রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

লিচুতে স্বাস্থ্যের জন্য রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ

প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন
  ১৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
মিষ্টি লিচুর

লাল টুসটুসে রসালো ও মিষ্টি লিচুর স্বাদ এই গরমে আরাম দেয়। জিভে জল আনা এই ফল স্বাদ গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করে শুধু তা-ই নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। স্বাদ ও গন্ধের জন্য লিচু অনেকের কাছেই প্রিয়। রোগ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে ত্বকের সুরক্ষাতেও লিচু দারুণ কার্যকর। ফলের মৌসুম গ্রীষ্মকাল। অন্য ঋতুর তুলনায় গ্রীষ্মকালে ফল বেশি পাওয়া যায়। যে কোনো মৌসুমি ফল খাদ্যতালিকায় রাখা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো। গ্রীষ্মকালীন একটি রসালো ফল লিচু- যা সবারই খুব পছন্দের। পুষ্ঠিবিদ ডা, আহদে সেলিম বলেন, লিচুতে জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি। প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট খুব অল্প পরিমাণে থাকে। লিচুতে ফ্যাট নেই। রয়েছে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ। খনিজ উপাদানগুলো হলো ম্যাঙ্গানিজ আয়রন, ফলিক এসিড, কপার ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। এ ছাড়াও রয়েছে প্রচুর ডায়েটারি ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। লিচুতে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকায় এটি খেলে গরমে শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ হয়। গরমে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাই পানি খাওয়ার পাশাপাশি লিচুর মতো জলীয় উপাদানসমৃদ্ধ ফল খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত। লিচুতে এপিকেচিন ও রুটিন নামক দুটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যৌগ রয়েছে- যা এ গরমে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। রসালো ফল লিচুর প্রথম সন্ধান পান চীনা বিজ্ঞানী লাই চি। অনেকে মনে করেন, লাই চি থেকেই লিচু নাম এসেছে। লিচু ফল নিয়ে পৃথিবীতে প্রথম বই লেখা হয় ১০৫৬ সালে। বিশ্বের সবচেয়ে রোমান্টিক ফল হিসেবে লিচুকে গণ্য করা হয়। যুগে যুগে রাজা-বাদশাহরা তাদের রানী/বেগমদের মন জয় করার জন্য লিচু উপহার দিতেন। অষ্টম শতকে চীনা সম্রাট হুয়ান সাং দক্ষিণ চীন থেকে লিচু নিয়ে গিয়ে উত্তর চীনে সম্রাজ্ঞীকে উপহার দিয়েছিলেন। লিচুর ইংরেজি নাম লিচি। লিচুর বৈজ্ঞানিক নাম লিচি চাইনেন্সিস। লিচু দক্ষিণ-পূর্ব চীনের কুয়াংতুং এবং ফুচিয়েন প্রদেশের গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের স্থানীয় উদ্ভিদ। বাংলাদেশ ছাড়াও এশিয়া মহাদেশের চীন, ইন্দোচীন, থাইল্যান্ড, জাপান, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ, ভারত, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল ও আমেরিকার ফ্লোরিডাতে লিচু চাষ হয়। লিচুতে রয়েছে এসকরবিক এসিড, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। ফলে এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। রক্তে শ্বেতকণিকার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে শরীরে বাইরের কোনো ক্ষতিকারক জীবাণু প্রবেশ করতে বাধা দেয়। লিচুতে লিচিট্যানিন নামক ভাইরাস বিরোধী উপাদান আছে- যা ভাইরাস ছড়াতে বাধা দেয়। লিচু ডায়াটেরি ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা প্রতিরোধ করে। পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন ও কপার রয়েছে লিচুতে। এগুলো লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে এবং রক্ত সঞ্চালনের উন্নয়ন করে। রক্ত সঞ্চালনের উন্নয়ন হলে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে। \হলিচুতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, কপার এসব মিনারেল হাড়কে সাহায্য করে ক্যালসিয়াম শুষে নিতে। ফলে হাড় শক্ত ও মজবুত থাকে। শরীরের বাড়তি ওজন কমানোর সময় খাদ্যতালিকায় এ ফল পরিমাণমতো রাখা ভালো। লিচুতে থাকা ফাইবার এবং পানি পেট ভরিয়ে রাখে। ফ্যাট না থাকায় ওজন কমাতে সাহায্য করে। খাদ্যআঁশ দেহের ভেতর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সহায়তা করে। লিচুতে আছে ফ্ল্যাভানল নামক উপাদান- যা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। লিচুতে থাকা উপাদান ক্যানসার প্রতিরোধে ও সহায়তা করে। লিচুর উপাদান ত্বকের বলিরেখা দূর করে, বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না, ত্বক উজ্জ্বল করে। লিচুর গস্নাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি খেলে ধীরে ধীরে রক্তে সুগার প্রবেশ করে। তাই এ ফলটি ডায়াবেটিস রোগীরাও খেতে পারেন। