বাংলাদেশি কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষিপণ্য রপ্তানি থেকে ১০৩ কোটি ডলার আয় এসেছে। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৯ শতাংশের বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে প্রায় ২১ কোটি ডলার বা এক হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এ সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ শতাংশের বেশি।
কেবল উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, হেক্টর প্রতি ধান উৎপাদনের দিক থেকেও অধিকাংশ দেশকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। বাংলার কৃষকরা এখানেই থেমে যাননি। একই জমিতে বছরে একাধিক ফসল চাষের দিক থেকেও বাংলাদেশ এখন বিশ্বের জন্য উদাহরণ। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করায় বাংলাদেশের সাফল্যকে বিশ্বের জন্য উদাহরণ হিসেবে প্রচার করছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের যেসব দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়তে পারে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ফসলের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের সফলতাও বাড়ছে। ১৯৭২ সাল থেকে দেশি জাতকে উন্নত করে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা উচ্চফলনশীল (উফশী) জাত উদ্ভাবনের পথে যাত্রা করেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো ১১৭টি উচ্চফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা ১০২টি উচ্চফলনশীল আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা সংস্থা-বিনার বিজ্ঞানীরা লবণসহিষ্ণু, খরাসহিষ্ণু ও বন্যাসহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। বিশ্বে প্রথমবারের মতো জিঙ্কসমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের কৃষি গবেষকরা।
জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্য মতে, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। এক সময় দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোরেই কেবল সবজির চাষ হতো। এখন দেশের প্রায় সব এলাকায় সারা বছরই সবজির চাষ হচ্ছে। দেশে সবজির উৎপাদন যেমন বেড়েছে, ভোগও তেমনি বেড়েছে। দেশে মাথাপিছু সবজির ভোগ বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। পাশাপাশি সবজি রপ্তানি করেও মিলছে বৈদেশিক মুদ্রা।
এক সময় 'মাছে-ভাতে বাঙালি' কথাটি বইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, এখন তা বাস্তব। মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। এফএও পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বের যে চারটি দেশ মাছ চাষে বিপুল সাফল্য অর্জন করবে, তার মধ্যে প্রথম দেশটি হচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বে মোট আম উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায়। ফলটির উৎপাদনে শীর্ষ দশে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। প্রায় সাড়ে নয় লাখ টন আম উৎপাদনের মাধ্যমে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (এফএও) সর্বশেষ মূল্যায়নে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো ১১৭টি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষকরা ১০৬টি উচ্চফলনশীল আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। প্রতিকূল ও অপ্রতিকূল পরিবেশ উপযোগী উচ্চফলনশীল আধুনিক ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন তারা। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা সংস্থা বিনার বিজ্ঞানীরা লবণসহিষ্ণু, খরাসহিষ্ণু ও বন্যাসহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন- যা বিশ্বে সেরা।
উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকায় বিশ্বে কৃষিতে ১১ খাতে সেরা বাংলাদেশ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) স্বীকৃতি দিয়েছে। যা বাংলাদেশের জন্য বিশাল এক অর্জন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় মাইলফলক বলে উলেস্নখ করেছেন বিশিষ্টজনরা। কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখা, চালসহ কৃষিপণ্য, প্রক্রিয়াজাত মাছ-মাংস রপ্তানিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একের পর এক স্বীকৃতি পাচ্ছে বাংলাদেশ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের সহায়-সম্বলহীন ২২ লাখ কৃষক পরিবারের পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তাদের পুনর্বাসনে স্বল্পমূল্যে এবং অনেককে বিনামূল্যে বীজ, সার ও কীটনাশকসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ প্রদান করেন। ১৯৭২ সালে বাংলার ভূমিহীন কৃষকদের জন্য রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে পরিবারপ্রতি জমির মালিকানা ৩৭৫ বিঘা থেকে কমিয়ে ১০০ বিঘায় করেন এবং ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেন। ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নং-১৩৫ এর মাধ্যমে নদী কিংবা সাগরগর্ভে জেগে ওঠা চরের জমির মালিকানা রাষ্ট্রের হাতে নিয়ে দরিদ্র কৃষকদের মাঝে বণ্টন করেন। বিলোপ করেন হাটবাজারের ইজারা প্রথা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষিতে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের জন্য ১৯৭৩ সালের ৭নং আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেন কৃষি ব্যাংক, যাতে কৃষক সহজেই কৃষি ঋণ নিতে পারে। মহাজন ও ভূমিদস্যদের হাত থেকে গরিব কৃষকদের রক্ষাই ছিল তার মূল উদ্দেশ্য। এ ছাড়াও কৃষিঋণ মওকুফ, সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার ও খাস জমি বিতরণের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের শেষের দিকে স্বল্পমূল্যে কৃষকদের জন্য ৪০ হাজার অগভীর, ২ হাজার ৯শ গভীর এবং ৩ হাজার শ্যালো টিউবওয়েল স্থাপনের ব্যবস্থা করেন। এর ফলে, ১৯৬৮-৬৯ সালের তুলনায় ১৯৭৪-৭৫ সালে সেচের জমি এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩৬ লাখ একরে। সেচ সুবিধা সম্প্রসারণের পাশাপাশি কেবল ১৯৭২ সালেই ১৭ হাজার ৬১৬ টন উচ্চফলনশীল ধান ও গমের বীজ বিতরণের ব্যবস্থা করেন। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব বাজারের তুলনায় কম মূল্যে সার সরবরাহ করেন। এসব পদক্ষেপের ফলে রাসায়নিক সার ৭০ শতাংশ, কীটনাশক ৪ শতাংশ এবং উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। বঙ্গবন্ধুর সরকার কৃষকদের মাঝে দেড় লাখ গবাদি পশু ও ৩০ কোটি টাকা কৃষি ঋণ বিতরণ করেন। ১৯৭৩ সালে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প পুনোর্দ্যোমে চালুর ব্যবস্থা করেন। সরকারিভাবে খাদ্য মজুতের জন্য ১৯৭২ সালের মধ্যে ১শ' গোডাউন নির্মাণ করেন। কৃষিজ পণ্যের ক্ষুদ্র বিক্রেতাদের শুল্ক থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে।
হাজার বছরেরও পুরনো বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। 'মাছে-ভাতে বাঙালি'- এই প্রবাদটি হাজারো বছরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিচয় বহন করে। 'মাছে-ভাতে বাঙালি' এটা বর্তমান সময়ের কোনো কথা নয়। বর্তমানে আমাদের সংস্কৃতি অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। আগেকার দিনে যখন এত বিদেশি খাবারের প্রচলন ছিল না। সে সময় বাঙালির সংস্কৃতি ছিল কিছুটা হলেও ভিন্ন। প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালির প্রধান খাদ্য ছিল ভাত। সে সময় এই গোটা উপমহাদেশে নদী-নালাও ছিল প্রচুর। প্রকৃতির দানে এ দেশে নদী বিধৌত উর্বর ভূমিতে প্রচুর ফসল জন্মাত। বিশেষ করে ধান যেমন- পাইজাম, নাজিরশাইল, কাটারিভোগ, বালাম, বিন্নি ইত্যাদি। অন্যদিকে, নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় এ দেশের সাগর, নদী, খাল-বিলে প্রচুর পরিমাণে মাছে জন্মাত। এর মধ্যে রয়েছে রূপচাঁদা, কোরাল, লাক্ষ্যা, লইট্যা, ছুরি, ফাইস্যা, রুই, কাতল, মৃগেল, ভেটকি, চিতল, বোয়াল, শোল, কৈ, শিং, মাগুরসহ আরও নানা জাতের মাছ। কাজেই তারা ধান চাষ করে ও মাছ ধরে জীবিকা উপার্জনের পথ বেছে নেয়। এ সহজলভ্য মাছ আর ভাত আমাদের প্রিয় খাবার, স্বল্প শ্রম্নম ও ব্যয়ে অতি সহজে এগুলো পাওয়া যায় বলে জীবন ও জীবিকার জন্য এর ওপর নিভর্রশীলতা আমাদের অনেক। আর গরম ভাতের সঙ্গে যদি ইলিশ মাছ ভাজা হয়, তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই। আর তাই আমাদের মাছে-ভাতে বাঙালি বলা হয়।