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের লিচু খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ডায়াবেটিস রোগীদের সুগারের মাত্রা পরীক্ষা করে সেই অনুযায়ী খাদ্যতালিকায় লিচুর পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। যেমন সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকলে ৪০ গ্রাম পরিমাণ লিচু খাদ্যতালিকায় রাখা যেতে পারে। অন্যথায় অতিরিক্ত লিচু খাওয়া হলে রোগী অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। মিষ্টি এই ফলটি খেতে পছন্দ করলেও লিচুর পুষ্টিগুণ কেমন এবং এটি কী পরিমাণ খাওয়া শরীরের জন্য ভালো সেটা অনেকেই জানেন না। যে কোনো ফলই শরীরের জন্য উপকারী। আর লিচু যেহেতু একটি মৌসুমি ফল, এটি খেলে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়- তবে সুস্থ শরীরে। লিচুতে জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি। প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট খুব অল্প পরিমাণে থাকে। লিচুতে ফ্যাট নেই। রয়েছে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ। খনিজ উপাদানগুলো হলো ম্যাঙ্গানিজ আয়রন, ফলিক এসিড, কপার ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি। এ ছাড়াও রয়েছে প্রচুর ডায়েটারি ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। লিচুতে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকায় এটি খেলে গরমে শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ হয়। গরমে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাই পানি খাওয়ার পাশাপাশি লিচুর মতো জলীয় উপাদানসমৃদ্ধ ফল খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত। লিচুতে এপিকেচিন ও রুটিন নামক দুটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যৌগ রয়েছে- যা এ গরমে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। পটাশিয়াম থাকায় লিচু কিডনি রোগীদের খেতে নিষেধ করা হয়ে থাকে। তবে পটাশিয়াম লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকলে সপ্তাহে অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। লিচু সকালে খালি পেটে, খাওয়ার পরেই এবং ঘুমাতে খাওয়ার সময় খাওয়া ঠিক নয়। এতে শরীরে সুগার লেভেল বেড়ে যেতে পারে। লিচু একটি গরম ফল। গরম ফল হওয়াতে বেশি পরিমাণে লিচু খেলে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার ভারসাম্য নষ্ট হয়। এ ছাড়া বেশি খাওয়ার ফলে পেট ব্যথা, পেটের সমস্যা, এসিডিটি, বমি হতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তচাপ অনেক কমে যেতে পারে। ফলে শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, বমি ভাব, দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত লিচু খেলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। একজন সুস্থ ব্যক্তি দিনে ১০-১২টি লিচু খেতে পারেন। তবে একসঙ্গে না খেয়ে একটু বিরতি দিয়ে খাওয়া ভালো। গ্রীষ্মকালীন এই রসালো ফল খুব কম সময়ের জন্য আসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গরমকালে শরীরকে চাঙ্গা ও সুস্থ রাখতে প্রতিদিন ডায়েটে রাখবেন এই ফল। অনেকে মনে করেন, লিচু বেশি খেলে পেটে ব্যথা শুরু হয়। কথাটি সত্য। তবে সঠিক নির্দেশিকা মেনে লিচু খেলে এই ফলের বিকল্প কিছু হয় না। বিজ্ঞানীরা নানা জাতের লিচু উদ্ভাবন করেছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটও বের করেছে লিচুর তিনটি জাত। এ দেশে যেসব জাতের লিচু পাওয়া যায় সেগুলো হলো বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-৩, মঙ্গলবাড়ি, মোজাফ্‌ফরপুরী, বেদানা লিচু, বারি লিচু-১, বারি লিচু-২, বারি লিচু-৩ ইত্যাদি। বোম্বাই লিচু টকটকে লাল, মাদ্রাজি আগাম জাত, সবচেয়ে ভালো জাত চায়না-৩। বাংলাদেশের কুষ্টিয়া, যশোর, রাজশাহী, দিনাজপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহে লিচু উৎপাদিত হয়। তবে শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে সোনারগাঁও, ময়মনসিংহ, দিনাজপুরের লিচুই উত্তম। চায়না, বোম্বাই, এলাচি, মোজাফফরপুরী লিচুর চাষই বাংলাদেশে বেশি হয়। সোনারগাঁওয়ের লিচু ঐতিহ্য এবং স্বাদে সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। সোনারগাঁওয়ে সর্বসাকুল্যে এখন লিচু গাছের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ হাজার। দিনাজপুরের ঐতিহ্যময় লিচুগুলোর মধ্যে যে লিচুটির স্থান গুণে মানে, স্বাদে সর্বোৎকৃষ্ট সেই লিচু রাজ্যের রানী হলো বেদানা। এ লিচুটি মাদ্রাজি ও বোম্বাই লিচুর বর্ণময় সরগরম বাজার। হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো অতিদ্রম্নত এসে স্বল্প সময়ে প্রায় জাদুর মতো উধাও হয়ে যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে